ঢাকা, শনিবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

দুবাই বসে টিপু হত্যার ছক কষেন মুসা: র‍্যাব

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:৪৪, ২ এপ্রিল ২০২২ | আপডেট: ২১:৪৭, ২ এপ্রিল ২০২২

Ekushey Television Ltd.

রাজধানীর শাহজাহানপুরে গুলিতে নিহত মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টিপুকে দুবাই বসে হত্যার পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দেন সুমন শিকদার ওরফে মুসা। টিপু হত্যাকাণ্ডের ঠিক ১২ দিন আগে দুবাই চলে যান মুসা। সেখানে বসে হত্যার পুরো ছক তৈরি করেন তিনি। এমনটাই জানিয়েছেন র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

শনিবার (১ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান সংস্থাটির সদরদপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

এর আগে, র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-৩ শুক্রবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করে। টিপু হত্যা মামলায় তারা গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তাররা হলেন, ওমর ফারুক, আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ, মো. নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির ও মো. মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশ।

গ্রেপ্তার চারজনের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য। র‍্যাব সদরদপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, দুবাই বসে জাহিদুল ইসলাম টিপুকে হত্যার পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দেন সুমন শিকদার ওরফে মুসা। হত্যাকণ্ডের ঠিক ১২ দিন আগে দুবাই চলে যান তিনি। সেখানে বসেই পুরো ছক কষেন। টিপুকে হত্যায় চুক্তি হয় ১৫ লাখ টাকা।

চুক্তির ৯ লাখ টাকা দেন ওমর ফারুক। অবশিষ্ট ৬ লাখ টাকা দেন নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির, আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ ও মুসা। দুবাইয়ে যাওয়ার আগে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে যান মুসা। পরে হুন্ডির মাধ্যমে আরও চার লাখ টাকা মুসাকে দেওয়া হয়। বাকি ছয় লাখ টাকা দেশে হস্তান্তরের চুক্তি হয়। এ ছয় লাখের মধ্যে র‍্যাব গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা জব্দ করে।

গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র‍্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, হত্যাকাণ্ডটি দেশে সংঘটিত হলেও নিয়ন্ত্রণ করা হয় দুবাই থেকে। দেশে থাকা নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির, মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশসহ আরও কয়েকজন জাহিদুল ইসলাম টিপুর অবস্থান সম্পর্কে বেশ কয়েকদিন ধরে মুসার কাছে তথ্য পাঠাতেন।

ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর গ্রেফতার নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির আনুমানিক চারবার জাহিদুল ইসলাম টিপুর অবস্থান সম্পর্কে মুসাকে জানান। পরে জাহিদুল ইসলাম টিপু গ্র্যান্ড সুলতান রেস্টুরেন্ট থেকে বের হওয়ার সময় মোরশেদুল আলম ওরফে কাইল্লা পলাশ তাকে নজরদারিতে রাখেন এবং তার অবস্থান সম্পর্কে তিনি ফ্রিডম মানিককে জানান করেন। টিপুর অবস্থান জানানোর পরিপ্রেক্ষিতে আনুমানিক রাত সাড়ে ১০টার দিকে আন্ডার ওয়ার্ল্ডের তত্ত্বাবধানে কিলার কর্তৃক হত্যাকাণ্ডটি সংগঠিত হয়।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, হত্যাকাণ্ডটি কাটআউট পদ্ধতিতে করা হয়। গ্রেপ্তার নাছির ও ওমর ফারুকের কাছে পরিকল্পনার তথ্য রয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা মুসাকে দায়িত্ব দেন। মুসা সমন্বয়কারী হিসেবে দুবাইয়ে বসে আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সমন্বয় ও কিলার নিয়োগ করেন। মুসা কাকে শুটার হিসেবে নিয়োগ দেন— তা এখনো জানা যায়নি।

র‍্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, মুসা দুবাইয়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডের এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। আন্ডারওয়ার্ল্ডের একজন সন্ত্রাসীর নাম আমরা পেয়েছি, তার অবস্থান আমরা পাচ্ছি ফ্রান্সে। এখন তথ্য-প্রযুক্তির যুগে এ দেশে অবস্থান করে ভিপিএনের মাধ্যমে আরেক দেশের নম্বর দিয়ে কল করা যায়। এখন এ ঘটনায় আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের নাম ব্যবহার করা হয়েছে, না কি তারা সরাসরি জড়িত তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আমাদের তদন্ত চলমান আছে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেপ্তার নাছির জানান মুসার সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ হয়েছিল। কীভাবে এ হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হবে, সেটি মুসা নাছিরকেই জানিয়েছিল। নাছির আরও জানিয়েছে, পরিকল্পনায় কিলারের পাশাপাশি ব্যাকআপ প্ল্যানও ছিল। এ কথা মুসাই তাদের জানিয়েছে। যখন হত্যাকাণ্ডটি সংগঠিত হয়, তখন নাছির ঘটনাস্থলের কাছাকাছি ছিলেন। তিনি মুসাকে জানিয়েছেন ‘ইট ইজ ডান’। এতে মুসার আর ব্যাকআপ প্ল্যানের প্রয়োজন হয়নি।

মুসাকে দুবাই থেকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মুসার অবস্থান শনাক্ত করার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে শেয়ার করা হচ্ছে। দুবাইয়ে তিনি কোথায় কী অবস্থায় আছেন— এ সম্পর্কে কিছু তথ্য আমরা পেয়েছি। সেসব তথ্য পুলিশ সদরদপ্তরের মাধ্যমে যেসব সংস্থাকে দেওয়া প্রয়োজন, তাদের দেওয়া হচ্ছে। তাকে দেশে ফেরানোর সব কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছ। তাকে না পাওয়া গেলে টিপু হত্যার পুরো পরিকল্পনা সম্পর্কে জানা কঠিন।

গত ২৪ মার্চ রাত সোয়া ১০টার দিকে রাজধানীর শাহজাহানপুরে ইসলামী ব্যাংকের পাশে বাটার শো-রুমের সামনে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এসময় গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা সামিয়া আফরান প্রীতি (১৯) নামে এক কলেজছাত্রীও নিহত হন। এছাড়া টিপুর গাড়িচালক মুন্না গুলিবিদ্ধ হন।

চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পর ওইদিন রাতেই শাহজাহানপুর থানায় নিহত টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংরক্ষিত কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। এতে অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়।

মামলার এজাহারে টিপুর স্ত্রী অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১০টার দিকে শাহজাহানপুর থানার ২০২ উত্তর শাহজাহানপুর মানামা ভবনের বাটার দোকানের সামনে পৌঁছামাত্র অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা হামলা করেন। তারা আমার স্বামী জাহিদুল ইসলাম টিপুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করেন।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি