ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪

স্বপ্নের পদ্মাসেতু: উন্মোচিত হবে পর্যটনের স্বর্ণ দুয়ার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:১০, ১৪ জুন ২০২২ | আপডেট: ১৭:১২, ২৩ জুন ২০২২

স্বপ্নের পদ্মাসেতু

স্বপ্নের পদ্মাসেতু

পদ্মাসেতুর কারণে দক্ষিণাঞ্চলের যে জেলাগুলো সরাসরি লাভবান হবে বলে আশা করা হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে বাগেরহাট অন্যতম। উপকূলীয় গাঢ় সবুজে ঘেরা জনপদ বাগেরহাট। স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হতে না হতেই পাল্টে যেতে শুরু করেছে আক্ষরিক অর্থে অনুন্নত জেলাটির চিত্র। 

পিছিয়ে পড়া এ জেলার অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত অভতূপূর্ব উন্নয়ন শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই। উন্মোচিত হবে পর্যটনের স্বর্ণ দুয়ার। এর ফলে আয় হবে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। এছাড়া কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, কর্মসংস্থান সব ক্ষেত্রেই পড়ছে অগ্রগতির ছাপ।

জেলা চেম্বার অফ কমার্স সভাপতি লিয়াকত হোসেন লিটন বলেন, পদ্মাসেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি রাজধানীসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ স্থাপিত হবে। সেইসঙ্গে পিছিয়ে পড়া এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হবে। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এসব সমস্যার সমাধান তো হবেই, এই অঞ্চলে এখন শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে, বেকারত্ব দূরীকরণে তা ভূমিকা রাখবে। বাগেরহাটের পাশাপাশি গোটা দক্ষিণাঞ্চলের চেহারা বদলে যাবে। 

ষাটগম্বুজ যাদুঘরের কাস্টডিয়ান মো. যায়েদ বলেন, প্রত্ন সম্পদ আর পুরাকীর্তির শহর বাগেরহাট। এখানে রয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন, ষাটগম্বুজ মসজিদসহ খানজাহান আলী (র.)-এর মাজার ও দিঘি, অযোধ্যা মঠ, মোড়েল স্মৃতির মত মধ্যযুগীয় অপূর্ব স্থাপত্যকলা। 

প্রত্নতত্ত্ব ও পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এখানে বছরে প্রায় আড়াই লাখ দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমণ ঘটে। পদ্মাসেতু চালু হলে যা দ্বিগুন হবে বলে আশা করেন তিনি। 

মো. যায়েদ আরো বলেন, পদ্মাসেতু চালু হলে উন্মোচিত হবে পর্যটনের স্বর্ণ দুয়ার। এর ফলে আয় হবে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। 

বাগেরহাটের মাছ, সবজি, ধান ও পান পুরো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমকিা রাখে। যদিও এই অঞ্চলের প্রতিটি জেলাতেই ধান ও মাছ চাষ করা হয়। নদী এলাকা হওয়ায় প্রাকৃতিক উৎস থেকেও আসে বিপুল পরিমাণ মাছ। বাগেরহাট জেলার ৫টি উপজেলায় প্রতি বছর ৫০ হাজার মেট্রিক টন সবজি উৎপাদন হয়। যার সিংহ ভাগ যায় ঢাকার বাজারে। 

বাগেরহাটের তরুণ উদ্যোক্তা চিংড়ি ঘের ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম বলেন, এসব মাছ, সবজি ঢাকার বাজারে পৌঁছানো ছিল খুবই কষ্টসাধ্য এবং ব্যয়বহুল। এখন তা সহজ হবে। এ অঞ্চলের মাছ ও সবজি চাষীরা হবেন লাভবান। যানজট ও ফেরী জটিলতার কারণে মাছ ও সবজি নিয়ে যানবাহনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হত পদ্মা পাড়ে। এখন একটানে এসব মালামাল পৌঁছে যাবে ঢাকাসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে। 

ফলে ওই অঞ্চলের কৃষকদের উৎপাদিত ফসল সহজেই দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে যাবে। এতে কৃষক ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবে। এছাড়া কৃষিক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার সহজ হবে। ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। 

তবে পদ্মাসেতু পার হবার পরে যেন যানজট না হয়, সে ব্যাপারে শুরু থেকেই পরিকল্পনা করার মত দেন তিনি।

বাগেরহাট বিএমএ সাধারণ সম্পাদক-স্বাচিপ এর সভাপতি ও বাগেরহাট ক্লিনিক এসোসিয়েশনের সভাপতি বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. মোশারেফ হোসেন বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় বাগেরহাটের হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আসতে চান না। তারা এখানে থাকতে স্বাচ্ছন্দবোধ করতেন না। ফলে সাধারণ মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হতো। ফলে অনাকাঙ্খিত মৃত্যু ও ভোগান্তির শিকার হতেন সাধারণ সেবা প্রার্থীরা। এখন পদ্মাসেতু চালু হলে তারা স্বল্প সময়ে ঢাকা যাওয়ার সুযোগ পাবেন। তাই এ জেলায় আসতে আর তাদের অনীহা থাকবে না। এছাড়া স্বল্প সময়ে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। সঙ্কটাপন্ন রোগীরা দ্রুত সময়ে ঢাকায় গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নিতে পাবেন। পদ্মা সেতু অপরাপর সেক্টরের মত স্বাস্থ্য খাতেরও অভূতপূর্ব উন্নয়ন হবে।

বাস মালিক সমিতির সভাপতি শেখ নজরুল ইসলাম মন্টু জানান, পদ্মাসেতু চালু হলে প্রথমবারের মত ঢাকার সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ হবে বাগেরহাটের। ইতোমধ্যে খ্যাতিসম্পন্ন পরিবহনগুলোর মালিকেরা নতুনভাবে প্রস্তুতি শুরু করছেন। তারা এখন ঢাকা-বাগেরহাটসহ এ অঞ্চলে তাদের পরিবহন চালু করতে আগ্রহী হচ্ছেন। পদ্মাসেতু চালুর পর ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব হবে ১৭২ কিলোমিটার। যা মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টায় পাড়ি দিতে পারবেন বাগেরহাটবাসী।

বাগেরহাটের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সরকারি পিসি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, পদ্মাসেতু চালু হলে ঢাকা আসা যাওয়ার কষ্ট আর থাকবে না-এটাই সবচেয়ে স্বস্তির। মাওয়া ঘাটেই ফেরি পার হতে অপেক্ষা করতে হতো সর্বনিম্ন ২ থেকে ৪ ঘণ্টা। আর ঢাকায় যেতে সময় লাগত প্রায় ৭/৮ ঘণ্টা। এ বিড়ম্বনার কথা বলে শেষ করা যাবে না। যা এখন আর থাকবে না। এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে! আসলে এ সেতু চালু হলে বাগেরহাটসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে সমৃদ্ধি ও প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে আসবে। জীবন-জীবিকা সহজ হবে। বেকারত্ব হ্রাস পাবে। শিক্ষা ক্ষেত্রে অগ্রগতি হবে অভাবনীয়। এখানে বেসরকারি উদ্যোগে কলেজ, মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। অপেক্ষাকৃত কম খরচে এবং ভোগান্তিহীনভাবে শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবেন।

বাগেরহাট ডিস্ট্রিক পলিসি ফোরামের এবং সংস্কৃতিক সংগঠন ‘গীতাঞ্জলী’র সভাপতি ও বাগেরহাট প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি বাবুল সরদার বলেন, পদ্মাসেতু আমাদের মর্যাদার প্রতীক। এ সেতু আমাদের অহঙ্কার। পদ্মাসেতু চালু হলে কৃষি, শিক্ষা, বাণিজ্য, অবকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থা, জীবন-জীবিকাসহ সব ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। একই সাথে আমাদের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতিক অঙ্গনেও পড়বে ইতিবাচক প্রভাব।

এনএস//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি