ঢাকা, শুক্রবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র

ঋণ পরিশোধে বাড়তি সময় দিলো রাশিয়া, জরিমানাও মওকুফ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:২১, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণ পরিশোধে বাংলাদেশ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে। ঋণদাতা দেশ রাশিয়া প্রকল্পের দায়দেনা পরিশোধে সময় বাড়িয়ে দিয়েছে এবং পূর্বের আরোপিত একটি বড় অঙ্কের জরিমানাও মওকুফ করেছে।

মূলত, ২০২৭ সালের মার্চ থেকে রূপপুর প্রকল্পের মূল ঋণ ও সুদের কিস্তি পরিশোধ শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে বাস্তবায়ন-পর্যায়ের বিভিন্ন জটিলতার কারণে বাংলাদেশ সরকার এই সময়সীমা পিছিয়ে আরও দুই বছর সময় চায়। রাশিয়া সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে সময়সীমা দেড় বছর বাড়িয়ে দেয়। সংশোধিত ঋণচুক্তিতে এই ছাড় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এছাড়া, প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য পূর্বে নেওয়া ৫০ কোটি ডলারের একটি ঋণের কিস্তি যথাসময়ে পরিশোধ না হওয়ায় ১৬ কোটি ৪০ লাখ ডলারের জরিমানা নির্ধারিত হয়েছিল। তবে রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থাকায় আর্থিক লেনদেন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বাংলাদেশ সময়মতো পরিশোধ করতে পারেনি। পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে রাশিয়া সেই জরিমানা সম্পূর্ণ মওকুফ করেছে।

বৈদেশিক দায়দেনার চাপ কমাতে অন্তর্বর্তী সরকার ২০২৯ সালের মার্চ থেকে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ শুরু করার সময় নির্ধারণে রাশিয়া সরকারকে অনুরোধ করে। সংশোধিত প্রটোকলে ২০২৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পরিশোধ শুরুর নতুন সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।  

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ইআরডির সংশ্লিষ্ট ইউরোপ উইংয়ের  প্রধান ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গতকাল সমকালকে বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে সরকারের যোগাযোগের ভিত্তিতে এমন ভালো সিদ্ধান্ত এসেছে। প্রকল্পের কাজ এখনও বেশ বাকি থাকায় আরও দুই বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। রাশিয়ার তাতে সম্মতি রয়েছে। তিনি জানান, প্রকল্প শুরুর আগে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য নেওয়া ঋণের কিস্তির অর্থ আলাদা একটি ব্যাংক হিসাবে জমা রাখা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে ডলারে তা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। বিকল্প প্রক্রিয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে। তবে এখনও  কোনো সমাধানে আসা যায়নি। 

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট ব্যয়  ধরা হয় ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার বা ১ লাখ ১৩ হাজার ৯৩ কোটি টাকা। ব্যয়ের  ৯০ শতাংশ হিসেবে মোট ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে রাশিয়া সরকার। বাকি ১০ শতাংশ বাংলাদেশের  নিজস্ব জোগান। রাশিয়ার  ঋণের মধ্যে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রায় ৭ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে। অতিমারি করোনা এবং পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ঋণের অর্থছাড়ে দেরি হয়। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে রাশিয়ার প্রতিশ্রুত মোট ঋণের বাকি ৩ দশমিক ৬৮ কোটি ডলার ছাড় হওয়ার কথা রয়েছে। রাশিয়ার রোসাটম স্টেট অ্যাটমিক এনার্জি করপোরেশন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। 

ইআরডি সূত্র জানায়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরই কিছু ঋণদাতা সংস্থা এবং দেশের কাছে ঋণ পরিশোধে বাড়তি সময় চাওয়া হয়। ঋণের সুদের হারেও ছাড় চাওয়া হয়। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠকে রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ রূপপুর প্রকল্পের ঋণ চুক্তি সংশোধনে রাজি হন। ওই বৈঠকেই সংশোধনী চূড়ান্ত করার বিষয়ে একমত হয় সরকার এবং রোসাটম। 

সম্প্রতি মস্কো থেকে পাঠানো সংশোধিত প্রোটোকলের  খসড়ায় ঋণ পরশোধে এক মাস বিলম্বের জন্য বিলম্ব মাশুল পরিশোধের শর্ত বাদ দেওয়া হয়। মূল প্রোটকলে ঋণ পরিশোধ এক মাস বিলম্বিত হলে বাংলাদেশকে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ হারে জরিমানা দেওয়ার শর্ত ছিল। সে হিসেবে ২০২২ সালের ১৫ মার্চ  থেকে ২০২৫ সালের ১৫ মার্চ পর্যন্ত সময়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ঋণের কিস্তি বকেয়া বাবত বাংলাদেশকে ১৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার জরিমানা গুনতে হতো। ইআরডির কর্মকর্তারা জানান,  ঋণ পরিশোধে বিলম্বের জন্য বাংলাদেশ দায়ী নয়। 

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের  নির্মাণকাজ আগামী ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। ২০১৭ সালে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। 

এমবি//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি