ঢাকা, বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪

ক্যাম্পাসিয়ানদের কোয়ারেন্টাইন জীবন

কামরুল হাসান শাকিম

প্রকাশিত : ১৩:০২, ৮ মে ২০২০

করোনা ভাইরাসের কারনে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। সংক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ছুটি বর্ধিত করা হয়েছে আগামী ৩০ মে পর্যন্ত। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা পেয়েছেন অফুরন্ত সময়। 

দেখা হচ্ছেনা ক্যাম্পাসের পরিচিত মুখগুলোর সঙ্গে, আড্ডা হচ্ছেনা ক্যাম্পাসের বিশেষ জায়গায়। সময় কাটছে অঘোষিত হোম কোয়ারেন্টাইনে। এক অন্যরকম অবসর সময় কাটাচ্ছে সবাই। কীভাবে কাটছে এসময় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সময়, গল্পে আড্ডায় নাকি বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থেকে এসব নিয়ে লিখেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক কামরুল হাসান শাকিম।

শারমিন তাসনিম, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম
করোনা নিয়ে বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হবে খুব আতঙ্কে আছি। চিন্তা হয় আব্বু-আম্মুর জন্য। আব্বু অন্য দেশে আছেন। এই করোনার বিপদ সময়ে ওনার জন্য সবাই চিন্তিত। চিন্তা হয় আমার ডাক্তার ভাই এর জন্য, করোনাকালীন সময়ে ডাক্তাররা অনেক ঝুঁকিতে আছেন। সেজন্য ভাইয়ার জন্যেও চিন্তায় থাকি সবসময়। 

থমকে গেছে পৃথিবী, আটকে গেছে ক্যারিয়ার গড়ার লড়াই। খুব ইচ্ছে হয় বের হয়ে সবুজের প্রকৃতির সমারোহে মুক্তভাবে বাতাস নিতে। প্রার্থনা করি মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে যেন পৃথিবী সুস্থ হয়ে আমরা সবাই আগের মত হেসে খেলে চলতে পারি। রান্না করা আমার অন্যতম শখ। আমি এখন রান্নার কাজেই সময় বেশি ব্যয় করছি। প্রত্যেকদিন ভিন্ন ভিন্ন রেসিপি তৈরি করছি। এছাড়া ভাতিজা-ভাতিজিকে নিয়ে সময় কাটাচ্ছি। 

সঞ্জীব দেব, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
করোনা কাল যাচ্ছে উৎকন্ঠার মধ্য দিয়ে। প্রতিদিনি অনলাইন খবরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনাক্রান্তদের খবর শুনি আর ভাবি পৃথিবী কবে আরোগ্য হবে। দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার জন্য টেলিভিশন আর করোনা সংক্রান্ত খবর কম দেখি। বাড়িতে প্রতিদিনের কাজ করি, কৃষিকাজে সাহায্য করি, রান্না করি, গান গাই, বাঁশি বাজাই। নিজেকে যথাসম্ভব ব্যস্ত রাখি। সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলি। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করি।

রাজু আহমেদ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
করোনা সংকটময় অবস্থা পার করছি আতঙ্ক নিয়ে, না জানি কখন আক্রান্ত হই। শরীরে যেন ভয়াবহ ভাইরাস বাসা না বাঁধে, সেই ভয়ে নানা বিধিনিষেধ মেনে চলি। তবে ঘরবন্দি জীবনে পারিবারিক সম্পর্ক হয়েছে দৃঢ়। দিনের বেশিরভাগ সময় কাটছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, ঘুমিয়ে কিংবা পরিবারের সদস্যদের সাথে আড্ডা দিয়ে। অর্থনৈতিক অবস্থা স্থবির হওয়ার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হতাশা, বিষন্নতা ও অনিশ্চয়তা। করোনাকালে আমরা পরিচিত হয়েছি নতুন এক মানবিক সমাজের সাথে। করোনা চলে যাক, মানবিক সমাজ বেঁচে থাক।

আয়েশা সুমি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
কভিড ১৯ বা করোনা ভাইরাসের সময়কালে আমাদের প্রত্যেকের জীবনে কিছু কিছু পরিবর্তন এসেছে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে আমাদের সবারই দিন কাটছে আতঙ্কে, কি জানি ঘটে যায় অনাগত ভবিষ্যতের দিনগুলোতে। আমি নিজে আমার ব্যক্তিগত জীবনে যথাযথ নিরাপত্তা বিধি মেনে চলে অফিসে যাচ্ছি কাজ করছি বাসায় এসে আবার পরিবার পরিজনের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে আরও সচেতন থাকছি। 

বলছিলাম করোনার প্রভাবে আমাদের জীবনে কিছু পরিবর্তন এসেছে হ্যাঁ আমি এই পরিবর্তন এর ইতিবাচক দিকের কিছু কথা শেয়ার করছি সেটা হল আগে একটা সময় অনেক বই পড়ার নেশা ছিল মাঝে চাকরি এবং আরও কিছু ব্যস্ততার জন্য বই পড়ার সময়টুকু পেতাম না কিন্তু এখন সীমিত আকারে অফিস করে বাসায় এসে বই পড়ার সময় পাচ্ছি, এটা আমার এই করোনার সময়েও অনেক ভালো লাগার একটা ব্যাপার। 

রান্না বান্না কখনো সেরকমভাবে করা হয়নি কিন্তু এখন মাকেও সাহায্য করছি রান্নার কাজে। আবার এই ফাঁকে নিজেও শিখে নিচ্ছি। আর একটা কাজ করে খুব ভালো সময় অতিক্রম করছি সেটা হচ্ছে, মা-বাবা আর আমি আমরা তিনজনে মিলে বাড়ির 
পাশে সবজির বাগান করেছি। প্রতিদিন এগুলোর যত্ন নেই পানি দেই বীজ বপন করি এভাবে যেমন সময় কেটে যাচ্ছে, আবার নিজের হাতের করা বাগানের গাছের বেড়ে উঠা দেখে মানসিক প্রশান্তিও পাচ্ছি। 

এভাবে প্রতিদিন বাসার টুকটাক কাজ করে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কথা বলে ভালোই সময় যাচ্ছে। এখন আবার পবিত্র রমজান মাসে ইবাদত বন্দেগির অতিরিক্ত সময় পাচ্ছি এটাও অনেক বেশি মানসিক প্রশান্তি দিচ্ছে। তবে অসহায় দরিদ্র মানুষের কথা ভেবেও খারাপ লাগে।

আবু জাহির, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
কোভিড-১৯ নামক একটিমাত্র ভাইরাসের কাছে আজ সমগ্র পৃথিবী অসহায়। প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও এর ভয়াল থাবা থেকে রেহাই পায়নি। বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন গড়ছে নতুন রেকর্ড। চোখের সামনে হারিয়ে যাচ্ছে প্রিয় মুখগুলো। লকডাউনের কারণে বাসায় যেতে পারিনি। প্রতিটা মুহুর্ত কাটে চরম উৎকণ্ঠায় কখন জানি কী শুনতে হয়। 
প্রিয়জনদের মুখ দেখা হয়না অনেকদিন হল। সাবধানতার জন্য পরিবারের সবার কথা চিন্তা করে এখন বাসায় যাওয়ার চেষ্টা করছিনা। কারণ আমি বাসায় যাওয়ার সময় যদি করোনা ভাইরাসের সংস্পর্শে আসি তবে সবাই আক্রান্ত হবে। সেজন্য কষ্ট হলেও মেসের মধ্যে রয়ে গেছি।

আকুল মিয়া, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
আমরা সবাই কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি, হচ্ছি বা হতে যাচ্ছি। এর চেয়েও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে কাটানো মধ্যবিত্তের মধ্যে আমি একজন। সবাই জীবন বাঁচাতে ছুটছে, আমিও ছুটছি। যতদিন ঘরে বেঁচে থাকার সামগ্রী ছিলো ততদিন কুঁড়ে ঘরটা ও স্বর্গ মনে হচ্ছিলো, কিন্তু উপার্জন না থাকায় এখন এটা বুঝতে পারছি যে আমার মত হাজারো মানুষ কত কষ্টে দিনপাত করছে। 

এখনও এই সুন্দর পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সৃষ্টিকর্তার নিকট লাখো শুকরিয়া। করোনা পাল্টে দিয়েছে সবার স্বাভাবিক  জীবনের বাস্তবতা। মানুষ ভাবতো যার যতো টাকা সেই ততো সুখী। কিন্তু মানুষের কোটি কোটি টাকাও এ রোগের কাছে মূল্যহীন।

নুরুল আমিন মনির, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
কোভিড -১৯ এ সারাদেশ যখন লকডাউনে সে সাথে কোথাও যাওয়া না হলেও সারাদিন দিব্যি অবসর সময় কাটছে কার্ড খেলে ও অনলাইনে নিউজ পড়ে। তাছাড়া দাবা, লুডু ও কেরাম খেলছি। মাঝে মাঝে এলাকাবাসীর মধ্যে করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনতামুলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও ব্যয় করছি অনেকটা সময়। সবাই নিজ ঘরে সচেতনতার সাথে অবস্থান করুন। নিজে সুস্থ থাকুন, পরিবারকে সুস্থ রাখুন।

আবু সাঈদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
আমরা কখনওই কল্পনা করতে পারিনি আমাদের দেশ এই ভাইরাসে সংক্রমিত হবে, যেহেতু চলে এসছে এর মোকাবিলার জন্য সচেতনতা খুবই জরুরি। করোনার জন্য আমরা বাসা থেকে বের হতে পারছি না, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে। দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চল লকডাউন ঘোষণা করছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে আমি যেনো কোথায় বন্দি হয়ে আছি। যদিও বন্ধি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি কিন্তু বাসায় পরিবারের সবার সাথে সময় পার করতে পারছি।

হয়তো এই স্টুডেন্ট লাইফে বা অন্য কোনো জীবনে এরকমভাবে পরিবারের সবার সাথে সময় কাটাতে পারবো না। এই সুযোগে যেমন পরিবারকে সময় দিতে পেরেছি, অন্যদিকে পড়াশুনার মারাত্মকভাবে ক্ষতি করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বন্ধু-বান্ধব আছে যাদের সাথে প্রতিদিন জমিয়ে আড্ডা হতো, এখন আর আগের মতো হচ্ছে না। মিস করছি প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়কে, হয়তো সুদিন আমরা ফিরে পাবো সেই প্রত্যাশায় প্রহর কাটছে। 

এআই//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি