ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ আগস্ট ২০২৫

‘জুলাইয়ের রাজনৈতিক রূপান্তর বিচার ব্যবস্থায় গভীর প্রভাব ফেলেছে’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২৫ | আপডেট: ২৩:৪২, ২৫ আগস্ট ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোতে যে প্রবল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, সেই পরিবর্তন আমাদের ন্যায়বিচার প্রদানের অগ্রাধিকার ও সেটির পদ্ধতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। 

তিনি আরও বলেন, জুলাইয়ের রাজনৈতিক রূপান্তর বিচার ব্যবস্থার ওপরও গভীর প্রভাব ফেলেছে।

সোমবার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘‘ন্যাশনাল কনফারেন্স অন এডিআর: রোল অব ডিস্ট্রিক্ট লিগ্যাল এইড কমিটি (ডিএলএসিএস) ইন ইমপ্লিমেন্টিং নিউ লেজিসলেশন’’ শীর্ষক জাতীয় কনফারেন্সে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি) এবং ন্যাশনাল লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস অরগানাইজেশনের (এএলএএসও) যৌথ উদ্যোগে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি তার বক্তব্যে বলেন, ন্যায়বিচারকে জনগণকেন্দ্রিক করতে হলে আইনগত সহায়তা ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এইডিআর) বিচারব্যবস্থার মূল কেন্দ্রে থাকতে হবে। প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের সময় ধারণা করা হয়েছিল— প্রধান বিচারপতির মূল দায়িত্ব হবে আইনের সূক্ষ্ম ব্যাখ্যা প্রদান ও প্রক্রিয়াগত জটিলতায় মনোযোগী হওয়া। কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোয় যে প্রবল পরিবর্তন নিয়ে আসে, সে পরিবর্তন আমাদের ন্যায়বিচার প্রদানের অগ্রাধিকার ও সেটির পদ্ধতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। শুরু থেকেই স্পষ্ট হয়েছিল— এ রাজনৈতিক রূপান্তর বিচার ব্যবস্থার ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে।

তিনি বলেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের রাজনৈতিক রূপান্তর বিচার ব্যবস্থার ওপরও গভীর প্রভাব ফেলেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত এক বছরে আইনগত সহায়তা খাতে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আনা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধান বিচারপতি উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের আগস্টের উত্তাল সময়ে বিচার ব্যবস্থার সংস্কারে প্রথম সংস্কার পদক্ষেপ এসেছিল আইনগত সহায়তা (লিগ্যাল এইড) খাতে। কেবল অর্থনৈতিক সক্ষমতার ভিত্তিতে নয়, বরং বাস্তব পরিস্থিতিগত অক্ষমতার কারণেও যেন কেউ আইনজীবী ছাড়া আদালতে হাজির না হন, তা নিশ্চিত করতে প্রচলিত ‘অর্থনৈতিক সামর্থ্য পরীক্ষা’র পাশাপাশি চালু করা হয়েছে ‘সক্ষমতা পরীক্ষা’।

তিনি আরও বলেন, আইনগত সহায়তা বিচার প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি পুলিশের তদন্ত, প্রসিকিউশন সার্ভিস, সরকারি কৌঁসুলি এবং আদালতের সক্ষমতার মতো অন্যান্য উপাদানের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত।

তিনি উল্লেখ করেন, পেশাদার প্রসিকিউশন সার্ভিস গঠনের মাধ্যমে ইতোমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। জেলা আইনগত সহায়তা কমিটিগুলোকে শক্তিশালীকরণ, এডিআর কার্যক্রম সম্প্রসারণ, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সেবা নিশ্চিতকরণ এবং বিচারক ও আইনজীবীদের জন্য মধ্যস্থতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এ উদ্যোগে জেআইসিএ ও জিআইজেড -এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতাও পাওয়া যাচ্ছে।

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ছাত্র আন্দোলন আমাদের শিখিয়েছে— বৈধতা আসে আস্থা থেকে। আর বিচার বিভাগ আস্থা অর্জন করতে পারবে কেবল তখনই, যখন এটি আরও স্বাধীন, দক্ষ ও মানবিক হবে। 

তিনি বলেন, এখানে স্বাধীনতা মানে প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বায়ত্তশাসন, দক্ষতা মানে মামলা জট কমাতে আধুনিক প্রক্রিয়া ও এডিআর-এর ব্যবহার এবং মানবিকতা মানে রূপান্তরমূলক আইনগত সহায়তা।

তিনি বলেন, বিচার বিভাগ, আইনজীবী সমাজ ও নাগরিক সমাজ একত্রে কাজ করলে একটি জনগণকেন্দ্রিক বিচারব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এ জাতীয় সম্মেলন হবে কোনও সমাপ্তি নয় বরং এক নতুন আন্দোলনের সূচনা, যেখানে এডিআর ও আইনগত সহায়তা বিচারব্যবস্থার কেন্দ্রে স্থান পাবে এবং সংবিধানের অঙ্গীকার ‘সব নাগরিক আইনের সমান সুরক্ষা পাবেন’ কথাটি বাস্তবে রূপ নেবে।

সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার (এনএলএএসও) এর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ আজাদ সুবহানী (জেলা জাজ)। এতে সভাপতিত্ব করেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা, বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, ইউএনডিপি-এর রেসিডেন্সিয়াল রিপ্রেজেনটেটিভ স্টিফান লিলার, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, আইন ও বিচার বিভাগীয় সচিব শেখ আবু তাহের, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমদ ভূঞা প্রমুখ।

এছাড়া, কনফারেন্সটিতে ৬৪ জন জেলা জজ যারা একইসঙ্গে জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান, ৬৪ জন চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ৮ জন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, ৮ জন মহানগর দায়রা জজ, ৬৪টি জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য, আইন মন্ত্রণালয়, এনএসলএএসও, ইউএনডিপি এবং সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিসহ প্রায় ৩০০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন।

এসএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি