ঢাকা, শুক্রবার   ১০ মে ২০২৪

আর কখনই ফিরবেন না তারা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:৪৫, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

পবিত্র হজ পালনের লক্ষ্যে সৌদি আরব গিয়েছিলেন তারা। আল্লাহর হুকুম পালনে অশ্রুসিক্ত নয়নে স্বজনদের কাছ থেকে নিয়েছিলেন বিদায়। মাত্র এক মাস আগের সে বিদায়ে কেঁদেছিলেন তার স্বজনেরাও। তবুও সান্ত্বনা ছিল আবার ফিরে আসবেন। মন ভরে দেখবেন, প্রাণ খুলে কথা বলবেন। হয়তো তখন কেউ-ই ভাবেননি ওটাই হবে তাদের শেষ বিদায়। আর কখনও স্বজনদের মাঝে ফিরে আসবেন না তারা।

জানা গেছে, বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট আজ (বুধবার) দেশে ফিরেছে। কিন্তু ফিরেনি ৮১ জন।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ (৪ সেপ্টেম্বর) তথ্যানুসারে, এ বছর পবিত্র হজ পালনের আগে ও পরে সৌদি আরবে মোট ৮১ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের মধ্যে ৬৫ জন পুরুষ ও ১৬ জন নারী। ৮১ জনের মধ্যে ৫৮ জন মক্কায়, ৭ জন মদিনায় এবং ১৬ জন মিনায় মারা গেছেন। তাদের মধ্যে আবার ৪৮ জন হজ পালনের আগে ও ৩৩ জন হজ পালনের পরে মারা গেছেন।

সৌদি সরকারের হজ চুক্তি অনুযায়ী, হজ পালন করতে গিয়ে কোনো হজযাত্রী কিংবা হাজি মারা গেলে তার মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনা হয় না। তাকে সে দেশের সরকারই নিজস্ব উদ্যোগে দাফন করবে।

এছাড়া ধর্মীয় বিশ্বাস থেকেও মুসলমানরা মরদেহ দেশে এনে কবর না দিয়ে মক্কা ও মদিনাতেই কবর দেয়ার পক্ষেই মত দেন। তবে স্বজন হারানোর বেদনা পরিবারগুলোতে থেকেই যায়।

এ বছর মারা যাওয়া হজযাত্রী ও হাজিদের তালিকা: ঢাকার মো. ওয়াসিম আনসারী রাসু (৩৯), রংপুরের কলিমুল্লাহ (৫৭), কিশোরগঞ্জের সাফিউল আলম (৩০), চট্টগ্রামের ইসহাক (৫৭), পিরোজপুরের খুরশীদ শাহরিয়ার (৩৯), চট্টগ্রামের ইব্রাহিম কামালউদ্দিন (৭০), কিশোরগঞ্জের গোলাপ মিয়া (৭৩), মুন্সীগঞ্জের মিনু বেগম (৫৫), গোপালগঞ্জের দেলোয়ারা বেগম (৫৮), মাদারীপুরের সেলিম মিয়া (৬১), নাটোরের এম এ জলিল মিয়া (৬৬), পিরোজপুরের ইসমিল খান (৬২), চট্টগ্রামের হোসনে আরা বেগম (৪৭), গাইবান্ধার আবদুল হোসেন আকন্দ (৬৯), চট্টগ্রামের সাকিনা বেগম (৬৯), নোয়াখালীর গোলাম রাসুল (৬২), দিনাজপুরের ওয়াসিম আনসারি রাসু (৩৯), কক্সাবাজারের শফিক আহমেদ (৬৫), যশোরের আমজাদ আলী লস্কর (৬০), পটুয়াখালীর আনোয়ার হোসেন (৬৩), কুমিল্লার সায়েরা বেগম (৫৫), চট্টগ্রামের হারুচা বেগম (৮০), রাজবাড়ী পাংসার নুরুন্নাহার বেগম (৪৮)।

মৌলভীবাজারের দেলোয়ারা বেগম (৬২), ব্রাহ্মণবাড়ীর নীলুফা বেগম (৫৬), ময়মনসিংহের হেলালউদ্দিন (৬০), কুমিল্লার মো.আবদুল আউয়াল (৬৬), টাঙ্গাইলের আনসার আলী (৬২), লক্ষীপুরের নীলুফার আক্তার (৫৫), কুমিল্লার এমডি সোনা মিয়া (৮০), ঢাকার রোকেয়া বেগম (৬২), দিনাজপুরের রেহানা খাতুন (৫৪), চট্টগ্রামের আবদুল হাফেজ (৮০), বরিশালের শেখ খলিলুর রহমান (৭১), চুয়াডাঙ্গার আহমেদ হোসেন (৭৩), ঠাকুরগাঁওয়ের আফাজউদ্দিন (৬৫), ময়মনসিংহের আশেক মাহমুদ (৭১), মুন্সীগঞ্জের লতিফ শিকদার (৭৭), কক্সবাজারের আবু তাহের নুরী (৬১), কুমিল্লার মীর্জা আবুল কাশেম (৬০), গাইবান্ধার মাজেদা বেগম (৬৬), চাঁদপুরের ইদ্রিস আলম বেপারী (৭২), কিশোরগঞ্জের ওয়াসিমউদ্দিন আহমদ (৭৫), ঢাকার আমজাদ হোসেন (৬৪), খুলনার খলিলুর রহমান (৫৪), চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোহাগী বেগম (৬৮), বরিশালের আবদুল মালেক সরদার (৭৪), কুমিল্লার নুরুল ইসলাম (৮৫), দিনাজপুরের আজিজার রহমান (৬২), বাগেরহাটের সিরাজুল ইসলাম (৭০)।

কুমিল্লার সিদ্দিকুর রহমান (৭৮), বগুড়ার শামসুল ইসলাম (৬৩), কুড়িগ্রামের আসিয়া বেগম (৭৮), নওগাঁর ওসমান গনি প্রামানিক (৮১), বাগেরহাটের শেখ মো. ইদ্রিসুর রহমান (৭৯), খুলনার আবুল হোসেন শেখ (৬২), পাবনার আবদুস সাত্তার (৫৬), কুমিল্লার মানিক মিয়া (৭৪), নারায়ণগঞ্জের রশিদ ভুইয়া (৬৭), নাটোরের মহসিন আলি প্রমানিক (৬৭), জামালপুরের দানেশ আলী (৭৬), টাঙ্গাইলের মো. আবদুর রাজ্জাক মিয়া (৬২), চট্টগ্রামের জাকের হোসেন (৬০), লালমনিরহাটের আবুল কাশিম বেপারী (৬৬), বগুড়ার আবদুল হামিদ পাইকার (৬৫), ফেনীর ইয়ার আহমেদ (৫৬), নীলফামারীর মো. শফিকুল ইসলাম (৫৮), কুড়িগ্রামের আবদুস সোবহান (৬৩), চাঁদপুরের আবু জাফর (৬২), ঢাকার শরিফা বেগম (৫৪), বরিশালের আবুল কাশেম মো. শাহজাহান (৫১), বগুড়ার আবদুল গফুর শেখ (৬৭), মুন্সীগঞ্জের বিল্লাল হোসেন (৫৭), বগুড়ার আবদুস সামাদ (৬১),গাইবান্ধার ফুল মিয়া মণ্ডল (৬৪), চাপাইনবাবগঞ্জের বাদশা হোসেন (৭৫), নাটোরের জাহাঙ্গীর কামাল (৬৬), রাজবাড়ীর আবদুর রাজ্জাক (৭৫), বরিশালের ফরিদউদ্দিন (৬২) ও নেত্রকোনার এ আর ইউসুফ (৭৫)।

উল্লেখ্য, চলতি বছর সরকারি (ব্যবস্থাপনা সদস্যসহ) ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মোট ১ লাখ ২৭ হাজার ২২৯ জন হজে যান। গত ২৪ জুলাই থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হয়েছিল। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পরিচালিত ১৯১টি ও সৌদি এয়ারলাইন্স পরিচালিত ১৭৯টিসহ মোট ৩৭০টি ফ্লাইট সৌদি আরব যায়।

আজ বুধবার থেকে হজযাত্রীদের প্রথম ফিরতি ফ্লাইট শুরু হয়েছে। ফিরতি ফ্লাইট চলবে আগামী ৫ অক্টোবর পর্যন্ত। প্রতিটা ফ্লাইট স্বজনদেন জন্য অপেক্ষার বিষয়। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর স্বজনকে কাছে পেয়ে একমাসের কষ্ট ভুলবেন পরিবার। কিন্তু যে পরিবারের সদস্যরা আর ফিরবেন না, তাদের বেদনাও আর লাঘব হবে না। তাদের সান্ত্বনা এতটুকুই, তাদের স্বজন আল্লহর হুকুম পালন করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।

ডব্লিউএন


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি