ঢাকা, মঙ্গলবার   ০১ জুলাই ২০২৫

চিকিৎসার ১৫ বছর পরও ফিরে আসতে পারে স্তন ক্যান্সার?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৪৯, ১১ নভেম্বর ২০১৭

Ekushey Television Ltd.

সফল চিকিৎসার ১৫ বছর পরও সুপ্ত অবস্থায় থাকা স্তন ক্যান্সার আবার ফিরে  আসতে পারে । একটি গবেষণায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

যেসব টিউমার এবং ক্যান্সার লসিকাগ্রন্থিতে ছড়িয়ে গেছে, সে ক্ষেত্রে তা ফিরে আসার সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ ঝুঁকি রয়েছে।

গবেষকরা নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে লিখেছেন, "হরমোন থেরাপিসহ বিস্তৃত  চিকিৎসার মাধ্যমে এই পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি হ্রাস করা যেতে পারে।"

বিজ্ঞানীরা ২০ বছর ধরে ৬৩,০০০ নারীর উপর গবেষণা চালিয়েছেন। সকলেই প্রচলিত ধরণের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত।

এ ধরণটি ইস্ট্রোজেন নামক স্ত্রী হরমোনের কারণে প্রসারিত হয় যেটি ক্যান্সারকোষগুলোর বৃদ্ধি এবং বিভাজন ঘটাতে পারে।

প্রত্যেক রোগীকে ট্যামোক্সিফেন বা অ্যারোমাটিস নিরোধকের মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া হয় যা ইস্ট্রোজেনের প্রভাবকে বাধা দেয় অথবা সেই হরমনের সরবরাহকে বন্ধ করে দেয়।

একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক নারীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে পাঁচবছর চিকিৎসার পর তাদের ক্যান্সার চলে গিয়েছিল, পরবর্তী ১৫ বছরে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে গেছে, কারও ক্ষেত্রে রোগ ধরার পড়ার ২০ বছর পরেও।

 

গবেষণায় বলা হচ্ছে, যেসব নারীর আসলেই বড় আকারের টিউমার এবং ক্যান্সার চার বা তার বেশি সংখ্যক লসিকাগ্রন্থিতে ছড়িয়ে গেছে, ১৫ বছর পরে আবার ক্যান্সার ফিরে আসার ক্ষেত্রে তারা সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

যেসব নারীরা কম, নিম্ন-গ্রেডের ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং তা লসিকাগ্রন্থিতে ছড়ায়নি, তারা এ সময়ের মধ্যে ক্যান্সার ছড়িয়ে পরার ক্ষেত্রে অনেক কম মাত্র ১০ শতাংশ ঝুঁকিতে রয়েছেন।

ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের একজন প্রধান গবেষক ড. হংচাও প্যান বলেন, "এটা অবাক হওয়ার মত যে স্তন ক্যান্সার এতো দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সুপ্ত থাকতে পারে এবং অনেক বছর পরে তা আবার ছড়িয়ে যায়। এই ঝুঁকিটি বছরের পর বছর জিইয়ে থাকে এবং মূল ক্যান্সারটির আকার এবং এটি লসিকাগ্রন্থিতে ছড়িয়ে পড়েছে কিনা সেটির সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত।"

ডাক্তাররা অনেক আগে থেকেই জানেন যে পাঁচ বছর ধরে রোগীকে ট্যামোক্সিফেন দিলে তা চিকিৎসা বন্ধ করার পাঁচবছর পরে আবার ক্যান্সার ফিরে আসার ঝুঁকিকে এক তৃতীয়াংশ কমিয়ে দেয়।

সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হচ্ছে হরমন থেরাপি ১০ বছর বাড়ানো হলে তা স্তন ক্যান্সারে পুনঃআবির্ভাব এবং মৃত্যু প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারে।

ইস্ট্রোজেন নামক স্ত্রী হরমনের কারণে ক্যান্সারকোষগুলোর বৃদ্ধিপ্রাপ্ত এবং বিভাজিত হওয়ার জন্য উদ্দীপিত হয়।

 

অ্যারোমাটিস নিরোধক যা শুধু মেনোপোজ পরবর্তী নারীদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, তা এক্ষেত্রে অধিক কার্যকর হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

কিন্তু হরমোন চিকিৎসার কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে যেটি কিনা রোগীর জীবনমানকে প্রভাবিত করতে পারে এবং তাদের পিলগ্রহণ করাকে বন্ধ করে দিতে পারে।

এগুলোর মধ্যে রয়েছে মেনোপোসাল সিমটমস, অস্টিওপরেসিস, জয়েন্ট পেইন এবং কার্পাল টানেল সিনড্রোম।

ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে এর সিনিয়র ক্লিনিকাল অ্যাডভাইজার অধ্যাপক আর্নি পুরুশোথাম, যিনি এ গবেষণাটির পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন, তিনি বলেন, "স্তন ক্যান্সার নিরাময়ের জন্য নতুন ঔষধ ব্যবহৃত হয়েছে এবং এগুলো ট্যামোক্সিফেনের চেয়ে ভিন্নভাবে কাজ করে।"

তিনি বলেন, "কোন ক্যান্সার আবার ফিরে আসতে সক্ষম তা আরো ভালোভাবে অনুমান করা অত্যাবশ্যক"

"আমাদের আরো জানা প্রয়োজন, পাঁচ বছরের পরিবর্তে নারীদের ১০ বছরের হরমোন থেরাপি দেয়া হলে কী পার্থক্য হয়, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী এবং তা রোগীদের জীবনমানের উপর কি ধরণের প্রভাব ফেলে।"

চ্যারিটি `ব্রেস্ট ক্যানসার নাও` এর স্যালী গ্রিনবুক বলেন, "নারীদের তাদের ডাক্তারদের সাথে চিকিৎসায় কোনো পরিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করাটা অত্যাবশ্যক।"

"আমরা স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা নেয়া সকল নারীদের আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি বরং তারা যেন ক্যান্সারের পুনঃআবির্ভাব এবং মেটালিস্টিক ব্রেস্ট ক্যান্সার সম্বন্ধে সচেতন হবে এবং তাদের কোনো উদ্বেগ থাকলে তারা ব্রেস্ট কেয়ার টিমের সাথে কথা বলবে।

সূত্র: বিবিসি

এম/ডব্লিউএন


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি