ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪

ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না শার্শায়

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি :

প্রকাশিত : ২৩:০৪, ২৬ জুন ২০২০

যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানা ও শার্শা উপজেলার নাভারনে নয়টি গ্রাম রেড জোনের আওতায় এসেছে। করোনা সংক্রমণে ঝুঁকিপূর্ণ বাজার থেকে মানুষের ঘরে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষে মাইকিং করা হচ্ছে। জরিমানা করা হচ্ছে তবুও মানুষকে ঘরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। সকাল হতে না হতে বাজারে মানুষের সমাগম বাড়ছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে মানুষের সংখ্যা বাড়ছে কয়েকগুন। যেন কেনা কাটা শেষ হচ্ছে না।এক জসের গা ঘেষে আরেকজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাজার করছে। বেনাপোল বাজারের চুড়িপট্রির মুখে যেন প্রতিদিন ঈদ বাজার বসছে। গাদাগাদি করে ইজিবাইক, জেএস, নসিমন করিমন, মোটর সাইকেলে চলছে সাধারন মানুষ। অধিকাংশ লোকের মুখে নেই কোন মাস্ক। সমাজিক দূরত্ব মানার নেই কোন আলামত। 

স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বেনাপোল ও শার্শা উপজেলায় (২৫ জুন পর্যন্ত) করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪। এর মধ্যে ১৭ জুন সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। হাসপাতাল ও বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ২৫ জন। মারা গেছেন দুইজন। তারা বেনাপোলের বাসিন্দা। আক্রান্তের মধ্যে থানা ও ইমিগ্রেশনের পুলিশ, সাংবাদিক, স্বাস্থ্য কর্মী, বৃদ্ধসহ যুবকরাও রয়েছেন।

বেনাপোল ও নাভারনে রেড জোন বা লকডাইন মানছে না অনেকেই। একদিকে রাতের আধারে ভেঙে ফেলা হচ্ছে ব্যারিকেট। অপরদিকে দেওয়া হচ্ছে লকডাউন। প্রশাসনের সদস্যরা জনসচেতনতাসহ মানুষকে ঘরে থাকার আহবান জানালেও স্থানীয়রা অ-সহযোগিতা করছেন। বেনাপোলের দূর্গাপুর সড়কে দেয়া ব্যারিকেট কে বা কারা বাঁশ উঠিয়ে দিয়ে চলাচল উন্মুক্ত করেছে। ফলে করোন ঝুঁকি বাড়ছে। বাড়িতে টাঙিয়ে দেওয়া লকডাইন সাইনবোর্ডও অনেকে সরিয়ে ফেলছেন। 

গত এক সপ্তাহে বেনাপোলে ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের দুর্গাপুর, নামাজগ্রাম, বেনাপোল, পাঠবাড়ী ও পোড়াবাড়ী নারায়নপুর গ্রাম, শার্শা উপজেলার শার্শা সদর ইউনিয়নের কাজিরবেড়, নাভারন রেলবাজার, উত্তর ও দক্ষিন বুরুজবাগান গ্রামকে রেড জোন হিসেবে লকডাউন করা হয়। বেনাপোল পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ড ও শার্শা উপজেলার বাগআচড়া ইউনিয়নকে ইয়োলো জোন ঘোষণা করা হয়েছে। এই এলাকা পূর্বে গ্রিন জোনের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মন্ডল, সহকারী কমিশনার (ভূমি) খোরশেদ আলম চৌধুরী, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার ইউসুফ আলি, শার্শা থানার ওসি বদরুল আলম খান, বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি মামুন খান স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন ও শার্শা সদর ইউপি চেয়ারম্যান সোহারব হোসেনকে সাথে নিয়ে রেড জোনের কাজকর্ম দেখভাল করছেন।

নাভারন বাজারটি রেড জোনের ভেতরে পড়ায় পরও দোকানপাট ও হাটবাজার খোলা রয়েছে। সরকারি প্রঞ্জাপন জারির পরও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খোলাসহ জরুরি পরিসেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের চলাফেরার কারণে বিপুল সংখ্যক ব্যক্তিরা রেড জোন এলাকায় ঢুকে পড়ছে। এছাড়া ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান খোলা থাকার কারণে সেবা গ্রহীতারাও ঢুকে পড়ছে।

বেনাপোল বাজারের পাশ থেকে রেড জোন শুরু হওয়ায় বাজারটি দুইটা পর্যন্ত খোলা থাকছে। এছাড়া কাস্টমস, বন্দর, ব্যাংক, সিএন্ডএফ অফিস, ট্রান্সপোর্ট ও দূরপাল্লার পরিবহন গুলোর অফিস থাকায় বাজারে সব সময় লোকজন জমজম করছে। রেড জোনের বাসিন্দাদের অনেকেই রেড জোনের বাইরে এসে বাজারে অনর্থক ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে।

বেনাপোলের কামরুল হাসান (২২) বলেন, এক নাগাড়ে বাড়ি বসে থাকতি ভাল লাগছে না তাই বাজারে এলাম। চা পান খেয়েই চলে যাবো।

রেড জোনের কথা বলতেই সাথে থাকা আবু নাইম (২০) বলেন, ও যার হবে তার হবেই। সবাই তো বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই বয়সে বাড়ি বসে থাকতি ভাল লাগে।
শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার ইউসুফ আলী জানান, প্রতিদিনই নমুনা সংগ্রহ করে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টারের ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। প্রতিদিনই পজেটিভ রিপোর্ট আসছে। তারপরও মানুষের মনে একটুও ভয় নেই। করোনা আক্রান্তরা স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শে নিজ বাসায় আইসোলেশনে আছেন। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই সব বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। এ উপজেলায় ৪৪ জন আক্রান্তের মধ্যে বেনাপোলের নারানপুর গ্রামের জাকির হোসেন (৫০) ও পাশর্^বর্তী বেনাপোলের নার্সারী পাড়ার মমিনুর রহমান (৬০) নামে দুই ব্যক্তি মারা গেছেন। ওই দুইজনের রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে বলে জানান শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। 

বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন জানান, তিন নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যেই তার পৌরসভার কার্যালয়। এছাড়া এই ওয়ার্ডে একটি কলেজ, মহিলা ফাজিল মাদরাসা, কমিউনিটি সেন্টার, দশ শয্যার একটি মাতৃস্বাস্থ্য কেন্দ্র, হরিদাস ঠাকুরের পাটবাড়ি আশ্রমসহ অনেক অফিস ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা কেন্দ্র রয়েছে। এসব এলাকা লকডাউন করা হয়েছে।

শার্শা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, “করোনাভাইরাস সংক্রমণ এড়াতে উপজেলার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা গুলো ‘রেড জোন’ ঘোষণা করে আদেশ জারি করেছে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ। মানুষ কারণে-অকারণে নানা অজুহাতে বাইরে চলাচলের চেষ্টা করছে। অকারণে বাইরে বের হওয়া মানুষগুলোকে বুঁঝিয়ে আবার বাড়ি ফেরত পাঠানো হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা অমান্য করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি