ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ
প্রকাশিত : ১০:২৫, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

আজ ১৭ এপ্রিল, ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করে।
শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়। প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করা হয় এম এ জি ওসমানীকে।
সেই সরকারের শপথ গ্রহণের স্থান বৈদ্যনাথতলাকে মুজিবনগর নামকরণ করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন ১২ জন আনসার সদস্য। সেদিন থেকে এই স্থানটি মুজিবনগর নামে পরিচিতি লাভ করে।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালি জাতির ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায়। ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়। মুজিবনগর সরকারের সফল নেতৃত্বে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।
দিবসটি উপলক্ষে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম (বীর প্রতীক) আজ বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এসময় গার্ড অব অনার শেষে স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ অর্পণের মধ্য দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করা হয়।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইসরাত জাহান চৌধুরী, খুলনা বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার হুসাইন শওকত, মেহেরপুর জেলার পুলিশ সুপার মাকসুদা আক্তার খানম। এছাড়া প্রশাসনের কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধারা উপস্থিত ছিলেন।
মেহেরপুর পুলিশের পক্ষ থেকে উপদেষ্টাকে গার্ড অব অনার দেওয়ার হয়। এ সময় ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ সালে গার্ড অব অনার প্রদানকারীদের মধ্যে বেঁচে থাকা দুজন আনসার সদস্য সিরাজ উদ্দিন ও আজিমউদ্দিনকে ক্রেস্ট দেওয়া হয়।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ফারুক-ই-আজম। তিনি বলেন, মুজিবনগর সরকারের নাম পরিবর্তনের কোনো ইচ্ছা এ সরকারের নেই। কারণ ইতিহাস কখনো মোছা যায় না। ইতিহাসকে ইতিহাসের জায়গায় রাখতে হয়। পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এসে কী করবে সেটি তাদের ব্যাপার।
উপদেষ্টা আরও বলেন, মুজিবনগর সরকার প্রবাসী কিংবা অস্থায়ী সরকার নয়। এ সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। তাই এই সরকারই সাংবিধানিক সরকার। ইতিহাসের ওপর কোনো কিছু আরোপ করা যায় না। ইতিহাস ইতিহাসই। এই সরকারের শপথগ্রহণ একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। এটি চিরকাল শ্রদ্ধা ভালোবাসার মধ্য দিয়ে সবার স্মরণ রাখা দরকার।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের ৫ আগস্ট শতাধিক তরুণ-যুবক মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সে ঢুকে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলেন। ‘১৭ এপ্রিলের গার্ড অব অনার’ নামে ভাস্কর্যটিসহ অন্য ভাস্কর্যগুলোতেও ভাঙচুর চালানো হয়।
ভাঙচুরের বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, পুরো স্থাপনা ঘুরে দেখা হচ্ছে। দ্রুত ভাস্কর্যগুলো স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে ঐতিহাসিক বস্তুনিষ্ঠতার ওপর ভিত্তি করে স্থাপনাগুলো নির্মাণ করা হবে। ভুল কিছু এখানে আরোপিত করা হবে না, সত্যিকার ইতিহাস মোচনও করা হবে না।
দিবসটি উপলক্ষে মেহেরপুর জেলা প্রশাসন আলোচনা সভা এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
এমবি//
আরও পড়ুন