ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪

চিপস আনতে মাকে ফোন দাও: তুবা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২৩:২৩, ২৫ জুলাই ২০১৯

বয়স মাত্র চার বছর। পুরো নাম তাসনিম মাহিরা তুবা হলেও সবাই তুবা নামেই ডাকে। তুবা জানে তার মা তাসলিমা বেগম চিপস আনতে নিচে গিয়েছে, একটু পরেই ফিরে আসবে। তাই খেলার ফাঁকে বলতে থাকে- ‘মাকে ফোন দাও, আমার জন্য চিপস আনবে।’ কিন্তু সে তো জানে না যে, তার মা আর ফিরে আসবে না, তার হাতে আর চিপসও তুলে দিবে না। 

কেননা গত ২০ জুলাই (শনিবার) রাজধানীর উত্তর-পূর্ব বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে সবাইকে ছেড়ে পরপারে পাড়ি দিয়েছেন তুবার মা। তাই ছয় দিন পার হয়ে গেলেও ফিরে আসছেন না মা। আর সে জন্য ছোট তুবার মেজাজও ভালো যাচ্ছে না। অল্পতেই কান্নাকাটি করছে সে। 

স্নেহময়ী মা যে আর ফিরবেন না, সেটা ছোট্ট তুবা না বুঝলেও ঠিকই বুঝে গেছে তাসলিমা বেগমের ১১ বছর বয়সী ছেলে তাহসিন আল মাহির। মা-বাবার বিচ্ছেদের পর থেকে দুই বছর মা ও বোন থেকে আলাদা থাকতে হয়েছে তাকে। প্রথমে কিছুদিন ঢাকাতে বাবার সঙ্গে থাকলেও পরে তার বাবা গ্রামের একটি স্কুলে ভর্তি করে দিলে মা ও বোনের সঙ্গে দূরত্ব আরও বাড়ে। তাইতো ছোট্ট বোনকে সেভাবে আগলেও রাখতে পারছে না সে।

গত ২২ জুলাই রোববার লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার সোনাপুর গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে তাসলিমাকে দাফন করা হয়েছে। মায়ের দাফন শেষে তাহসিন ও তুবা দুই ভাইবোন এখন মহাখালিস্থ নানির বাসায়। নানি ও মায়ের সঙ্গে এই বাড়িতেই থাকত তুবা। তবে এখন রাতে তাঁকে থাকতে হচ্ছে খালা নাজমুন নাহারের সঙ্গে। তাই তুবার কাছে বাসার পরিবেশ অপরিচিত না লাগলেও চারপাশের মানুষের আচরণ যে পাল্টে গেছে, সেটা সে বেশ বুঝতে পারছে। 

মেয়ের এভাবে মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে তিনি শয্যাশায়ী তাসলিমা বেগমের মা সবুরা খাতুন। এখন পর্যন্ত ঘটনাটি মেনে নিতে পারছেন না তিনি। শুধু বললেন, তিনি মেয়ের হত্যার বিচার চান। 

মহাখালীস্থ বাসায় তাসলিমা বেগমের মা ও বোনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাসলিমার মৃত্যুর পর তার অনুপস্থিতে তুবাকে সামলাতে খুব বেগ পেতে হচ্ছে তাদেরকে। তবে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী একমাত্র ছেলে এবং চার মেয়ের সঙ্গে কথা বলে তাসলিমা বেগমের দুই ছেলেমেয়েকে তাঁদের কাছে রাখবেন, পড়াশোনা করাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 

এদিকে আগে অল্প কিছু খরচ দেয়া তুবা-তাহসিনের বাবা তাসলিমার মৃত্যুর পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছেলেমেয়েদের নিজের কাছে নিবেন বলে জানিয়েছেন। তবে আপাতত দুই ভাই-বোন খালা ও নানির কাছেই থাকবে বলে জানা গেছে।

তাসলিমা বেগমের বড় বোন জয়নব বেগম বারবার বলছিলেন, এটা কেমন কথা? একজন মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলল। মেয়েকে স্কুলে ভর্তির খোঁজখবর নিয়ে বের হলো, আর ঘরে ফিরল না।

এদিকে, তাসলিমা বেগমের মৃত্যুর পর তাঁর ভাগনে সৈয়দ নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় হত্যা মামলা করেন। সে মামলায় তাসলিমা বেগম হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিসহ এখন পর্যন্ত মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

এনএস/এসি

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি