ঢাকা, শনিবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

‘খামারিদের পাশে নেই প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, ঘুষ ছাড়া মেলে না পশুর চিকিৎসা’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০০:৩২, ২ জুন ২০২৪ | আপডেট: ০০:৪২, ২ জুন ২০২৪

Ekushey Television Ltd.

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক খামারিবান্ধব নন। তিনি খামারিদের কোনো সহযোগিতা করছেন না। তার কার্যক্রমে বোঝাচ্ছেন, দেশের দুধ উৎপাদনে তাদের চিকিৎসক ও মিল্ক প্রসেসিং কোম্পানিগুলোই সব কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন। 

শনিবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। কোরবানিতে চোরাই পথে গরু আসা বন্ধ, রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের সহায়তা ও গুঁড়া দুধের শুল্ক বাড়ানোর দাবিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। 

বিডিএফএর সভাপতি মো. ইমরানের হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সহসভাপতি আলী আজম শিবলী, সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ ইমরান, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এ কে এম নাজীব উল্লাহ, আলী আজম রহমান শিবলী, অর্থ সম্পাদক জাফর আহমেদ পাটোয়ারী প্রমুখ।

জামাল হোসেন নামে এক প্রান্তিক খামারি বলেন, ‘আমি ডিজির সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিন দিন পরে দেখা করার জন্য সময় দেন। গরু অসুস্থ হলে ডাক্তারদের সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না।’ 

মোহাম্মদপুরের আদাবরের খামারি রাশিদা বেগম জানান, তার ২০টি গাভির মধ্যে ১৫টি মারা গেছে। গরু অসুস্থ হলে ডাক্তারকে ফোন দিলে ১০ হাজার টাকা চায়। এক দিন পরে খামারবাড়ি থেকে ডাক্তার গেছেন। 

তিনি বলেন, গরু যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে, তখন ডাক্তারদের ফোন দিলে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিতে হবে বলে দাবি জানান। বাধ্য হয়ে ৮ হাজার টাকা দেওয়া হয়। ডাক্তারের সামনেই দুটি গাভি মারা গেছে। কী রোগ হয়েছিল তা জানতে তারা পরীক্ষার জন্য আলামত নিলেও এখনও রিপোর্ট দেননি। আমি এখন নিঃস্ব। 

এ সময় বিডিএফএর সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, আগে ডাক্তাররা মোটরসাইকেলযোগে আসতেন, তাদের ২০০-৩০০ টাকা দিলেই হতো। বর্তমানে ৫০০ থেকে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। এসব ঘুষ ছাড়া সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। 

গুঁড়া দুধের ওপর আমদানি শুল্ক বাড়ানোর দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বাংলাদেশের তথ্যানুযায়ী দেশে বছরে ১ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন দুধের প্রয়োজন। তবে উৎপাদন হচ্ছে ১ কোটি ৪০ লাখ ৬৮ হাজার টন। পুষ্টির চাহিদা দেশের দুগ্ধ খামারের মাধ্যমেই সম্ভব। 
আরও বলা হয়, বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ থাকলেও বেশ কিছু বাধার কারণে দুধের উৎপাদন বাড়ছে না। এসব বাধা দূর করলে দেশ দুগ্ধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। আমরা মনে করি, দুধ উৎপাদনের প্রধান বাধা আমদানি করা দুধ। আমদানি করা গুঁড়া দুধ আমাদের সাংঘাতিকভাবে ক্ষতি করছে। এসব দুধের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণের কাছাকাছি বস্তা আকারে বাল্ক ফিল্ড মিল্ক নামক গুঁড়া দুধ এনে নতুন মোড়কে বাজারজাত করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ঘটনা ঘটে। গুঁড়া দুধ আমদানির মাধ্যমে দেশের দুগ্ধশিল্প এক ধরনের বাধার মুখে পড়েছে। 

ইমরান হোসেন বলেন, গুঁড়া দুধ আমদানিতে কঠোরতা আরোপ করে সঠিক ও কার্যকর উদ্যোগ নিলে দুই বছরের মধ্যে দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারবে বাংলাদেশ। আমদানিতে অধিক হারে শুষ্কারোপ করে দেশীয় কোম্পানিগুলোকে প্রতিযোগিতা সক্ষম করে তুলতে হবে। মানুষের খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে খামারিদের উৎপাদিত তরল দুধ সংগ্রহ করে দেশেই গুঁড়া দুধ তৈরি করতে পারলে বিদেশ থেকে গুঁড়া দুধ আমদানিতে বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় হবে, দেশীয় শিল্প রক্ষা হবে এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। নানা অজুহাতে বিদেশ থেকে বাল্ক ফিল্ড নামের গুঁড়া দুধ আমদানি বাংলাদেশের দুগ্ধ খামার শিল্পের জন্য হুমকিস্বরূপ। শিশু খাদ্যের নামে বাল্ক ফিন্ড মিল্ক নামক গুঁড়া দুধ আমদানি কখনই পুষ্টির জোগান নিশ্চিত করতে পারে না। শিশুখাদ্য সেরেলেক বাংলাদেশে তৈরি হয় না। বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন শিশু খাদ্য নয়, বাল্ক ফিল্ড মিল্ক আমদানির বিপরীতে শুল্ক বাড়িয়ে দেশীয় শিল্পকে আরও বেগবান করার আহ্বান জানাচ্ছি। আর ফর্মুলা দুধের শুল্ক শূন্য করে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, শিশুখাদ্য হিসেবে ফরমুলা দুধ শুল্কমুক্ত করে দেওয়া হোক। বাল্ক ফিল্ড মিল্কে কোনো ফ্যাট থাকে না। সেখানে ভেজিটেবল ফ্যাট দেওয়া হয়। বেশিরভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ দুধ। এটা করতে আমদানিতে কোটা তৈরি, শুল্ক বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

কেআই//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি