ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

করোনা শহীদদের জন্য কোয়ান্টাম ফাউণ্ডেশনের অ্যাম্বুলেন্স উদ্বোধন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:২০, ২৭ জুন ২০২০ | আপডেট: ২১:৫৩, ২৭ জুন ২০২০

আত্মনির্মাণ ও সৃষ্টির সেবায় কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ২৮ বছর ধরে কাজ করছে বাংলাদেশে। ২০০৪ সাল থেকে শুরু করে লাশ দাফন ও সৎকার কার্যক্রম। করোনাকালে যখন সন্তান মা-বাবার লাশ ফেলে পালিয়ে যাচ্ছে তখনই করোনায় শহীদদের সম্মানজনক শেষ বিদায় জানাতে এগিয়ে এসছে কোয়ান্টাম। করোনাকালে এ পর্যন্ত সারাদেশে মোট ৮৬৬ জন মৃতের শেষ যাত্রায় সেবা দিয়েছেন কোয়ান্টাম স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ। 

গতকাল (শনিবার, ২৭ জুন ২০২০) কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম সেন্টারের আয়োজনে করোনা শহীদদের শেষ বিদায়ে ব্যবহারের জন্যে কেনা অ্যাম্বুলেন্সের উদ্বোধন করা হয়। সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম সেন্টারের ও আর নিজাম রোডের কার্যালয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। 

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন এডিশনাল ডিআইজি, ট্যুরিস্ট পুলিশ চট্টগ্রাম বিভাগের মোহাম্মদ মুসলিম (পিপিএম)। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম সেন্টারের উপদেষ্টা সমন্বয়ক মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ছিলেন ১৫ নং বাগমনিরাম ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। আবৃত্তিশিল্পী দিলরুবা খানমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম সেন্টারের অর্গানিয়ার কো-অর্ডিনেশন এস. এম. সাজ্জাদ হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন ও. আর. নিজাম রোড আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর মোরশেদ ফিরোজ। 

উল্লেখ্য ফাউন্ডেশন প্রতিটি লাশের ব্যয়ভার নিজ উদ্যোগেই বহন করে। ফাউন্ডেশনের সদস্য ও শুভানুধ্যায়ীদের দানের টাকায় চলছে করোনায় শহীদদের সম্মানজনক শেষ বিদায়ের এই ব্যতিক্রমী-মানবিক  কার্যক্রম। ফাউন্ডেশন এতদিন ভাড়া করা গাড়ীতেই এই সেবামূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। সম্প্রতি বৃহত্তর চট্টগ্রামে করোনায় মৃত শহীদদের সেবায় আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে অ্যাম্বুলেন্স ক্রয় করা হয়। এ গাড়ীতে করেই স্বেচ্ছাসেবকরা মৃতের বাসা, হাসপাতালে যাতায়াতসহ শহীদের শেষ গন্তব্যস্থলে লাশ বহন করছে। 

প্রধান অতিথি, এডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ মুসলিম (পিপিএম) অ্যাম্বুলেন্স উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, “মানুষ তৈরীর কারখানা কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। গরুর বাচ্চা জন্মগ্রহণ করেই গরু হয়। মানুষের পেটে জন্ম নিলেই কেউ মানুষ হয় না। কিছু অনুশীলন ও নৈতিক মূল্যবোধের চর্চা করেই মানুষ প্রকৃত মানুষ হয়। আমরা দেখেছি কিছু অমানুষ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোশিমায় বোমা মেরে লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করেছে। করোনাকালেও সারা দেশে যখন অগণিত অমানবিকতার ঘটনা ঘটছে তখন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান কোয়ান্টাম এগিয়ে এসেছে  করোনা শহীদদের সম্মানজনক শেষ বিদায়ে। এজন্যে সারাদেশে প্রায় ৩০০ স্বেচ্ছাসেবক ২৪ ঘন্টা দাফন ও সৎকারে সময় দিচ্ছে। এটি একটি অত্যন্ত মহৎ উদ্যোগ।” উদ্বোধক, বাগমনিরামের কাউন্সিলর মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, “চট্টগ্রাম শহরে প্রায় ৭০ লক্ষ মানুস বসবাস করে। করোনাকালে মানুষের নিরাপত্তাবিধানে সরকার যথেষ্ট আন্তরিক। কিন্তু আমাদের নাগরিক দায়িত্বও কম নয়। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন এই ক্রান্তিকালে মানবসেবা ও লাশ দাফন-সৎকারে যেভাবে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করছে তা অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ২৩ মে থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত অগণিতু লাশের শেষ বিদায়ে কাজ করেছে কোয়ান্টাম স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ। এখন অ্যাম্বুলেন্স ক্রয়ের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবকরা আরও দ্রুত ও দুর্গম এলাকায় সহজে সেবা দিতে সক্ষম হবে। 

বিশেষ অতিথি মঞ্জুর মোরশেদ ফিরোজ বলেন, “পরস্পরকে সহযোগিতা ছাড়া কোনো কাজে সফলতা আসে না। মানবতা বিপর্যয়ের এই চরম ক্রান্তিকালে আমাদের সবাইকে একসাথে থেকে মানুষের সেবায় এগিয়ে আসতে হবে। মরে গেলেই কোনো মানুষ পর হয়ে যায় না। মৃতেরও রয়েছে মমতা, আন্তরিকতা, প্রার্থনায় শেষ যাত্রা করার অধিকার। আশা করি সমাজের অন্যরাও দান, স্বেচ্ছাশ্রম ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে করোনায় মৃতদের সেবাসহ জীবিত বিপন্ন-অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবে।”

অর্গানিয়ার কো-অর্ডিনেশন এস. এম. সাজ্জাদ হোসেন ও. আর. নিজাম রোড আবাসিক এলাকা কল্যাণ সমিতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “চট্টগ্রামের বাইরেও কুমিল্লা, চকরিয়া, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়িতে করোনা শহীদদের দাফ ও সৎকারে কোয়ান্টামের স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছে।”

সভাপতির বক্তব্যে মুজিবুর রহমান বলেন, “ চট্টগ্রামেও গত ২৩ মে থেকে শুরু হয়েছে চট্টগ্রাম সেন্টারের উদ্যোগে লাশ দাফন ও সৎকার কার্যক্রম। কোয়ান্টাম চট্টগ্রামের স্বেচ্ছাসেবকরা এরই মধ্যে ১৩৬ জন করোনা শহীদের দাফন ও সৎকার কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে।”

অনুষ্ঠানে ফাউন্ডেশনের সৃষ্টির সেবায় নির্মিত “ভ্রুণ থেকে কবর পর্যন্ত, করোনা শহীদদের সম্মানজনক শেষ বিদায়ে কোয়ান্টাম” শীর্ষক ডক্যুমেন্টারী  প্রদর্শিত হয়। অনুভূতি ব্যক্ত করেন ৪৪ টি করোনা ও করোনা উপসর্গে মৃত ৪৪ জন শহীদের দাফনে অংশ নেয়া একজন শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম সজীব। 

আরকে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি