ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

কাতালোনিয়ায় স্বাধীনতাপন্থীদের জয়, সংকট আরও ঘনীভূত হবে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:৪১, ২২ ডিসেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১০:০০, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭

স্পেনের কাতালোনিয়ার আঞ্চলিক পার্লামেন্টের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে স্বাধীনতাপন্থী দলগুলো। অপরদিকে নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে দেশটির প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানা রাজয়’র পপুলার পার্টির। এই নির্বাচনের মাধ্যমে স্বাধীনতাপন্থীদের সঙ্গে দেশটির ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব আরও বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার এই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী রাজয় নেতৃত্বাধীন দল মাত্র ৩টি আসনে জয়লাভ করেছে। এরআগে ২০১৫ সালে নির্বাচনে দলটি ১৫টি আসন পেয়েছিল। এদিকে পুরোপুরি স্বায়ত্ত্বশাসনের পক্ষে লড়া দল সিটিজেনস পার্টি নির্বাচনে ১৩৫ আসনের ৩৬টিতে জয়লাভ করেছে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে।নির্বাচনে ২৫ শতাংশ ভোট পড়েছে তাদের পকেটে।

অন্যদিকে, স্বাধীনতাপন্থী দল টুগেদার ফর কাতালোনিয়া, রিপাবলিকান লেফট অব কাতালোনিয়া ও পপুলার ইউনিটি মিলে ৭০টি আসনে জয়ী হয়েছে। এর মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট কার্লোস পুজদেমনের দল টুগেদার ফর কাতালোনিয়া অন্য দুটি দলের চেয়ে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে।

ভোটের ফল প্রকাশের পরপরই বেলজিয়ামে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা কাতালোনিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট কার্লোস পুজদেমন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, স্বাধীনতা আন্দোলন দমাতে মারিয়ানো রাজয়ের (স্পেনের প্রধানমন্ত্রী) উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও স্বাধীনতার পক্ষে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। এতে আমাদের দাবি আরও বেগবান হলো।

 

গত অক্টোবরে স্বাধীনতা ঘোষণার দাবিতে গণভোটের আয়োজন করে কাতালোনিয়ার সরকার। ওই গণভোটে ৯০ শতাংশ মানুষ স্বাধীনতার পক্ষে রায় দেন। এতে বরখাস্থ প্রধানমন্ত্রী কার্লোস পুজদেমনের নেতৃত্বাধীন কাতালোনিয়ার পার্লামেন্ট স্বাধীনতা ঘোষণা করে। তবে স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই কাতালোনিয়ার সরকারকে বরখাস্থ করে স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকার।

শুধু তাই নয়, ওই গণভোটকে অবৈধ বলে রায় দেয় স্পেনের আদালত। পরে স্বাধীনতাপন্থী নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে দেশটির আদালত। এরপর পুজদেমনসহ তার সরকারের কয়েকজন ব্যক্তি পালিয়ে বেলজিয়ামে আশ্রয় নেন।

এরপরই কাতালোনিয়ার শাসনভার স্পেনের কেন্দ্রীয় প্রশাসনের হাতে তুলে দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী রাজয়। শাসনভার তুলে দেওয়ার পরই এই প্রথমবার আঞ্চলিক পার্লামেন্টের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে নির্বাচনে একক দল হিসেবে বেশি আসন পেয়েছে সিটিজেনস পার্টি। এ দলটি কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা নয়, বরং স্বায়ত্তশাসন নিয়ে স্পেনের সঙ্গে থাকার পক্ষে। নির্বাচনের এ অবস্থায় কোন দলকে সরকার গঠনের জন্য আহ্বান জানানো হবে তা এখনও পরিষ্কার নয়।

এদিকে স্বাধীনতাকামী দুই নেতাকে মুক্তি দেওয়ার দাবি আরও জোরালো হয়েছে কাতালোনিয়ানদের মধ্যে। গবেষকরা বলছেন, এই নির্বাচনের ফলে খেলার গুটি আবারও কাতালানদের কোর্টে চলে গেছে। লন্ডনভিত্তিক রিসার্চ টেনেও ইন্টেলিজেন্স এর গবেষক অ্যান্টনিও বারাসাও বলেন, এই নির্বাচনের ফলে মাদ্রিদের সমস্যা আরও প্রকট হলো। বিভক্তির যে আন্দোলন তা আারও বেগবান হবে।

এদিকে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরই ইউরোপিয় কমিশন বলছে, এ নির্বাচনের ফলে তাদের অবস্থানের কোন পরিবর্তন হবে না। এর আগেও গণভোটের বিরোধীতা করেছিল ইউরোপিয় ইউনিয়ন। কমিশনের মুখপাত্র আলেক্সান্ডার্ ওয়িনটারস্টেইন এএফপিকে বলেন, কাতালোনিয়া ইস্যুতে আমাদের অবস্থানের কোন পরিবর্তন হবে না। নির্বাচনটি আঞ্চলিক নির্বাচন হওয়াতে এ বিষয়ে আমরা কোন মন্তব্য করতে রাজি নয়। এদিকে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি দেশটির সরকার প্রধান কার্লোস পুজদেমন।

উল্লেখ্য, স্পেনের জনসংখ্যার ১৬ শতাংশ কাতালোনিয়াতে বাস করছে। স্পেনের মোট রপ্তানির ২৫.৬ শতাংশ রপ্তানি করা হয় কাতালান থেকে। এছাড়া স্পেনের জিডিপির ১৯ শতাংশ আসে অঞ্চলটি থেকে। দেশটিতে বিদেশি বিনিয়োগের মোট ২০.৭ শতাংশ বিনিয়োগ করা হয়েছে ওই অঞ্চলটিতে। এতে ওই অঞ্চলের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশি। বলা হয়ে থাকে, স্পেনের প্রদেশগুলোর মধ্যে কাতালোনিয়া সবচেয়ে বিত্তশালী নগরী।

 

সূত্র: বিবিসি

এমজে/এমআর


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি