একজন কর্মীও জাপানে পাঠাতে পারেনি ৬২ এজেন্সি, মন্ত্রণালয়ের শোকজ
প্রকাশিত : ২১:৪২, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে জাপানে একজন কর্মীও পাঠাতে না পারায় ৬২ রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। গত ৩১ আগস্ট মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হাছিনা বেগমের সই করা এক চিঠিতে এই ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। মন্ত্রণালয় সূত্র এবং বেশ কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সির সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জাপানে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে সেন্ডিং অর্গানাইজেশন হিসেবে তালিকাভুক্ত আছে ৯২টি রিক্রুটিং এজেন্সি। কিন্তু গত ছয় মাসের প্রতিবেদন বলছে, এর মধ্যে ৬২টি রিক্রুটিং এজেন্সি একজন কর্মীও জাপানে পাঠাতে পারেনি। এই এজেন্সিগুলোর অনেকেই মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সঙ্গে জড়িত। গত বছর ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর এদের অনেকেই আত্মগোপনে গেছেন। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সেন্ডিং অর্গানাইজেশন হিসেবে তালিকাভুক্তির শর্ত হচ্ছে, ছয় মাসে ন্যূনতম একজন কর্মী জাপানে পাঠাতে হবে।
ব্যাখ্যা চাওয়া রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো হলো—আল খামিছ ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-০৬৮০), মেসার্স গ্রিনল্যান্ড ওভারসিজ (আরএল-৪০), আহমেদ অ্যান্ড কোম্পানি প্রা. লি. (আরএল-০৮১), মেসার্স শুভ্র ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যান্ড ট্রাভেলস (আরএল-১১০৬), মিতুল ট্রেডিং (আরএল-১১০১), কেয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-৭৫৩), টাইমস এন্টারপ্রাইজ (আরএল-৩৮৫), অরবিটালস এন্টারপ্রাইজ (আরএল-১১৩), ফ্লাই এয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড (আরএল-১৪৫৬), সাউথ পয়েন্ট ওভারসিজ লিমিটেড (আরএল-৬২২), ইস্টার্ন রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস লি. (আরএল-১০৫৭), বিনিময় ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-৩৫১), সাদিয়া ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-৪৯২), ফুজিতা ওভারসিজ (আরএল-১২৯৩), মুন্সি এন্টারপ্রাইজ (আরএল-০৯৮৬), অ্যারাবিয়ান গালফ অ্যাসোসিয়েট কো. লি. (আরএল-০৫১), সিলভার লাইন অ্যাসোসিয়েটস (আরএল-০৮), নাভিরা লিমিটেড (আরএল৭১২), এএনজেড গ্রুপ মাল্টিমেগা সার্ভিসেস (আরএল-১৬৯৮), এমসিও ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল প্রা. লি. (আরএল-২৫৫), জিন্নাহ্ ওভারসিজ (আরএল-৮৯৮), সিমপ্লেক্স ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-১০২২), পেন্টাগন ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-৩১৩), আই এম ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-১৪৬৯), অরচার্ড ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-০১০), ক্যাথারসিজ ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-৫৪৯), ইয়ামবু ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-১৯২), খালেদ ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-৬৯১), কাজ বাংলা এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস (আরএল-১৩৪৫), ইস্ট ওয়েস্ট হিউম্যান রিসোর্সেস সেন্টার লি. (আরএল-৯৮০), লিডস এইচআর সল্যুশন লিমিটেড (আরএল-১৩৭৬), নামিরা ওভারসিজ (আরএল-১০১৩), আল-সাদ লেবার সাপ্লাই (আরএল-৯৩৯), বিডিএক্স ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-১০৮৬), মেরিট ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লি. (আরএল-৯৩৩), কবির এন্টারপ্রাইজ (আরএল-২৩০), মৃধা ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন (আরএল-১১০৮), আরএক্স কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-১২৪০), হোমল্যান্ড ট্রেডিং (আরএল-১০৫২), স্কলার্স কন্সাল্টিং লি. (আরএল-১১৫৬), সিলভি অ্যান্ড সিনথী ট্রাভেল এজেন্সি লি. (আরএল-১৪৯১), ক্যারিয়ার ফাইন্ডার বাংলাদেশ (আরএল-১৯৪০), আল হায়াত ওভারসিজ (আরএল-১১৫৮), সিঙ্গাপুর বাংলাদেশ সার্ভিসেস লি. (আরএল-০৫৬১), বিজিআইটি এইচআর এজেন্সি লি. (আরএল-১৩৫৬), মেসার্স হাতিয়া ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-১৬৬১), ব্রাক প্রবাস বন্ধু লি. (আরএল-১১৯৯), ঝুমুর ইন্টারন্যাশনাল (আরএল০৮৯২), আকাশ ভ্রমণ (আরএল-৩৮৪), ডিভাইন সার্ভিস লি. (আরএল-১৭৫৭), সুরমা ইন্টারন্যাশনাল লি. (আরএল-২৯৯), সেন্ট্রাল ওভারসিজ (আরএল-১১২), কাইকম ড্রিম স্ট্রিট বিডি কোম্পানি লিমিটেড (আরএল- ২৭৩৮), মেসার্স নর্দান ওয়ার্কফোর্স লি. (আরএল-১৮২২), ট্রেড সার্ভিসেস ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-১০০০), রয়েল রোলস ম্যানপাওয়ার সার্ভিস ইস্ট (আরএল-১২৬৪), মেসার্স ওশিন ওভারসিজ লিমিটেড (আরএল-৪১৪), মেসার্স নুরজাহান রিক্রুটিং এজেন্সি (আরএল-১৩৯৪), বে ওশানিয়া সিএনটি (আরএল- ২৪৯১), মুনিয়া ওভারসিজ (আরএল- ২৪৫২) এবং মেসার্স অরজিন ইন্টারন্যাশনাল (আরএল-২৬৫১)।
এজেন্সিগুলোর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৬২ রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে অধিকাংশের মালিক দেশে অবস্থান করছেন না। এর মধ্যে মালয়েশিয়ায় বিগত সময়ে কর্মী পাঠানোর সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সি আছে। এছাড়া মালয়েশিয়ায় অর্থ পাচারের দায়ে ৩৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আসামির তালিকায় আছেন সাবেক তিন সংসদ সদস্য এবং একজন সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রী। এ ছাড়া মালয়েশিয়া চক্রের অন্যতম মূল হোতা হিসেবে পরিচিত রুহুল আমিন ওরফে স্বপনের নামও আছে টাকা পাচারকারীর তালিকায়। তার রিক্রুটিং এজেন্সি ক্যাথারসিজ ইন্টারন্যাশনাল আছে শোকজের তালিকায়। এছাড়া সাবেক অর্থমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আ হ ম মুস্তফা কামালের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান অরবিটালস এন্টারপ্রাইজের মালিকানায় থাকা তার স্ত্রী কাশমেরী কামালের প্রতিষ্ঠান অরবিটালস এন্টারপ্রাইজও আছে এই তালিকায়। এছাড়া মানি লন্ডারিং মামলা দায়ের হওয়া আরও কয়েকজনের প্রতিষ্ঠানের নাম এই তালিকায় পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন রিক্রুটিং এজেন্সির স্বত্বাধিকারী এবং জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার সাবেক এক নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সেন্ডিং অর্গানাইজেশনের তালিকায় থাকা বেশির ভাগ এজেন্সি মালিক হয় দেশে নাই, না হয় পলাতক। তাহলে লোক পাঠাবে কী করে?’
তবে অপর এক এজেন্সি মালিক দাবি করেন, ‘জাপানে বেতন কাঠামো এবং সুযোগ-সুবিধা বেশি হলেও ভাষাগত জটিলতায় অনেকে যেতে আগ্রহী হয় না।’
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, এই বছরে জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৫ মাসে জাপানে কর্মী গেছে ৪৫৪ জন।
এদিকে আগামী পাঁচ বছরে জাপানে এক লাখ কর্মী পাঠানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে ‘জাপান সেল’ গঠন করেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। গত ২০ আগস্ট উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘অদক্ষ কর্মীর বাজার সংকুচিত হচ্ছে। তাই উন্নত দেশে দক্ষ কর্মী পাঠানো ছাড়া বিকল্প নেই। এরই মধ্যে ইতালি ও জাপানের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে জাপানে এক লাখ কর্মী পাঠানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জন্য দেশে জাপানি ও ইতালিয়ান ভাষা শিক্ষার প্রশিক্ষণকেন্দ্র বাড়ানো হচ্ছে।’
তিনি জানান, জাপানে বর্তমানে পাঁচ লাখের বেশি কর্মীর চাহিদা রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে ‘জাপান সেল’ গঠন করা হয়েছে। আগে তিনটি খাতে দক্ষতার পরীক্ষা থাকলেও এখন তা পাঁচটি খাতে উন্নীত করা হয়েছে। জাপানের তিনটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রশিক্ষণ ও সনদ দেওয়ার জন্য পৃথক সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
এসএস//
আরও পড়ুন