ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪

একটা কাজের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি : আর জে নিরব

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২০:২৯, ১৫ নভেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ০৯:৪৮, ১৬ নভেম্বর ২০১৭

নিরব খান বাংলাদেশের একজন রেডিও আইকন। কণ্ঠের যাদু দিয়ে তিনি বশ করেছেন অগণিত ভক্ত শ্রোতাদের। রেডিও কি? এই নামটির সঙ্গে যখন মানুষের তেমন পরিচিতি ছিল না। ঠিক তখন ধ্রুবতারার মতো আবির্ভাব ঘটে নিরব খানের। কিন্তু এ জগতে নাম করার আগে পথটা তার জন্য অতটা মসৃণ ছিল না। নানা জায়গায় ঘুরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে, দিন রাত খেটে তিনি ধাপে ধাপে বহু পথ মাডিয়ে হয়ে উঠেছেন আজকের আরজে নিরব।  

কাজের ক্ষেত্রে নিরব শুধু এক জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকেননি। করছেন বহুমাত্রিক কাজ। রেডিও, টেলিভিশন উপস্থাপনা, চাকরি এবং অভিনয়। সব কিছুতেই রয়েছে তার সমান পথ চলা। এসব বিষয় নিয়ে ইটিভি অনলাইনের সঙ্গে মুখোমুখি হন আরজে নিরব। সাক্ষাৎকার নিয়েছে আউয়াল চৌধুরী।

ইটিভি অনলাইন: কেমন আছেন? 

আরজে নিরব: আলহামদুলিল্লাহ, ভাল আছি।

ইটিভি অনলাইন: বর্তমানে কি নিয়ে ব্যস্ততা যাচ্ছে?

আরজে নিরব: আমি এখন ব্যস্ত আছি সিটিএফএম ৯৬ নিয়ে। সেখানে হেড অফ নিউজ ও হেড অফ প্রোগ্রাম এর দায়িত্ব পালন করছি। এর সঙ্গে আমার নিজের একটা বিজ্ঞপনী সংস্থা আছে সেটার কাজ করছি। পাশাপাশি নাটকে অভিনয় করছি। আবার রেডিও কানামাছি স্টেশনে একটা প্রোগ্রাম করছি। এটা ইউনিলিভারের একটা প্রজেক্ট। সব মিলিয়ে অফিসে ৮ ঘন্টা সময় দিই। তারপর বাহিরের কাজ। আবার আমি লেখা-লেখিও করছি। আগামী বই মেলায় আমার একটি বই বের হওয়ার আছে। সেটা নিয়েও কাজ করছি। সময় আর কই।

ইটিভি অনলাইন : বর্তমানে আপনি অনেক কাজের সঙ্গে জড়িত। মিডিয়ায় আপনার পথ চলা কিভাবে শুরু হলো-

আর জে নিরব : ২০০০ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের একটি ম্যাগাজিনে কাজ করার মধ্য দিয়ে মিডিয়ায় আমার পথ চলা শুরু হয়। এরপর দৈনিক মানবজমিনে কাজ করি। পরবর্তীতে তাদের একটি রেডিও আসে ‘রেডিও এবিসি’ সেখানে কাজ করি। পরবর্তিতে রেডিও টুডে। এভাবে অনেকগুলো মাধ্যমে কাজ করে বর্তমানে ‘সিটিএফএম ৯৬’ রেডিওতে কাজ করছি। সারাদিন কাজ নিয়ে ডুবে থাকি। আল্লাহর রহমতে কাজ নিয়ে ভালও আছি। চলছে সব কিছু সমানতালে।

ইটিভি অনলাইন : দীর্ঘদিন প্রেম করলেন তারপর সোজা বিয়ের পিঁড়িতে। আপনার প্রেম এবং বিয়ে সম্পর্কে জানতে চাই ?

আরজে নিরব : প্রেম! এটাতো অনেক মজার বিষয়। আমার মনে হয় প্রত্যেক মানুষের জীবনে অসংখ্যা প্রেম আসা উচিৎ। যত প্রেম তত এক্সপেরিয়েন্স। প্রেমে না মজলে জীবন সম্পর্কে উপলব্ধি আসবেনা।   আমরা একজন আরেকজনকে ভালবাসি। আর সেই ভালবাসা থেকেই বিয়ের পিঁডিতে। আমার জীবনে সত্যিকার ভালবাসা বলতে গেলে একবারই হয়েছে। যার সঙ্গে হয়েছে সে লাবণ্য। আমার স্ত্রী। সেই একমাত্র ভালবাসার মানুষ। বর্তমানে আমরা দুজনই ব্যাস্ত থাকি কাজ নিয়ে। সেও মিডিয়ার মানুষ। চেষ্টা করি দুজনে সব সময় ভাল থাকার। কাজকে ভাগাভাগি করে করার। সো এ ক্ষেত্রে আমরা হ্যাপি। আর কিছু…..

ইটিভি অনলাইন : আপনি জীবনে অনেক পরিশ্রম করেছেন। আজকের এই পজিশনে আসতে অনেক সংগ্রাম করেছেন। পেছনের লড়াইটা সম্পর্কে কি একটু বলবেন ?

আরজে নিরব : নতুনদের জন্য পৃথিবীটা অনেক কঠিক একটি জায়গা। এখানে কেউ কাউকে সুযোগ দিতে চায় না। শুরুতে আমিও কোন সার্পোট পাইনি। কারো কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি। একটি কাজের জন্য বহু মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। সবাইকে বলেছি আমাকে একটা কাজ দেন, আমাকে কাজে নেন। কেউ নেয়নি। ঐ সময়টা অনেক কষ্টের ছিল। যেটা সব নতুনদের পার করে আসতে হয়। হয়ত স্ট্রাগলিং পিরিয়ডটাই মানুষকে উপরে উঠতে সহায়তা করে। এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা হলেও তারচেয়েও বড় স্ট্রাগল ছিল আমি যখন ঢাকায় আসি। আমার ঢাকায় থাকার জায়গা ছিল না। আমি তিন দিন রাস্তায় রাস্তায় কাটিয়েছি। আমি কোথাও যে থাকবো সে ব্যবস্থা ছিল না। আমার খাওয়ার টাকা ছিল না। শাহবাগের মোড়, ঢাকা ইউনিভার্সিটির ভেতর ব্যাগ মাথায় দিয়ে রাত কাটিয়েছি। আসলে সময়গুলো খুব খারাপ ছিল। অনেক কষ্টের ছিল। আল্লাহর কাছে শোকর যে তিনি সেখান থেকে উঠিয়ে এনেছেন। এখন অনেক ভাল আছি।

ইটিভি অনলাইন : নিরব খান হয়ে উঠলেন জনপ্রিয় আরজে নিরব, কিভাবে ?

আরজে নিরব : আমি যখন ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ি তখন ডিবেট করতাম। ইউনিভার্সিটির মেইন ডিবেটিং টিমের আমি মেম্বার ছিলাম। ডিবেটে যুক্ত থাকলে অনেক মানুষের সঙ্গে পরিচয় ঘটে। সেখানে একজন টিচার এর সঙ্গে আমার পরিচয় ঘটে। তিনি আমাকে বললেন এফএম রেডিও নামে বাংলাদেশে একটা জিনিষ হতে যাচ্ছে তুমি চাইলে আসতে পার। আমি তাকে প্রথম প্রশ্ন করি আমাকে বেতন দিবেন কত। তিনি জানালেন ১০ হাজার টাকা দিবে। ওই সময় ১০ হাজার টাকা অনেক ভালো পারিশ্রমিক। পরে আমি সেখানে যাওয়ার পর বুঝলাম রেডিও নামে নতুন একটা কিছু হতে যাচ্ছে। তারপর আমরা ২৮ দিনের একটা কর্মশালা করি। সেই কর্মশালায় আমি প্রথম হই। এবং প্রথম বাংলাদেশে আরজে হিসেবে অ্যাপয়নমেন্ট লেটার পেলাম। সে কারনে মানুষ হয়ত আমাকে মনে রেখেছে।   

তারপর যেটা হলো, বলা যায় ভাগ্যের পরিহাস। আমি একটু আস্তে কথা বলি এই অজুহাতে আমাকে দিনে শো না দিয়ে শো দেওয়া হলো রাতে। আমার গলার আওয়াজ একটু নিচু তাই দিনে প্রোগ্রাম করলে জনপ্রিয় হবে না। সারা পৃথিবীতে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রোগ্রাম হয় বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টার পর্যন্ত। কিন্তু আমাকে দেওয়া হলো রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত। সবাই ভেবে ছিল কোন দিন প্রোগ্রাম হিট হবে না। কিন্তু আল্লাহর অশেষ শুকরিয়া আমার প্রোগ্রামই সবচেয়ে বেশি হিট করে।

ইটিভি অনলাইন : আপনার সফলতার গল্প শুনতে চাই। আপনি একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন। এত ব্যস্ততার মাঝে কিভাবে সম্ভব?  

আরজে নিরব : আসলে আমার সফলতার গল্পের চেয়ে প্রচেষ্টার গল্পটা বেশি। আমি চলচ্চিত্রে কাজ করবো সেটা আমার অনেক দিনের ইচ্ছা। কিন্তু হয়ে উঠছিল না। আগামী ডিসেম্বরে আমার একটা ফিল্ম আসছে। নাম চটপটি। এটার ডিরেক্টর তারেক মাহমুদ। দুঃখের বিষয় হলো, এটাও শেষ করতে প্রায় চার বছর লেগে গেল। আমার জীবনে হঠাৎ করে একদিনে কোন কিছু হয় না, সফলতা ধরা দেয় না। ম্যাজিক্যালভাবে আমার কিছু হয় না। আমার জীবনে কোনো বড় ভাই বা গড়ফাদার ছিল না। সবকিছুতে নিজেকে কঠোর পরিশ্রম করে, শরীরের ঘাম জড়িয়ে, দিন রাত পরিশ্রম করে অর্জন করেছি। আমার চেয়ে বেশি পরিশ্রম করতে পারে এমন মানুষ খুব কম দেখি। আমার চেয়ে বেশি ক্রিয়েটিভ চিন্তা করে এমন মানুষও খুব কম পাওয়া যাবে। কারন আমি ভয়ানকভাবে পড়ালেখা করি। চব্বিশ ঘন্টায় আমি কিছু না কিছু করি। শেখার চেষ্টা করি। এই চেষ্টাটাই হয়ত আমাকে অনেক দিন বাঁচিয়ে রাখবে।

ইটিভি অনলাইন : যারা আরজে হতে চায় তাদের জন্য আপনার কোনো পরামর্শ থাকলে বলুন।

আরজে নিরব : যারা আরজে হতে চায় তাদেরকে প্রথমে ফানি হওয়ার চেষ্টা করা উচিৎ। তাদেরকে অধিক কথা না বলে কম কথা বলতে হবে। বাংলায় শুদ্ধ উচ্ছারণে কথা বলার চেষ্টা করতে হবে। আর ধৈর্য্যশীল হওয়া প্রযোজন। কাজের ক্ষেত্রে হাল ছেড়ে না দিয়ে ধৈর্য্যর পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হতে হবে। বাকিটা আল্লায় দেখবে।

ইটিভি অনলাইন : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ সময় দেওয়ার জন্য।

আরজে নিরব : আপনাদেরকেও অসংখ্যা ধন্যবাদ।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি