ঢাকা, রবিবার   ২৮ এপ্রিল ২০২৪

ঢাকায় যানজটে রোজ ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৫৫, ২০ জুলাই ২০১৭ | আপডেট: ১২:১৫, ২০ জুলাই ২০১৭

বাংলাদেশে শহর এলাকায় বাস করেন এমন জনসংখ্যার ৩৬ শতাংশেরই অবস্থান ঢাকা মহানগরীতে। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম ঢাকা। শুধু যানজটের কারণে নগরীতে প্রতিদিন ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। স্বাধীনতার ৫০ বছরের মধ্যে দেশটিকে উচ্চমধ্যম আয়ে উন্নীত করার লক্ষ্য পূরণ করতে হলে ঢাকা মহানগরীর ব্যাপ্তি বাড়াতে হবে। ঢাকার নাগরিক সমস্যা মহানগরী সম্প্রসারণের সম্ভাবনা নিয়ে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এসব বিষয় উঠে এসেছে।


বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে এ সম্মেলন হয়। এতে ‘টুওয়ার্ডস গ্রেট ঢাকা : এ নিউ আরবান ডেভেলপমেন্ট প্যারাডাইম ইস্টওয়ার্ড’ শীর্ষক প্রতিবেদনের খসড়া প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বক্তৃতা করেন দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত, ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান, সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মার্টিন রামা, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যান্থনি ভেনাবল্স, চীনের সাংহাইয়ের সাবেক ভাইস মেয়র কিঝেং ঝাও প্রমুখ। সম্মেলনে সরকারি কর্মকর্তা, নীতিনির্ধারক, নগর পরিকল্পনাবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও ছিলেন।


এতে বলা হয়, দ্রুত সম্প্রসারণের সঙ্গে ঢাকার নগর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সামঞ্জস্য রাখা হয়নি। ফলে বিশৃংখল ও অসম নগরায়ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে। পরিকল্পনার অভাবে অধিক ঘনবসতি ও নিন্মমানের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বন্যা ও ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ঢাকার প্রায় ৩৫ লাখ বস্তিবাসীসহ অনেকেই প্রায় মৌলিক সেবা, অবকাঠামো এবং সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ১০ বছরে যান চলাচলের গড় গতি প্রতি ঘণ্টায় ২১ কিমি. থেকে ৭ কিলোমিটার পর্যন্ত নেমে এসেছে। ঢাকায় যানবাহনের গতি হেঁটে চলার গড় গতির চেয়ে সামান্য বেশি। ঢাকায় যানজটের কারণে দিনে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। এতে আরও বলা হয়, পূর্বাঞ্চলে ঢাকা মহানগরী সম্প্রসারণের সম্ভাবনা রয়েছে। এলাকাটি মহানগরীর মূল কেন্দ্রের খুব কাছাকাছি। সেখানে ভূমির ব্যাপক প্রাপ্যতা রয়েছে। অঞ্চলটিতে মহানগরীর অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা এবং বাসযোগ্যতা নিশ্চিত হবে।


স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ২০৩৫ সাল নাগাদ ঢাকার জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৩ কোটিতে। সবার জীবন মান উন্নয়নে সিটি কর্পোরেশন এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কাজ ভাগাভাগি করে নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, সিটি কর্পোরেশন এবং নগরের সেবা সংস্থাগুলোর কাজে সমন্বয় বাড়াতে হবে। শহরের যান চলাচল ব্যবস্থা উন্নয়নে এরই মধ্যে বেশ কিছু বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার নির্মাণসহ বেশ কিছু উন্নয়ন কাজ চলছে।


সম্মেলনে চিমিয়াও ফান বলেন, বর্তমানের ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সালে ঢাকা মহানগরীর জনসংখ্যা সাড়ে ৩ কোটিতে উন্নীত হবে। এসব মানুষ শহরটির অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখবে। ঢাকাকে অবশ্যই সঠিকভাবে পরিকল্পনা প্রণয়ন, সমন্বয় সাধন এবং বিনিয়োগের সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে।


খসড়ায় আরও বলা হয়, ১৯৯৫ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে ঢাকার সড়ক ৫ শতাংশ বেড়েছে। এ সময় জনসংখ্যা ৫০ শতাংশ ও যান চলাচল ১৩৪ শতাংশ বেড়েছে। মূল কেন্দ্র থেকে ঢাকা প্রথমে উত্তর দিকে ও পরে পশ্চিম দিকে সম্প্রসারণ হয়েছে। মহানগরীর পূর্ব দিকের গ্রামীণ এলাকার দ্রুত বিকাশের সুযোগ রয়েছে। এতে আরও বলা হয়, মহানগরী এলাকার প্রায় ৪০ শতাংশের সমান পূর্ব ঢাকা। গুলশানের মতো সমৃদ্ধ এলাকার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে এলাকাটি। যথাযথ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে পূর্ব ঢাকা নানা সুবিধাসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের প্রাণচঞ্চল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতে পারে। এর ফলে ঢাকার অন্যান্য অংশের ভিড় ও যানজট কমে আসবে বলেও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।


মার্টিন রামা বলেন, যথাযথ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির পাশাপাশি বসবাসের পরিবেশের উন্নতি করতে হবে। পূর্ব ঢাকার টেকসই উন্নয়ন, অত্যধিক ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোর রেট্রোফিট করার প্রয়াসের চেয়ে অনেক কার্যকর ও অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভজনক হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।


দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিত ও চীনের সাংহাইয়ের সাবেক ভাইস মেয়র কিঝেং ঝাও দিল্লি এবং পূর্ব সাংহাইয়ের পুদং এলাকা রূপান্তরে তাদের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যান্থনি ভেনাবল্স ২০৩৫ সালের দিকে ঢাকার উন্নয়নের চারটি পরিস্থিতি উপস্থাপন করেন।

 //এআর


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি