ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪

বাংলাদেশকে সবাই এখন সমীহ করে : প্রধানমন্ত্রী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:৫২, ৩ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ২৩:৫৮, ৩ ডিসেম্বর ২০১৭

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা (ফাইল ফটো)

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা (ফাইল ফটো)

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্ব ব্যাংককে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে হাত দেওয়ায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি মানসিকতার বদল ঘটেছে। সবাই এখন বাংলাদেশকে সমীহ করে। কম্বোডিয়ার রাজধানী নম পেনে রোববার সন্ধ্যায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণে এক নৈশভোজে একথা বলেন তিনি। দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিত করার পর বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ টানাপড়েন শেষে তাদের না করে দেয় সরকার। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এ অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করে সরকার।

এ প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল। মিথ্যে অপবাদ নিতে আমরা রাজি না। কষ্ট হয়েছে আমাদের কিন্তু তারপরেও এটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। এই যে আমরা নিজেরাই করতে পারছি, এইটেই কিন্তু সব থেকে বড় কথা এবং আপনারা একটু লক্ষ করবেন যে, ওই একটা ঘটনার পর সবার কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের প্রতি মন মানসিকতাটাই বদলে গেছে। যারা বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে যান সবাই দেখবেন যে, দৃষ্টিভঙ্গিটা, আচরণ বদলে গেছে। এখন কিন্তু সমীহ করেই সবাই কথা বলেন।

 


মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের মানুষ সম্মান নিয়ে সারা বিশ্বে চলবে-এই বিষয়টিই চাইছিলেন বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

হোটেল সোফিটেলে বাংলাদেশ দূতাবাস এই নৈশভোজের আয়োজন করে। কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশের সাঈদা মুনা তাসনিম অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। অনুষ্ঠানে প্রবাসীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বক্তব্যে বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়ার সংগ্রামের সাদৃশ্যের কথা উল্লেখ করে দুই দেশের যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, এই কম্বোডিয়ার কিন্ত অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাদের দেশটা কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছে। এদেশের মানুষের যে অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, সংগ্রাম সব কিছুর সঙ্গে আমাদের বাঙালিদের যেন একটা মিল রয়ে গেছে। আমাদের এ অঞ্চলে বাংলাদেশ ও কম্বোডিয়ায় যেভাবে গণহত্যা হয়েছে এত ব্যাপক গণহত্যা কিন্তু আর কোথাও হয়নি। আমরা এই দুটো দেশই গণহত্যার শিকার হয়েছি, অনেক সংগ্রাম করে দেশ স্বাধীন করেছি। কাজেই আমাদের মধ্যে একটা আত্মার মিল আছে।

কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের আমন্ত্রণে রোববার তিন দিনের সফরে দেশটিতে গিয়ে প্রথম দিনই গণহত্যা স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেছেন শেখ হাসিনা। দেশটির স্বাধীনতা স্তম্ভ ও জাতির জনকের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন তিনি।

আশির দশকে খেমার রুজ নেতা পলপটের শাসনামলে নম পেনের একটি স্কুলকে অস্থায়ী কারাগার বানিয়ে সেখানকার বন্দিদের হত্যা করা হয়, যা ইতিহাসে গণগত্যার স্বীকৃতি পায়।

নৈশভোজে অন্যদের মধ্যে শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম, মূখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী এফবিসিসিআইয়ের সভাপতিসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতারাও উপস্থিত ছিলেন।

শেখ হাসিনার এ সফরে দুই দেশের মধ্যে দুটি চুক্তি ও নয়টি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে। সফরকালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবেন। কম্বোডিয়ার রাজা নরোদম সিহামনির সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন শেখ হাসিনা। সোমবার দুই প্রধানমন্ত্রীর একান্ত আলোচনা ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর তাদের উপস্থিতিতে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলো সই হবে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী জানিয়েছেন, বিমান চলাচল ও দুই দেশের শীর্ষ বাণিজ্যিক সংগঠনের মধ্যে সহযোগিতা সংক্রান্ত দুটি চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবার।

সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে, জয়েন্ট ট্রেড কাউন্সিল গঠন; ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহযোগিতা; শ্রম ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ খাতে সহযোগিতা; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা; পর্যটন ক্ষেত্রে সহযোগিতা; যুদ্ধের ইতিহাস, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণে সহযোগিতা; মৎস্য ও অ্যাকুয়াকালচারবিষয়ক সহযোগিতা এবং বিনিয়োগ প্রসারে সহযোগিতার মতো বিষয়ে।

এছাড়া বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এবং রয়্যাল অ্যাকাডেমি অব কম্বোডিয়ার (আরএসি) মধ্যে অ্যাকাডেমিক সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনার কথাও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন।

দুই প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে উভয় দেশের জাতির পিতার নামে ঢাকা ও নম পেনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের নামকরণের ঘোষণা দেওয়া হবে।
ঢাকার বারিধারা কূটনৈতিক এলাকার ‘পার্ক রোড’ রাস্তাটি কম্বোডিয়ার প্রয়াত রাজা নরোদম সিহানুকের নামে হবে। একইভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নম পেনের একটি প্রধান সড়কের নামকরণ করবে কম্বোডিয়া সরকার। সফর শেষে মঙ্গলবার বিকেলে শেখ হাসিনার ঢাকা ফেরার কথা রয়েছে।

 

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি