ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪

ইবোলা নিয়ে ‘বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৩৬, ১৮ জুলাই ২০১৯

আফ্রিকার ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে ইবোলা মহামারিকে ‘বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা’ হিসেবে  ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, এটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের জনস্বাস্থ্য সংকট। খবর বিবিসির।

বুধবার জেনেভার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক সম্মেলনে ট্রেডোস আধানম এ ঘোষণা দেন। এ জরুরি অবস্থাকে সর্বোচ্চ সতর্কতা হিসেবে নিতে বলা হয়। এর আগেও চারবার এ ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।

তবে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে এটি অন্যতম পদক্ষেপ হিসেবে ধরে নিতে হবে বলে সম্মেলনে জানানো হয়েছে।
আফ্রিকার এ দেশটিতে ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত ইবোলায় আক্রান্ত ১ হাজার ৬০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পশ্চিম আফ্রিকায় মারা গেছে ১১ হাজার মানুষ। 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান গ্রিবাইসুস বলেন, ইবোলা যেভাবে মরণব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা খুব অল্প সময়ে অন্যদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই এটি প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। 

কঙ্গোর সঙ্গে উগান্ডার সীমান্ত সম্পর্ক থাকায় ইতোমধ্যে দেশটিতে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি কঙ্গো-রোয়ান্ডা সীমান্তবর্তী গোমা শহরে ২০ লাখের বেশি মানুষের মানবদেহে ছড়িয়ে পড়েছে এ ভাইরাস। ফলে, আশঙ্কায় রয়েছে উগান্ডায় ছড়িয়ে পড়ার। 
সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রোগটির প্রতিষেধক আছে। এবং সেটি ৯৯ ভাগ কার্যকরি। এর আগে কঙ্গোতে যারা আক্রান্ত হয়েছে, তাদের মাঝেও এ প্রতিষেধক দেয়া হয়েছিল। সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তা আরো সহজলভ্য করা হয়েছে।
ইবোলা ভাইরাস কী?

মধ্য আফ্রিকার উত্তরাংশে অবস্থিত ইবোলা নদী থেকে এর নামকরণ করা হয়। ১৯৭৬ সালে সর্বপ্রথম এ ভাইরাসের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। ওই বছর ৩১৮ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, এর মধ্যে মারা যায় ২৫১ জন। এখন পর্যন্ত এর পাঁচটি প্রজাতি খুঁজে পাওয়া গেছে। যার প্রত্যেকটি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। 

এরমধ্যে আবার তিনটি খুবই মারাত্মক। যার একটি কোনো মানবদেহে ঢুকে পড়লে মৃত্যু নিশ্চিত। 

ভাইরাসটির মূলবাহক এক প্রকার ফল খেকো বাদুর। যারা এটি বহন করে, কিন্তু নিজেরা তাতে আক্রান্ত হয়না। পরে ওই বাদুর থেকে অন্য প্রাণীর দেহে সেটি সংক্রমণ হয়। 

আর কোনোভাবেই ছড়িয়ে পড়া প্রাণীর মাংস মানুষের দেহে প্রবেশ করলে সেখান থেকে এ ভাইরাস দানা বাধতে শুরু করে। এরপর সংক্রমিত মানুষের দেহ থেকে (হাঁচি, কাশি) অন্যজনের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে।
কতটা ভয়ংকর  হতে পারে? 

সাধারণত লক্ষণগুলো ধরা পড়ে আক্রান্ত হওয়ার দুই-তিন সপ্তাহ পর। জ্বর ও রক্তক্ষরণ দিয়ে শুরু হয় এ ভাইরাস।

সেই সঙ্গে শরীরের প্রচুর ব্যাথা, মাথা যন্ত্রণা, বমি, পেট ব্যাথা থেকে শুরু করে লিভার ও কিডনির কর্মক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে এবং এক পর্যায়ে তা বিকল হয়ে পড়ে। শেষে মৃত্যু ঘটে কোষের। 

ডব্লিউএইচ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ রোগে আক্রান্তদের ৯০ শতাংশই মারা যান। সংক্রামিত রক্তের সংস্পর্শে এলে এ ভাইরাস দ্রুত তা অন্যের দেহে প্রবেশ করে।
এছাড়া ঘাম, লালা ও শারীরিক মিলনে এটি একজনের দেহ থেকে অন্যজনের দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে। 

এ রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র চিকিৎসা একধরনের টিকা, যার মূল্য অনেক বেশি। ফলে অনেক গরীব দেশ সেটি কিনতে পারেনা। ফলে সংক্রমিত এলাকার মানুষদের সহজে বাঁচানো সম্ভব হয়না। 

শুধু আফ্রিকা নয়, এশিয়া অঞ্চলেও ইতোমধ্যে প্রবেশ করেছে। ২০১১ সালে ভারতের আহমেদাবাদে এটি প্রথম দেখা দেয়। এরপর ২০১৪ সালেও নয়াদিল্লীতে আরও একজন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হোন।

'ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি'র পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে ইবোলায় আক্রান্ত হয়েছেন বা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার। তবে পেশাগত কারণে যারা আফ্রিকার ওই দেশগুলোতে যাতায়াত করেন, তাদের সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই আশঙ্কা রয়েছে, ১২০ কোটি মানুষের দেশ ভারতের মধ্যদিয়ে তা পার্শবর্তী দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। 

আই/এসি

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি