ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪

এই পরিস্থিতির মোকাবেলা করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:২২, ২৪ মে ২০২০

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে রোগ মহামারী, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ সব ধরনের সঙ্কট মোকাবেলা করেই পথচলার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আজ রোববার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছেন, ‘ঝড়-ঝঞ্ছা-মহামারী আসবে। সেগুলো মোকাবেলা করেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’ 

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে প্রচারিত হয়। সব বেসরকারি বেতার, টেলিভিশন ও স্যোশাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে এ ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

তিনি বলেন, ‘যতদিন না কোনও প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কার হচ্ছে, ততদিন করোনা ভাইরাসকে সঙ্গী করেই হয়তো আমাদের বাঁচতে হবে। এর মধ্যেই জীবন-জীবিকার স্বার্থে চালু করতে হবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।’ করোনা পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে করোনা ভাইরাসের এই মহামারি সহসা দূর হবে না। কিন্তু জীবন তো থেমে থাকবে না। যতদিন না কোন প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কার হচ্ছে, ততদিন করোনা ভাইরাসকে সঙ্গী করেই হয়তো আমাদের বাঁচতে হবে। জীবন-জীবিকার স্বার্থে চালু করতে হবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। বিশ্বের প্রায় সকল দেশই ইতোমধ্যে লকডাইন শিথিল করতে বাধ্য হয়েছে। কারণ অনির্দিষ্টকালের জন্য মানুষের আয়-রোজগারের পথ বন্ধ করে রাখা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের তো উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে তো নয়ই।’

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবার ঈদ উদযাপনের কয়েকদিন আগেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি চালিয়ে যায় ঘূর্ণিঝড় আম্পান। ‘কথায় আছে, বিপদ কখনও একা আসে না’ ভাষণে এই মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে যাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি না হয়, সে জন্য বিভিন্ন দ্বীপ, চরাঞ্চল এবং সমুদ্র-উপকূলে বসবাসকারী ২৪ লাখেরও বেশি মানুষকে এবং প্রায় ৬ লাখ গবাদিপশু আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করি। সর্বাত্মক প্রস্তুতি সত্ত্বেও গাছ ও দেয়াল চাপায় বেশ কয়েকজন মানুষ মারা গেছেন এবং বহু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে আমরা ইতোমধ্যেই ত্রাণসামগ্রী বিতরণ শুরু করেছি এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে।’

করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর চেষ্টার মধ্যেই আসে প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আম্পান। যাতে উপকূলীয় এলাকায় বহু ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। গত তিন মাস ধরে করোনা ভাইরাসের মহামারী ঠেকাতে লড়ছে বাংলাদেশ। ছোঁয়াচে এই রোগের বিস্তার গত ২৬ মার্চ থেকে চলছে সাধারণ ছুটি। সবাইকে বলা হয়েছে ঘরে থাকতে।

করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের মহামারির কারণে সারা বিশ্ব আজ বিপর্যস্ত। অগণিত মানুষের প্রাণহানি ছাড়াও এই মহামারি মানুষের রুটি-রুজির ওপর চরম আঘাত হেনেছে। সংক্রমণ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য জরুরি কিছু সেবা ছাড়া বন্ধ করে দিতে হয়েছে অফিস-আদালত, কল-কারখানা, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানসহ সবকিছু। লক্ষ লক্ষ মানুষ আজ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। হারিয়েছেন তাঁদের রুটি-রুজির সংস্থান। এসব কর্মহীন মানুষের সহায়তার জন্য সরকার সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।’ 

করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোর কথা তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা চিকিৎসা সক্ষমতা অনেকগুণ বৃদ্ধি করেছি। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হাসপাতালকেও আমরা করোনা ভাইরাস চিকিৎসায় সম্পৃক্ত করেছি। জরুরিভিত্তিতে ২ হাজার ডাক্তার এবং ৫ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছেন। হাসপাতালগুলোতে সকল ধরনের রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

ঐক্যবদ্ধভাবে সঙ্কট মোকাবেলা করতে জনগণকে আহবান জানানোর পাশাপাশি তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিও দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘যে কোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজন জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। সঙ্কট যত গভীরই হোক জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে তা উৎরানো কোনো কঠিন কাজ নয়। এই সত্য আপনারা আবারও প্রমাণ করেছেন। আপনাদের সহযোগিতা এবং সমর্থনে আমরা করোনা ভাইরাস মহামারীর আড়াই মাস অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে সমর্থ হয়েছি। যতদিন না এই সঙ্কট কাটবে, ততদিন আমি এবং আমার সরকার আপনাদের পাশে থাকব।’

করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ ভাষণে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখতে সরকারের নেওয়া কর্মসূচিগুলোর কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং উৎপাদন ব্যবস্থাকে পুনরায় সচল করতে আমরা ১ লাখ ১ হাজার ১১৭ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি-যা জিডিপির তিন দশমিক ৬ শতাংশ। রফতানিমুখী শিল্প, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প, কৃষি, মৎস্যচাষ, হাঁসমুরগি ও পশুপালন খাতসহ ১৮টি অর্থনৈতিক খাতকে এসব প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় আনা হয়েছে। কাজ হারানো যুবক ও প্রবাসী ভাইবোনদের সহায়তার জন্য পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এবং পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনকে ৫০০ কোটি টাকা করে সর্বমোট ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’

তিনি জানান, রফতানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য বিশেষ তহবিল বাবদ ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ সুবিধা কার্যকর করা হয়েছে। যারা কাজে যোগ দিতে পারেননি, তারাও শতকরা ৬০ ভাগ বেতন পাচ্ছেন। ইতোমধ্যে এ প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে বেতনভাতা পরিশোধ করা শুরু হয়েছে। দোকান-পাট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এক দিকে মালিকদের আয় যেমন বন্ধ হয়েছে, তেমনি কর্মচারীরাও বিপাকে পড়েছেন। বেশিরভাগ দোকান মালিকের কর্মচারীদের বেতন দেওয়ার সামর্থ্য নেই। ফলে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

এমএস/এসি

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি