ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪

গ্রেফতার এড়াতে যা করেছিলেন ওসি মোয়াজ্জেম

প্রকাশিত : ১০:০৩, ১৭ জুন ২০১৯ | আপডেট: ১৭:৩৫, ১৭ জুন ২০১৯

অবশেষে ইদুর-বিড়াল খেলার পর গ্রেফতার হলেন ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন। তাকে গ্রেফতারে পুলিশকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের এক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির ২০ দিন পর গতকাল রোববার মোয়াজ্জেমকে গ্রেফতার করে শাহবাগ থানা পুলিশ। মোয়াজ্জেম জামিনের জন্য হাইকোর্টের যাচ্ছিলেন বলে জানা যায়।

পুলিশ সুত্রে জানা যায়, গ্রেফতার এড়াতে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করতে মুখভর্তি দাড়ি ও গোঁফ নিয়ে হাইকোর্ট যান ওসি মোয়াজ্জেম। গেয়েন্দাদের কাছে তার হাইকোর্টর আসার সংবাদ আগাম থাকলেও মুখে দাড়ি ও গোফ থাকার কারণে তাকে চিনতে পারেননি আদালতে থাকা গোয়েন্দারা।

ওসি মোয়াজ্জেম শনিবার রাতে তাঁর এক আত্মীয়ের বাসায় ছিলেন। গতকাল রোববার জামিনের জন্য মোয়াজ্জেম এসেছিলেন আদালতে। পরে শুনানির তারিখ পিছিয়ে সোমবার দিলে পুলিশ মোয়াজ্জেমকে গ্রেফতার করে বিকাল ৪টায়। মোয়াজ্জেম হাইকোর্টে এসেছিলেন সকাল সাড়ে ১০টায়।

জানা যায়, মোয়াজ্জেমের যে ছবিটি মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবাই চেনেন সেই ক্লিন সেইভের চেহারায় মোয়াজ্জেমকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। গ্রেফতারের সময় মোয়াজ্জেমের মুখভর্তি দাড়ি ও গোঁফ ছিল। গ্রেফতার হওয়া মোয়াজ্জেমের সঙ্গে সেই চেহারার মিল খুঁজতে বেগ পেতে হয়েছে ছিল পুলিশ সদস্যদের। গ্রেফতারের পর তাকে শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়।

তবে পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘শাহবাগ থানাধীন কদম ফোয়ারার সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাদের কাছে গোপন তথ্য ছিল তিনি সেখানে থাকতে পারেন। সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, মোয়াজ্জেমকে গ্রেফতারের বিষয়টি সোনাগাজী থানাকে জানানো হয়েছে। যেহেতু ওই থানায় গ্রেফতারের পরোয়ানা আছে, সে জন্য তাদের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হবে। এরপর তারা ঠিক করবেন কোন আদালতে ওঠাবেন।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ মার্চ ফেনীর সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা তার অফিসকক্ষে ডেকে নিয়ে মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানি করে। রাফির মা শিরীন আক্তার মামলা করলে পুলিশ অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠান।

মামলা তুলে না নেয়ায় ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার একটি ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে রাফির গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হলে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ যায়। এ অবস্থায় ১০ এপ্রিল রাতে হাসপাতালে মারা যান রাফি। এর আগে ৮ এপ্রিল তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান অধ্যক্ষ সিরাজকে প্রধান আসামি করে আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও ৪ থেকে ৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। রাফির মৃত্যুর পর তা হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়।

হত্যাকাণ্ডের দিন দশেক আগে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ জানাতে সোনাগাজী থানায় যান নুসরাত। থানার তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন সেই সময় নুসরাতকে আপত্তিকর প্রশ্ন করে বিব্রত করেন এবং তা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।

ওই ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলে আদালতের নির্দেশে সেটি তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

গত ৮ মে মোয়াজ্জেমকে সাময়িক বরখাস্ত করে রংপুর রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে তিনি রংপুর রেঞ্জ অফিসে যোগ দেন। গত ক’দিন থেকে তার গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে ফেনী ও রংপুর পুলিশের ঠেলাঠেলি চলছিল। ঈদের আগে সেখান থেকে নিরুদ্দেশ হন ওসি মোয়াজ্জেম।

পিবিআই গত ২৭ মে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিলে ওই দিনই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। পরোয়ানা জারির দুদিন পর মোয়াজ্জেম হোসেন হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাটি জারি করেন।

আগামী ১৭ জুন পরোয়ানা তামিল-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি