গাজা নিয়ে পোস্টের জেরে চাকরিচ্যুত সাংবাদিককে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ
প্রকাশিত : ১৬:৩৩, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

গাজায় ইসরাইলি হামলার ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেওয়ার কারণে চাকরিচ্যুত অস্ট্রেলিয়ার এক সাংবাদিককে মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে দেশটির আদালত।
আজ বুধবার অস্ট্রেলিয়ার সরকারি সম্প্রচার মাধ্যম ‘এবিসি’কে এই নির্দেশ দেন আদালত। সিডনি থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ তথ্য জানিয়েছে।
সাংবাদিক অ্যানটুনেট লাটুফ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এবিসি’র সঙ্গে পাঁচ দিনের একটি চুক্তিভিত্তিক কাজে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর তিন দিনের মাথায় তাকে বরখাস্ত করা হলে তিনি আইনি পদক্ষেপ নেন।
লাটুফের বরখাস্ত হওয়ার কারণ ছিল গাজা যুদ্ধ নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)-এর একটি ভিডিও প্রতিবেদন ইনস্টাগ্রামে পুনরায় পোস্ট করা। ভিডিওর সঙ্গে তিনি লিখেছিলেন— ‘এইচআরডব্লিউ বলছে, তীব্র ক্ষুধাকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’
এর আগে ফেডারেল কোর্টের বিচারক ড্যারিল রাংগিয়াহ বলেছিলেন, ‘গাজায় ইসরাইলের সামরিক অভিযানের বিরোধিতা করে রাজনৈতিক মতামত পোষণ করার’ কারণেই এবিসি লাটুফের চুক্তি বাতিল করে, যা কর্মসংস্থান আইনের লঙ্ঘন।
রাংগিয়াহ আরও বলেন, এবিসি’র এই লঙ্ঘন লাটুফের জন্য ‘খুবই খারাপ পরিণতি’ বয়ে নিয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ মানুষের কাছে চাকরি শুধু আয়ের উৎস নয় বরং এটি তাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন, পরিচয় ও আত্ম-সম্মানবোধের সঙ্গেও গভীরভাবে জড়িত।’
অনেক অস্ট্রেলীয়র কাছে নিরপেক্ষ সংবাদের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এবিসি। আদালত এবিসিকে নির্দেশ দিয়েছে, ওই সাংবাদিককে ৯৮ হাজার ৯০০ ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার। এর আগে চলতি বছর ৪৬ হাজার ১০০ ডলার দেওয়ার রায় হয়েছিল।
রাংগিয়াহ বলেন, এই পরিমাণ অর্থ লাটুফের ওপর হওয়া ক্ষতির জন্য ‘পর্যাপ্ত’। পুরো অর্থ আগামী ২৮ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।
লাটুফ বলেন, এবিসি ‘আমার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে ২০ লাখ ডলারেরও বেশি খরচ করে ফেলেছে।’
মঙ্গলবার তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, ‘জরিমানার পরিমাণ যাই হোক, আমার কাছে টাকাটা কখনোই মুখ্য ছিল না, এটা সবসময় জবাবদিহি এবং আমাদের সরকারি সম্প্রচার সংস্থা যে তথ্য দেয় তার সততা নিয়েছিল।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমি আশা করি এবিসি এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা ও সততা ফিরিয়ে আনবে, কারণ আমাদের গণতন্ত্র একটি শক্তিশালী চতুর্থ স্তম্ভের (গণমাধ্যম) ওপর নির্ভরশীল।’
এবিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিউ মার্কস বলেন, সম্প্রচার সংস্থাটি ‘আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে ভাবনা অব্যাহত রাখবে।’
এবিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিউ মার্কস বলেন, আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা এখনো ভাবছেন। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি এবং এ থেকে শিক্ষা ও এর প্রভাব নিয়ে ভেবেছি। আমাদের আরো যত্নশীল হতে হবে।’
এদিকে, গাজায় ভয়াবহ মানবিক সংকটের কারণে ইসরাইল আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়েছে। গত মাসে জাতিসংঘ-সমর্থিত একটি সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে গাজার কিছু অংশে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরাইলে অতর্কিত আক্রমণ করে। এরপর ইসরাইল পাল্টা হামলা শুরু করে, যা প্রায় দুই বছর ধরে চলমান। গত ১৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের তদন্তকারীরা অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা’ সংঘটনের অভিযোগ আনেন।
এএইচ
আরও পড়ুন