ঢাকা, রবিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

আড়ংয়ে ‘তরুণীর গোপন ভিডিও ধারণ’ যেভাবে জানা গেল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:০৩, ৩০ জানুয়ারি ২০২০

Ekushey Television Ltd.

গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি ভিডিও ব্যবহার করে একাধিক নারীকে ‘ব্ল্যাকমেইল’ করার চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

পুলিশ বলছে, আড়ং-এর সাবেক এক কর্মীর বিরুদ্ধে তার নারী সহকর্মীদের পোশাক বদলানোর দৃশ্য গোপনে ভিডিও করার অভিযোগ ওঠার পর আটক ওই ব্যক্তির মোবাইল ফোনে এ ধরনের শতাধিক ভিডিও পাওয়া গেছে।

শুধু তাই নয়, সেসব ভিডিও ব্যবহার করে তিনি একাধিক নারীকে ‘ব্ল্যাকমেইল’ করার চেষ্টা করেছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

গত ডিসেম্বর মাসে একজন নারী বিক্রয় কর্মীর সাথে অসদাচরণের অভিযোগ ওঠার পর ওই ব্যক্তিকে বরখাস্ত করা হয়েছিল বলে আড়ং-এর একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

গত ২৫শে জানুয়ারি অভিযুক্ত ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পর তাকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

আড়ং-এর যে নারী কর্মী ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন, তিনি জানিয়েছেন কীভাবে আর কখন তিনি গোপন রেকর্ডিং-এর বিষয়টি টের পেয়েছেন।

তিনি অনিচ্ছুক হওয়ায় এই প্রতিবেদনে তার নাম বা পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

যেভাবে জানা গেল

আড়ং-এর ওই নারী বিক্রয় কর্মী বলেছেন, ‘জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখে ফেসবুকের একটি ফেকআইডি থেকে একজন আমাকে নক করে। কিন্তু আমার প্রোফাইল লক থাকায় সে আমাকে সরাসরি ম্যাসেজ পাঠাতে পারেনি। ম্যাসেজে সেটা ছিল, কিন্তু আমি আর দেখিনি।’

‘পরের দিন সে (গ্রেফতারকৃত সাবেক সহকর্মী) তার আসল আইডি থেকে আমাকে নক করে। তখন সে আমাকে ফেক আইডির লিংক দিয়ে বলে, ওই আইডি থেকে তোমার কথা জিজ্ঞেস করছে। এটা কে? আমি বললাম আমি তো চিনি না। তোমার কথা জিজ্ঞেস করছে, ওই আইডি থেকে ম্যাসেজ দিয়েছে। তুমি ম্যাসেজটা দেখো।’

তিনি বলেন, ‘পরের দিন দেখলাম যে ওই ফেক আইডি আমাকে খুব বাজেভাবে ম্যাসেজ করেছে, আমার ব্যক্তিগত ছবি তার কাছে আছে। এসব আজেবাজে কথা লিখে ম্যাসেজ করেছে। তখন আমি জানতে চাইলাম, কে আপনি? কিসের ছবি?’

‘তখন সে আমাকে একটা ভিডিওর স্ক্রিনশট পাঠাল। তারপরে বলেছে, ভিডিও কি দেখবা? তখন আমি বললাম, হ্যাঁ দেখবো।’

‘তিনি বললেন, তাহলে ভিডিও কল দিচ্ছি, আপনি ফোন ধরেন।’

‘তিনি ফোন দেয়ার আগেই মোবাইলে যে স্ত্রিন রেকর্ডার থাকে, আমি সেটা চালু করলাম। সে ভিডিও কল দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব রেকর্ড হচ্ছিল। তখন সে মোবাইলে ভিডিও কলে ওই ভিডিওটা দেখালো যে, আমি ওয়াশরুমে কাপড় চেঞ্জ করছিলাম।’

কীরকম প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?

আড়ং-এর ওই নারী কর্মী বলছিলেন সেদিনের পর তিনি কতটা আতঙ্কের মধ্য দিয়ে গেছেন।

‘আমি সারারাত ঘুমাতে পারিনি। সারারাত একটা সেকেন্ডও ঘুমাতে পারিনি।’

‘রাতেই আমি অফিসে যোগাযোগ করেছিলাম। কিন্তু তখন অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল। পরে সকাল সাতটায় ফোন দিলাম। সারা রাত না ঘুমিয়ে সকাল আটটার মধ্যে অফিসে চলে এলাম। আমি বুঝতে পারছিলাম না কে এই ভিডিও করেছে।’

অনেক প্রশ্ন

তিনি বলেন ভিডিওটির কথা জানার পর তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে।

‘প্রথমে তো আমি বুঝতেই পারছিলাম না, এটা আমার ভিডিও, কে করলো ভিডিও- কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।’

‘ওই ব্যক্তিকে (ফেক আইডিধারী ব্যক্তি) আমি ফোনে জিজ্ঞেস করেছিলাম সে কে? সে বলেছে, সে আমার অফিসের কেউ না। আমাকে নাকি কোন একসময় প্রপোজ করেছিল। আমি তাতে রাজি হয়নি বলে সে এমনটা করেছে।’

‘আমি রাজি হলে নাকি এরকম করতো না। রাজি হইনি বলে টাকাপয়সা খরচ করে অন্য একজনকে দিয়ে নাকি আমার ভিডিও তৈরি করিয়েছে। সে নাকি ১৩,০০০ টাকা খরচ করেছে। সে বলেছে, সে নাকি আমার একার ভিডিও করেছে।’

ফ্যাশন প্রতিষ্ঠান আড়ংয়ের পোশাক বদলানোর কক্ষে দিনের পর দিন ভিডিও করেছেন অভিযুক্ত ব্যক্তি
ফেক আইডির ব্যাপারে সাবেক ওই পুরুষ সহকর্মী প্রথমে জানানোর কারণে তার ওপরেই প্রথম সন্দেহ হয় হয়রানির শিকার ওই নারী কর্মীর।

‘আমি ওই ফেক আইডিকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কিভাবে জানেন যে, সে (সাবেক সহকর্মী) এখানে চাকরি করে? তখন ফেক আইডি থেকে বলা হয়, আরো অনেককে সে নক করেছে, কিন্তু সে সাড়া দেয়নি। শুধু ওই ব্যক্তি সাড়া দিয়েছে।’

তিনি জানান, ফেক আইডির একটি প্রোফাইল পিকের সূত্র ধরে তিনি তাকে শনাক্ত করতে সক্ষম হন।

‘সে হয়তো কোনভাবে জানতে পেরেছে, যে আইডির ছবির ব্যাপারে সন্দেহ হয়েছে। দুইদিন পরে সে ফেক আইডি চালু থাকলেও ছবি দুইটা মুছে ফেলে।’

সাধারণ ডায়রি করার পর থেকে ওই ফেক আইডি থেকে কাউকে আর পাওয়া যায়নি।

কী ধরণের হুমকি দিতো

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই নারী বলছিলেন, ‘সে আমাকে বলতো, আমি তোমার কোন ক্ষতি করতে চাই না। তুমি শুধু আমাকে সময় দিবা। সামনাসামনি দেখা করতে হবে না, ফেসবুকে সময় দিলেই হবে।’

‘ওয়াশরুমে গিয়ে ছবি তুলে পাঠাতে হবে। চেহারাও দেখাতে হবে না, কিন্তু ওয়াশ রুমে গিয়ে এই এই করতে হবে। তাহলে ভিডিও আর ভাইরাল হবে না।’

ভয়ের মধ্যে বসবাস

হয়রানির শিকার এই নারী কর্মী বলছিলেন, এই ঘটনার পর তাকে চরম ভীতি আর ট্রমার ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে।

‘এই কাহিনী হওয়ার পর পুরো এক সপ্তাহ আমি একা একা ওয়াশরুমে যেতে পারিনি। অফিসের ওয়াশরুমে তো যাইনি, বাসাতেও ওয়াশরুমে গেলে কাউকে সঙ্গে নিয়ে গেছি।’

‘আমার সারাক্ষণ ভয় লাগতো। আমি তো কল্পনাও করিনি কেউ একজন ভিডিও করবে। ওয়াশরুমে গেলেই ভয় কাজ করতো যে, কেউ একজন হয়তো আমাকে ফলো করছে, আমাকে ভিডিও করছে। প্রচণ্ড ভয়ে কেটেছে।’

তিনি জানান, অভিযুক্ত ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পর তার এখন একটু নিরাপদ লাগছে।

‘এখন আমি বাসাতেও, নিজের রুমেও যদি কাপড় পাল্টাই, তখন মনে হয়, কেউ কি আমার কিছু করছে। এখন বাসায় লাইট বন্ধ করে কাপড় পাল্টাই। যখনই কাপড় পরিবর্তনের ব্যাপার আসে, ওয়াশরুমের ব্যাপার আসে, তখন যেন অটোমেটিকলি এটা মাথায় চলে আসে।’

প্রসঙ্গত, রাজধানীর বনানীতে আড়ংয়ের একটি শো-রুমের ট্রায়াল রুমে তরুণীর গোপন ভিডিও ধারণ করার ঘটনায় আড়ংয়ের সাবেক এক কর্মীকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

সিরাজুল ইসলাম সজীব নামের ওই যুবক গত ১১ জানুয়ারি রাতে এক তরুণীর ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ট্রায়াল রুমে পোশাক পরিবর্তনের ভিডিও পাঠান।

পরে তরুণীকে কু-প্রস্তাব দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করেন। প্রস্তাবে রাজি না হলে তার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ারও হুমকি দেন।

১৬ জানুয়ারি ওই তরুণী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিট ২৫ জানুয়ারি তাকে গ্রেফতার করে।

বিবিসি অবলম্বনে


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি