তালেবানদের শত্রু সাহসী নারী সেদিকা
প্রকাশিত : ১৬:১০, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | আপডেট: ১৬:১৩, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

তালেবানরা কখনই প্রত্যাশাই করতে পারবে না সে দেশে নারীর অধিকারের কথা। তা আবার রেডিও স্টেশনে প্রচার! এমনই একটি ঘটনা সহ্য করা মুশকিলের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে আফগান পুরুষদের। এর জন্য হত্যার হুমকিও দিয়ে আসছে তারা।
ঘটনাটি আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় কুন্দুজ শহরে মেয়েদের পরিচালিত রেডিও স্টেশনে মেয়েদের অধিকারের বিষয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন সে দেশেরই এক সাহসী নারী সেদিকা শেরযাই।
‘রেডিও রোশনি’ নামে অনুষ্ঠানটি মেয়েদের অধিকার নিয়ে প্রচারিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সম্পাদক সেদিকা শেরযাইকে হত্যার জন্য তালেবানদের একাধিকবার চেষ্টার পরও তা আজও সম্প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
এই দেশটির পুরুষরা মেয়েদেরকে নিজেদের সম্পত্তি মনে করে আসছে বহুকাল ধরে। এই ধরনের মনোভাবকে চ্যালেঞ্জ জানাতেই রেডিও রোশনি চালু করেন সেদিকা। যার ফলে তিনি দ্রুত তালেবানের শত্রুতে পরিণত হতে থাকেন।
প্রথমে তারা সেদিকাকে সম্প্রচার বন্ধের হুমকি দিয়েছিল। পরে রেডিও স্টেশনে রকেট ফায়ারও ছুঁড়ে ছিল। যার প্রেক্ষিতে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য সম্প্রচার বন্ধ করেন সেদিকা। তিনি আফগান সরকারের কাছে নিরাপত্তাও চান। এর অল্প কয়েকদিন পর আবার অন-এয়ারে যান সেদিকা।
পুরুষরা সেদিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলো- এলাকার মেয়েদেরকে সে বিপথগামী করছে এবং ঘরে ঘরে নারী-পুরুষের মধ্যে সম্পর্কে সংঘাত লাগিয়ে দিচ্ছে এই বলে। এ কারণেই তাকে হত্যা করা উচিত বলে মতামত দিতে থাকলো।
সেদিকার জন্য বিশেষ করে সেই দিনটি ছিল ভয়ঙ্কর যেদিন তিনি দেখলেন কুন্দুজে ২০১৫ সালে তালেবানরা সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিলো। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তার ফোন বেজে ওঠে।
সেই ঘটনা নিয়ে সেদিকা বলেন, কেউ একজন পশতু ভাষায় কথা বলছিল, জানতে চাইলো আমি কোথায় আছি, আমার অবস্থান পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানাতে। লোকটা কে ছিল আমি নিশ্চিত ছিলাম না এবং সে ছিল সন্দেহজনক। এরপর আমি আমার ফোন বন্ধ করে দেই এবং পালানোর যথাসাধ্য চেষ্টা চালাই।
এটা ছিল একটি আগাম সতর্ক বার্তা। রেডিও স্টেশনের কর্মীকে পালাতে দেখে তালেবান যোদ্ধারা স্টেশনের আর্কাইভ ধ্বংস করে দেয়, যন্ত্রপাতি চুরি করে এবং ভবনটিতে মাইন পুঁতে রাখে। যদিও তারা শেষ পর্যন্ত শহর থেকে বিতাড়িত হয়েছিল। এ সময় স্টেশনটি দুইমাসের জন্য বন্ধ ছিল।
সেদিকা শেরযাই বলেন, কুন্দুজের নারীদের অন্যতম সাধারণ একটি চিন্তার বিষয় হল, স্বামীদের বহুগামী বৈবাহিক জীবন নিয়ে স্ত্রীদের মধ্যে বিরোধ। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বহু সংখ্যায় পুরুষ আছেন যখনই তাদের হাতে কিছু টাকা-পয়সা আসে তখন তারা যৌন উদ্দেশ্য পূরণের জন্য একাধিক বিয়ে করে ফেলেন।
তিনি বলেন, স্ত্রীদের মধ্যে বেশিরভাগ বিরোধের কারণ তাদের স্বামী একজনের চেয়ে আরেকজনকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। যখন দ্বিতীয় স্ত্রীর গর্ভে বেশি সন্তান আসে, তখন তাকে প্রথম স্ত্রীর চেয়ে বেশি সুনজরে দেখা হয়। এবার এরা যদি নিরক্ষর হয়, তখন লোকটি একজন শিক্ষিত স্ত্রী খুঁজে নেয়। তখন তাকে বেশি প্রাধান্য দেয়া শুরু হয়, কারণ সে বেশি শিক্ষিত বলে।
যোহাল নুরি, যিনি রেডিও রোশনি এবং আরও একটি রেডিও স্টেশনে কাজ করছেন। তিনি বলছেন, অনেক পুরুষ নারীদের অনুষ্ঠান শোনে এবং এভাবেই বিষয়টি তাদের মনোভাব বদলাতে সহায়তা করছে। এখন অনেকেই তাদের স্ত্রীদের কাজে যেতে এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে সক্রিয় করার জন্য অনুমতি দিতে আগ্রহী।
যোহাল বলেন, এখানে প্রচুর হত্যাকাণ্ড, অপহরণ এবং অপরাধ ঘটছে। রাতে অপহরণের ঘটনা খুবই সাধারণ এবং ঘটনাগুলো খারাপ থেকে খারাপের দিকে যাচ্ছে। এর ফলে কিছু পরিবার যারা মেয়েদেরকে ভাইদের সঙ্গে করে হলেও স্কুলে পাঠাতেন তারাও এখন মন বদলাতে শুরু করেছেন।
আমেরিকা এবং তালেবান প্রতিনিধিদের মধ্যে যে আলোচনা চলছে তা নিয়ে সেদিকা শেরযাই বলেন, আমরা আশা করি শান্তি আলোচনা নিয়ে আসবে সত্যিকারের শান্তি। সেটা মেয়েদের ঘরের কোণে বসে থাকার বিনিময়ে নয় এবং আমাদের সব অর্জন যেন ভেস্তে না যায়।
সূত্র : বিবিসি
এএইচ/
আরও পড়ুন