ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০১ মে ২০২৫

ধর্মগুরু ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত : ভারতে সহিংসতায় মৃত ২৮

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:৩৫, ২৫ আগস্ট ২০১৭ | আপডেট: ২২:৪৯, ২৫ আগস্ট ২০১৭

Ekushey Television Ltd.

ধর্ষণের মামলায় ভারতের ‘ধর্মগুরু’ রাম রহিম দোষী সাব্যস্ত হওয়ার রায় ঘোষণার পর তাঁর সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কমপক্ষে ২৮ জন নিহত হয়েছেন।

ভারতের স্বঘোষিত আধ্যাত্মিক গুরু গুরমিত রাম রহিম সিং ধর্ষণ মামলায় আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ব্যাপক সহিংসতা শুরু করেছে তার ভক্তরা। আজ শুক্রবার ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের পঞ্চকূলা শহরে সংঘর্ষের ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২৮ জন নিহত হয়েছেন। এই শহরে অবস্থিত সিবিআই (সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) আদালত শুক্রবারই গুরমিত রাম রহিম সিংকে ধর্ষণের মামলায় দোষী ঘোষণা করেছেন। আগামী সোমবার তার সাজা ঘোষণা করা হবে।

স্থানীয় পুলিশের বরাতে হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, রাম রহিমের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর পঞ্চকূলা শহরে সংঘর্ষে কয়েকজন নিহত হন। তবে নিহত ব্যক্তিদের ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। পঞ্চকূলা বেসামরিক হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজনের দেহে গুলির আঘাত রয়েছে।

দুই শিষ্যকে ধর্ষণের অভিযোগে রাম রহিম সিং দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। এ অপরাধের শাস্তি হিসেবে তার সাত বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

রায় ঘোষণার পর অপরাধে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন রাম রহিম। দেশটির হরিয়ানা রাজ্যের পুলিশ এরই মধ্যে তাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। একটি হেলিকপ্টারে করে আদালত থেকে তাকে রোহতাক কারাগারে নেওয়ার কথা জানিয়েছে এনডিটিভি।

বর্তমানে পঞ্চকূলা শহরে সান্ধ্য আইন জারি আছে।

সহিংসতার আশঙ্কায় আগে থেকে সেনা-পুলিশ সব প্রস্তুত রেখেও পরিস্থিতি বাগে আনা যায়নি। লঠিচার্জ করে, কাঁদানে গ্যাস ছুড়েও পরিস্থিতি  নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না পুলিশ।

ধর্মীয় গোষ্ঠী ডেরা সাচ্চা সওদার সদর দফতর সিরসায় এবং পাঁচকুলায় রাম রহিমের অনুসারীরা সংবাদমাধ্যমকেও আক্রমণ করেছে। সংবাদকর্মীদের গাড়ি ভাঙচুর করেছে ক্ষুব্ধ ডেরা সমর্থকরা। চন্ডিগড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় শহরজুড়ে কয়েকটি স্থানে এবং পঞ্জাবজুড়ে কারফিউ জারি হয়েছে।

রাম রহিম সিংয়ের লাখো সমর্থককে চন্ডিগড়ে ঢুকতে দেওয়ার জন্য হরিয়ানা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমারিন্দর সিং। চন্ডিগড় দুই রাজ্যেরই রাজধানী।

ধর্মগুরুর মামলার রায় শুনতে আগে থেকেই শহরটিতে রাম রহিমের দুই লাখের বেশি ভক্ত জড়ো হয়েছিলেন। আদালতের রায় বিপক্ষে গেলে সহিংসতা শুরু হতে পারে- এমন আশঙ্কায় সকাল থেকে পাঁচকুলায় সেনাবাহিনী নামানো হয়। ৫০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয় হরিয়ানা ও পঞ্জাবে।

রায় ঘোষণার পরপরই রাম রহিমের হাজার হাজার অনুসারী বিক্ষোভ করতে গিয়ে সহিংস হয়ে ওঠেন। তাঁরা বিভিন্ন যানবাহন ও সরকারি অফিসে ভাঙচুর চালান। এ ছাড়া পঞ্চকূলা শহরের কিছু আবাসিক কলোনিতেও ভাঙচুর চালানো হয়। শহরের একটি পেট্রলপাম্প ও পাঁচতারকা হোটেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

শহরটির তিন নম্বর সেক্টর এলাকায় সবচেয়ে বেশি ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। ওই এলাকাতেই সিবিআইয়ের আদালতটি অবস্থিত। শহরের বিভিন্ন এলাকায় পুরু কালো ধোঁয়া দেখা গেছে। ভারতের বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেলের ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, রাম রহিমের শতাধিক অনুসারী পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। একপর্যায়ে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে এবং বিক্ষোভকারীদের লাঠিপেটা করে। সংঘর্ষে কমপক্ষে একজন সাংবাদিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

সহিংসতা পঞ্চকূলা থেকে পাঞ্জাবেও ছড়িয়ে পড়েছে। ওই রাজ্যের মালৌত শহরে একটি রেলস্টেশনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই রাজ্যের মানসা শহরে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভাঙচুর চালানো হয়েছে এবং দুটি যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

বিবিসি লিখেছে, একাধারে ধর্মপ্রচারক, সমাজ সংস্কারক, গায়ক, চিত্রনায়ক ও পরিচালক বাবা রাম রহিমের মতো বর্ণময় চরিত্র ভারতের অজস্র ধর্মগুরুর মধ্যেও বিরল। শিখ, হিন্দু, মুসলিম- সব ধর্মের চেতনা মিশিয়ে বাবা রাম রহিম তৈরি করেছেন তার আশ্রম- ডেরা সাচ্চা সওদা।

হরিয়ানায় গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রতি সমর্থন দিয়েছিলেন রাম রহিম। লাখ লাখ ভক্ত থাকায় বড় ভোট ব্যাংক বিবেচনা করে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির অনেক নেতাই তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রাখেন। কিন্তু পনেরো বছর আগে নিজের আশ্রমেই দুজন ভক্ত মহিলাকে ধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির চিঠির সূত্র ধরে ২০০২ সালে এই ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করে সিবিআই। সেখানে বলা হয়, ১৯৯৯ সালে নিজের আশ্রমে দুই শিষ্যকে ধর্ষণ করেন রাম রহিম। ২০০৭ সালে শুনানি শুরুর পর দশ বছরের মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে। বিচারের পুরোটা সময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এসেছেন ডেরা সাচ্চা সওদার প্রধান।

ডব্লিউএন


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি