ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০১ মে ২০২৫

কোয়ারেন্টাইনে বাসায় কীভাবে কাটাবেন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৪২, ২৯ মার্চ ২০২০ | আপডেট: ১৪:৩৭, ৩০ মার্চ ২০২০

Ekushey Television Ltd.

পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই এখন করোনা ভাইরাস নয়, করোনা-আতঙ্কে আক্রান্ত। বিশ্বের জনসংখ্যা এখন ৭৫৩ কোটি। আর নিবন্ধটি যখন লেখা হচ্ছে (২৯ মার্চ, দুপুরে) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ। তার মানে পৃথিবীর জনসংখ্যার মাত্র ০.০০৩৩% মানুষ এ রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। যাদের মধ্যে প্রায় দেড় লাখ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। অসুস্থরা দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠবেন। 

কারণ পরিসংখ্যান বলছে, এ রোগটিতে আক্রান্তের ৯৫ ভাগই মাইল্ড বা ‘মৃদু’ আক্রমণের কবলে পড়েন। লক্ষণ প্রকাশের দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে তারা সুস্থ হয়ে ওঠেন বলে জানাচ্ছে ওয়াল্ডওমিটার। একই সঙ্গে সাইকোলজি ডুডে বলছে, আর লক্ষণ বলতেও জ্বর, কাশি, গলাব্যাথা আর সামান্য দুর্বলবোধ। মাত্র ৫% মানুষ সংকটাবস্থায় যান। তারা সুস্থ হতে পারেন, আবার ভিন্ন কিছুও হতে পারে। কিন্তু পৃথিবীর জনসংখ্যার তুলনায় হারটা কত? মাত্র ০.০০০০২৫%!

আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সূত্র মতে, পৃথিবীতে প্রতিবছর সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায় ১২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ। হৃদরোগে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতিবছর মারা যায় ৮ লাখ মানুষ। আর প্রতি ৪০ সেকেন্ডে পৃথিবীর কোথাও না কোথাও একজন মানুষ আত্মহত্যা করে। 

করোনা মারাত্মক প্রাণঘাতী কিছু নয়। তবে খুবই সংক্রামক। আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে খুব সহজেই এটি অন্যদের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। সাথে সব সময় এক বা একাধিক রুমাল রাখবেন যেন হাঁচি-কাশি আসার সাথে সাথে এটা ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিত ঘন ঘন হাত ধৌত করবেন। পরীক্ষায় দেখা গেছে ভালোভাবে হাত ধুলে এই জীবাণু সংক্রমিত হওয়ার অনেকটাই কমে যায়। হ্যান্ডওয়াশ বা স্যানিটাইজার না হলেও চলবে। বেশি ক্ষারযুক্ত সাবান (বাংলা সাবান) বরং আরও ভালো। কাউকে হাঁচি-কাশি দিতে দেখলে তার থেকে দু-তিনফিট দূরত্বে চলে যান। আপনি অসুস্থ না হলে মাস্ক ব্যবহার না করলেও চলে। কিন্তু যদি করেন তবে সেটা যথাযথ নিয়ম মেনেই করতে হবে। জ্বর বা এজাতীয় লক্ষণ দেখা দিলে কোয়ারেন্টিনে থাকুন। এ সময় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও ইতিবাচকতার শক্তি বাড়ানোর জন্য নিয়মিতভাবে মেডিটেশন করুন। 

কোয়ারেন্টাইনের সময় যেভাবে কাজে লাগাতে পারেন: 

এখন আপনি হোম কোয়ারেন্টাইনের সময় অপচয় করবেন, ঘরে বিরক্তিকর জীবন কাটাবেন নাকি সময়কে কাজে লাগিয়ে উপভোগ করবেন বিষয়টি আপনার উপরে নির্ভর করে। এ লকডাউন কর্মব্যস্ত সব শ্রেণির মানুষের জন্য ‘সুবর্ণ সুযোগ’ এনে দিয়েছে। আপনি কিভাবে সময় ব্যয় করবেন সেটাই কথা।

রাজধানীর মানুষ কর্মজীবী। চাকরি, ব্যবসা এবং নানান পেশাগত কারণে যারা সন্তানদের সময় দিতে পারেন না, তারা এখন সন্তানদের কোয়ালিটি সময় দিতে পারেন। নিজে বই পড়তে ও লিখতে পারেন। সামষ্টিকভাবে বাসায় থাকার নির্দেশনা থাকলে সময়টাকে আপনি চমৎকারভাবে কাজে লাগাতে পারেন। 

ভোরে ঘুম ভাঙলেই বলুন শোকর আলহামদুলিল্লাহ বা হরি ওম বা প্রভু তোমাকে ধন্যবাদ। মুসলমানরা নামাজের পর ৪০ বার দোয়া ইউনুস ও বেশ কয়েকবার দরুদ পড়ুন। সনাতনধর্মীরা ৪০ বার গায়ত্রী মন্ত্র, বৌদ্ধরা বুদ্ধমন্ত্র ও খ্রিষ্টানরা তাদের ধর্মানুসারে যে কোনো প্রার্থনা করতে পারেন। এরপর কিছুক্ষণ পবিত্র আল কোরআন বাংলা মর্মবাণী পাঠ করুন। 

দিনের শুরু, নাশতা ও অন্যান্য দিয়ে দিনটি শুরু করুন মানুষের কল্যাণে কিছু দানের মাধ্যমে। হালকা কিছু খেয়ে (কাঁচা ছোলা অথবা দুই/তিনটা খেজুর) দমর্চচা ও কোয়ান্টাম ইয়োগা করুন। অন্যদের অসুবিধা সৃষ্টি না করে ঘরের মধ্যেই হাঁটুন বা দৌড়ান। পরিবারের সবাই মিলে একসাথে নাস্তা করুন। নাস্তায় এক কোষ কাঁচা রসুন ও ২৫/৩০টি কালোজিরার দানা খান। সুযোগ থাকলে একগ্লাস লেবুপানিতে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।

পরিবারের সদস্যদের কোয়ালিটি সময় দিন। শিশুদের সাথে খেলাধুলা, গঠনমূলক আলোচনা, শিক্ষামূলক গল্প কবিতা গান ইত্যাদির ভেতর দিয়ে একাত্ম হোন। সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা করুন। স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে মনোযোগী সময় দিন। অতীতের নেতিবাচক বিষয় নিয়ে আলোচনা সম্পূর্ণ বর্জন করুন। পরিবারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা (মনছবি) নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা করুন। বাবা-মাসহ বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যদের সুখ-দুঃখের কথা শুনুন। নিজের পরিবারের বাইরেও আত্মীয় স্বজনদের খোঁজ খবর রাখুন নিয়মিত। পরিবারে বই পড়া ও বই নিয়ে পর্যালোচনা করার সংস্কৃতি সৃষ্টি করতে পারেন। এক্ষেত্রে শুদ্ধাচার বইটি সবাই মিলে পড়া অত্যন্ত ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

কর্মজীবী যারা হোম-অফিস করছেন তারা আন্তরিকতার সাথে অফিসের কাজটুকু করুন। অন্যরা সুযোগ থাকলে পারিবারিক কাজ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় অংশ নিন। আপনার এই ছোট্ট সহযোগিতা পারিবারিক একাত্মতা আরো বাড়িয়ে দেবে। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত পড়ালেখা অব্যাহত রাখুন।
 

কী খাবেন: 
খাবারের ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করুন। প্রক্রিয়াজাত খাবারের বদলে ফলমূল, শাক সবজি বেশি খান। পর্যাপ্ত পানি পান করুন। -চর্বিদার ও গুরুপাক খাবার যত কম খান তত ভালো। -প্রতিবেলায় খাবার পরিবারের সবাই একসাথে গ্রহণ করুন। দিনভর টিভি, ইন্টারনেট, সামজিক মাধ্যমের সংস্পর্শে থাকা এড়িয়ে চলুন। সারাদিনে দুই থেকে তিনবার শুধু সুনির্দিষ্ট সময়েই এগুলো দেখুন বা ব্যবহার করুন। গুজবে কান না দেয়া, আতঙ্কিত না হয়ে বরং অন্যদের মাঝে সাহস সঞ্চার করুন। বালা মুসিবত থেকে বেঁচে থাকার জন্য গীবত, পরচর্চা, দুর্ব্যবহার, নেতিবাচক আলোচনা, নেতিবাচক ছবি, সংবাদ বা ভিডিও দেখা ও শেয়ার করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন। অধীনস্থকে ছুটি দিলে অগ্রিম বেতন দিয়ে দিন। আপনার সাথে সম্পর্কিত অধীনস্থদের (গৃহকর্মী, ড্রাইভার, মালী প্রমুখ) প্রতি মানবিক আচরণ বজায় রাখুন। তাদের দুঃসময়ে যথাসম্ভব সহযোগিতা করুন। ছুটি দিলে অন্তত এক মাসের বেতন অগ্রিম দিয়ে দিন। পরিবার বা আত্মীয়দের মধ্যে কেউ আক্রান্ত হলে তাকে ঘৃণা করবেন না বা তাদের দূরে ঠেলে দেবেন না। স্বার্থপরের মতো দায়িত্বে অবহেলা করবেন না। যথাযথ চিকিৎসার উদ্যোগ নিন।

চীন তার শেষ করোনা-হাসপাতাল বন্ধ করে দিয়েছে, কারণ আলাদা হাসপাতাল চালাবার মতো পর্যাপ্ত রোগী আর সেখানে নেই।  এক সপ্তাহে উহানে আর কোনো নতুন রোগী পাওয়া যায়নি। বলা হয়, করোনাভাইরাসের ঘাতক প্রভাব নাকি বয়স্কদের ওপর বেশি। কিন্তু বিশ্বব্যাপী বয়স্ক অনেকেরই খবর পাওয়া যাচ্ছে, যারা করোনাক্রান্ত হওয়ার পরও সেরে উঠেছেন। তাদেরই একজন ছিলেন চীনের সবচেয়ে বর্ষীয়ান করোনারোগী উহানের ১০৩ বছর বয়সী এক নারী। জ্বর এবং হার্টের সমস্যা নিয়ে ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে লিশানশান হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এ নারী। কিন্তু ১ মার্চ সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান তিনি।

এমএস/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি