ঢাকা, সোমবার   ২০ মে ২০২৪

ট্রাম্পকে ‘দিগম্বর’ করে দিয়েছে যে বই

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:১৯, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মার্কিন এক সাংবাদিকের লেখা বইলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে আমেকিা জুড়ে। এতে ট্রাম্প সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। বইটি লিখেছেন পুলিৎজার পুরস্কার জয়ী সাংবাদিক বব উডওয়ার্ড। বইটির নাম ‘ফেয়ার: ট্রাম্প ইন দ্য হোয়াইট হাউস’।

৪৪৮ পাতার গ্রন্থটি লিখতে গিয়ে উডওয়ার্ড ১০০ জনের বেশি বর্তমান ও সাবেক ট্রাম্প কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নেন, যার অধিকাংশ টেপে ধারণ করা হয়।

বইটি এখনও প্রকাশিত হয়নি। যাঁরা এই বইয়ের আগাম কপি পড়েছেন, তাঁরা জানিয়েছেন, ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহকর্মীরাই ট্রাম্পের যোগ্যতা ও মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অবশ্য হোয়াইট হাউস থেকে এই বইয়ের তথ্যগুলোকে মিথ্যা ও অবান্তর বলে দাবি করা হয়েছে।

তবে  ‘ফেয়ার: ট্রাম্প ইন দ্য হোয়াইট হাউস’ গ্রন্থের লেখক এমন একজন সাংবাদিক ও লেখক, যিনি তাঁর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য দুই-দুবার পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছেন। সহযোগী লেখক কার্ল বার্নস্টাইনের সঙ্গে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি বিষয়ে তাঁর ক্রমাগত প্রতিবেদনের কারণে অভিশংসনের মুখোমুখি হয়ে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট নিক্সন।

কার্ল বার্নস্টাইন, এই বই থেকে প্রমাণিত হয়, ট্রাম্প এখন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। হোয়াইট হাউসের একদল কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রকে ট্রাম্পের হাত থেকে বাঁচানোর দায়িত্ব নিজেদের ঘাড়ে তুলে নিয়েছেন। বার্নস্টাইন সিএনএনকে জানান, এই বই পড়ার পর একটা জিনিস স্পষ্ট, আর তা হলো ‘ট্রাম্পের শরীরে আর কোনো কাপড় নেই’।

একজন ভাষ্যকার মন্তব্য করেছেন, উডওয়ার্ডের নতুন বইয়ের এক-পঞ্চমাংশও যদি সত্যি হয়, তাহলে আরও একবার প্রমাণিত হবে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প শুধু অযোগ্যই নন, হোয়াইট হাউসে তাঁর অবস্থান আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক।

এই গ্রন্থের সবচেয়ে বিতর্কিত তথ্যের মধ্যে রয়েছে—

১. গত বছর জানুয়ারিতে এক বৈঠকে ট্রাম্প প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিসকে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে খুন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ম্যাটিস সে পরামর্শ অগ্রাহ্য করেন। একই বৈঠকে ট্রাম্প দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষায় বিপুল অর্থ ব্যয়ের বিরোধিতা করেন। সেই বৈঠকের পর ম্যাটিসের মন্তব্য ছিল, ট্রাম্পের বুদ্ধিশুদ্ধি পঞ্চম বা ষষ্ঠ শ্রেণির বালকের মতো।

২. হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ জন কেলি ট্রাম্পকে একজন ‘ইডিয়ট’ বা নির্বোধ বলে মনে করেন। ট্রাম্পের ব্যাপারে তাঁর মন্তব্য ছিল, এই লোকটাকে কিছু বোঝানোর চেষ্টা অর্থহীন। কেলির ভাষায়, ‘আমরা সবাই এক পাগলা শহরে রয়েছি।’

৩. নিজের সাবেক চিফ অব স্টাফ রাইন্স প্রিবাস সম্বন্ধে ট্রাম্পের মন্তব্য, এই লোকটা একটা ধেড়ে ইঁদুর, সারাক্ষণ সে এখান থেকে সেখানে ছুটে বেড়াচ্ছে।

৪. ট্রাম্প অনেক সময় সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ম্যাকমাস্টারের ব্যবহার নকল করে দেখাতে ভালোবাসতেন। তাঁর ভাষ্য, এই লোকটা সস্তা স্যুট পরেন, আর কথাবার্তায় একজন মদ বিক্রেতার মতো।

৫. ট্রাম্পের একটি প্রিয় অভ্যাস হলো আইনমন্ত্রী জেফ সেশন্সকে অনবরত অপমান করা। তাঁকে ট্রাম্প বিশ্বাসঘাতক এবং স্বল্প বুদ্ধিসম্পন্ন বলে অভিহিত করেছিলেন।

৬. ট্রাম্প একবার বাণিজ্যমন্ত্রী উলবার রসকে বলেছিলেন, ‘আপনি এখন বুড়ো হয়ে গেছেন, বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে আলোচনায় আপনার অংশ নেওয়ার আর কোনো প্রয়োজন নেই।

৭. গত বছর শার্লটসভিলে এক বর্ণবাদী মিছিলের পর ট্রাম্প যেভাবে তাদের পক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য রাখেন, তার প্রতিবাদে হোয়াইট হাউসের অনেক কর্মকর্তা পদত্যাগে প্রস্তুত ছিলেন। উডওয়ার্ড জানিয়েছেন, তাঁর সহকর্মীদের অনুরোধে ট্রাম্প একটি লিখিত বক্তব্যে বর্ণবাদীদের নিন্দা করেন, তবে পরে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তাদের জানান বর্ণবাদের এমন নিন্দা করা মস্ত ভুল ছিল। ‘এমন ভুল আর আমি কখনো করব না,’ ট্রাম্প বলেন।

বলাই বাহুল্য, হোয়াইট হাউস থেকে উডয়ার্ডের এই গ্রন্থকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বর্তমান প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত রোষের ফসল বলে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ট্রাম্প নিজেও বইটি প্রতারণামূলক বলে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। এক টুইটে তিনি জানান, উডওয়ার্ড একজন ডেমোক্র্যাট, মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে তাঁর বই প্রকাশের একটাই উদ্দেশ্য, আর তা হলো ডেমোক্র্যাটদের সাহায্য করা।

সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.





© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি