ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

‘দুর্নীতি থাকলেই সবকিছু অচল হয়ে যায় না’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৩৯, ১৭ অক্টোবর ২০১৯ | আপডেট: ১৫:৪৩, ১৭ অক্টোবর ২০১৯

একটি দেশে দুর্নীতি থাকলেই সবকিছু অচল হয়ে যায় না বলে মন্তব্য করেছেন সদ্য নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি। বলেছেন, কোনও একটি বিষয় দারিদ্র্র্য বিমোচন আটকে রাখে না।

বৃহস্পতিবার বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে দারিদ্র্য বিমোচন দিবস। এ সময় বিবিসিকে দেয়া এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

দারিদ্র্য বিমোচনে অনেক সমাধান লাগবে উল্লেখ করে অভিজিৎ বলেন, এর সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। দুর্নীতি থাকলেই সবকিছু অকেজো হয়ে যাবে তা নয়। মানে দুর্নীতির ভেতরেও অনেক কিছু হয়, পরিবর্তন হয়। যে দেশে দুর্নীতি আছে সে দেশে পরিবর্তন আটকে থাকে না।

ইন্দোনেশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট সুহার্তোর উদাহরণ টেনে অভিজিৎ বলেন, তিনি ‘বিখ্যাত দুর্নীতিগ্রস্ত প্রেসিডেন্ট’ ছিলেন বলে নানা লোকে বলে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ায় সবার জন্য স্কুল এবং অপুষ্টি দূর করার উপর জোর দিয়েছিলেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অমর্ত্য সেনের পর দ্বিতীয় বাঙালি হিসেবে অর্থনীতিতে এ বছর নোবেল জিতেছেন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈশ্বিক দারিদ্র্য লাঘবে অবদান রাখায় এ বছর অভিজিৎ ব্যানার্জির সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পান তার স্ত্রী এস্থার দুফলো এবং মাইকেল ক্রিমার।

পুরস্কার পাওয়ার পরে দুফলো বলেন, গত ৩০ বছরে বিশ্ব অর্থনীতি থেকে দুটি গ্রুপ খুবই লাভবান হয়েছেন। একটি অংশ হচ্ছে অতি ধনী এবং অপর অংশটি হচ্ছে অতি দরিদ্র।

অভিজিৎ ব্যানার্জি বিবিসির সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘হ্যাঁ, তারা মার খেয়েছে। যেমন মার্কিন দেশে, যেখানে আমরা থাকি, সেখানে মধ্যবিত্তরা মার খেয়েছে। এবং দরিদ্ররাও মার খেয়েছে। মার্কিন দেশে যারা দরিদ্র, তারাও পৃথিবীতে মধ্যবিত্ত। তারাও মার খেয়েছে।’

‘যারা মার খায়নি তারা হচ্ছে পৃথিবীর দরিদ্র দেশের দরিদ্র লোকেরা- ভারতবর্ষ, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং চীন- এসব দেশের দরিদ্রদের উন্নতি হয়েছে।’

পৃথিবীর নতুন ধন-সম্পদ সব ধনীদের কাছে যাচ্ছে, এ কথা উল্লেখ করে অভিজিৎ বলেন, সেখান থেকে দুই-চার ফোঁটা যেগুলো ছিটকে যাচ্ছে সেগুলোও যদি গরীবরা পায় তাতেই তারা এগিয়েছে। কারণ তারা এতটাই দরিদ্র যে সে দুই-চার ফোঁটাও তাদের কাজে লাগছে।

দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ব্র্যাকের দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে দারিদ্র্য একটি সমস্যা নয়, এটা বহুমাত্রিক সমস্যা। কিছু প্রকল্প আছে যার মাধ্যমে অতি দরিদ্রদের জন্য কাজ করা যায়। অন্য আরেকটি অংশ আছে যারা তাদের চেয়ে কম দরিদ্র। ব্র্যাক অনেক আলাদা ধরনের প্রোগ্রাম করে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য-শিক্ষাও রয়েছে।

‘তাদের ধারণা আমাদের মতোই। নানা সমস্যার নানা সমাধান আছে।’

নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির পরে অভিজিৎ ব্যানার্জিকে নিয়ে ভারতে বেশ বিতর্ক হচ্ছে। বলা হচ্ছে, তিনি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর উপদেষ্টা ছিলেন। ক্ষমতাসীন বিজেপির অনেক নেতা অভিজিৎ ব্যানার্জিকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

অভিজিৎ বলেন, তিনি এই বিতর্কে জড়াতে চান না। তাছাড়া তিনি কখনও রাহুল গান্ধীর উপদেষ্টা ছিলেন না বলেও উল্লেখ করেন অভিজিৎ।

‘উপদেষ্টা হতে গেলে যে ধরণের লেভেল অব ইন্টার‍্যাকশন লাগে সেটা আমার কোনও সময়ই ছিল না। কিন্তু তাই বলে আমি নিশ্চয়ই বলছি না যে আমি ওদের বিরোধীও নই। পলিটিক্সের সঙ্গে আমাদের কাজটা জড়াতে আমি অসম্মত।’

তিনি বলেন, আবুদল লতিফ জামিল ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনি গুজরাটে মোদি সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গে মমতা ব্যানার্জির সঙ্গেও কাজ করেছেন।

অভিজিৎ ব্যানার্জির চিন্তা হচ্ছে, দরিদ্রদের উন্নয়নের জন্য অর্থ যাতে ঠিক মতো খরচ করা হয় সেদিকে তাদের দৃষ্টি বেশি। কোন রাজনৈতিক দল সেটি করছে তা মুখ্য বিষয় নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ভারতের কলকাতা শহর অনেকের কাছেই ‘নোবেল নগরী’ হিসেবে পরিচিত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অমর্ত্য সেন এবং মাদার তেরেসাসহ বেশ কয়েকজন নোবেল বিজয়ীর সঙ্গে এই শহরের সংযোগ রয়েছে। এখন এই তালিকায় যুক্ত হলেন অভিজিৎ ব্যানার্জি। তিনি কলকাতা শহরেই বেড়ে উঠেছেন।

অভিজিৎ সাউথ পয়েন্ট স্কুল এবং প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র ছিলেন। সেখান থেকেই ১৯৮১ সালে অর্থনীতিতে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। এরপর ১৯৮৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন অভিজিৎ। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির ফোর্ড ফাউন্ডেশন অধ্যাপক পদে বর্তমানে কর্মরত আছেন তিনি।

অভিজিৎ ব্যানার্জি বলেন, কলকাতা একসময় ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড় শহর ছিল। সেখানে সবাই আসত। কলকাতা ভারতবর্ষের সবচেয়ে এগিয়ে থাকা শহর ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।

‘সেই দিনটা এখন গেছে কলকাতার। সেটাই দুঃখের কথা। অনেকে কলকাতায় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ কাটিয়েছিল। কলকাতায় বসে রিসার্চ করেছিল। রবীন্দ্রনাথ কলকাতায় বসে তার কাজ করেছিলেন। সেটা কলকাতায় যে হচ্ছে না সেটাই দুঃখজনক।’

‘আপাতত প্রতি ঘণ্টায়-ঘণ্টায় এখন মিটিং, ফোন কল, ইন্টারভিউ চলছে। আশা করি কিছুদিন পর এটা থিতিয়ে যাবে এবং আমার জীবনটা যা ছিল সেখানে পুরোদস্তুর ফিরে যাবে।’

তিনি বলেন, দারিদ্র্য নিয়ে অনেকে অনেক কিছু বলে আবার অনেকে ভুলও বলে।

অভিজিৎ ব্যানার্জি দারিদ্র্য বিষয়ে তত্ত্বের ভেতরে না থেকে হাতি কলমে দেখিয়েছেন যে দারিদ্র্যের চেহারাটা কেমন এবং সেখান থেকে বের হওয়ার উপায় কী।

‘আমরা বাড়িতে বসে চোখ বন্ধ করে তত্ত্ব বের না করে লোকেরা যা করছে যেটা দেখে তার ভেতর থেকে তত্ত্বটা বের করেছি,’ বলছিলেন অভিজিৎ।

সূত্র: বিবিসি


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি