নেপালের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী কে এই বালেন্দ্র শাহ্
প্রকাশিত : ১৯:৩৯, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কঠোর কারফিউ সত্ত্বেও তরুণদের মাত্র দু'দিনের বিক্ষোভে পদত্যাগ করে হেলিকপ্টারে কাঠমুন্ডু ছেড়েছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি। দুদিনের বিক্ষোভ ২৫ জনের প্রাণহানি এবং কয়েকশ আহতের পর জেন-জি তরুণরা ওলি এবং আরও বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। কাঠমান্ডু উপত্যকায় ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি অফ নেপাল (ইউনিফাইড মার্কসিস্ট লেনিনিস্ট) বা সিপিএন (ইউএমএল) এবং নেপালি কংগ্রেসের দলীয় সদর দপ্তরও ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তীব্র বিক্ষোভের পর অলি তার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
নেপালে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী তরুণ-নেতৃত্বাধীন এই বিক্ষোভে ওলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হওয়ার পর দেশটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন একটি নাম আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। তিনি হচ্ছেন বালেন্দ্র শাহ, যিনি বালেন নামেই বেশি পরিচিত। তিনি কাঠমান্ডুর বর্তমান মেয়র। অনলাইন প্রচারণার মাধ্যমে তাকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।
কাঠমান্ডুর ১৫তম মেয়র বালেন্দ্র শাহ কেবল একজন রাজনীতিবিদই নন, একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এবং র্যাপারও। অনেক তরুণ নেপালিদের কাছে তিনি আশা এবং পরিবর্তনের প্রতিনিধি। শাহ মেয়র পদে জয়লাভ করার পর, মানুষ তাকে ভবিষ্যতে একজন সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে শুরু করেন। তার সাফল্য আরও স্বাধীন প্রার্থীদের রাজনীতিতে পা রাখার জন্য উৎসাহিত করে। এই নতুন শক্তির একটি স্পষ্ট ফলাফল ছিল রবি লামিছানের নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় স্বাধীন পার্টি (আরএসপি) এর উত্থান, যা নেপালের সংসদের নিম্নকক্ষে ২১টি আসন জিতেছে।
এটি নেপালের রাজনীতিতে নতুন হাওয়া এনেছে। কিন্তু বালেন এবং অন্যান্য স্বাধীনরা জাতীয় সরকার পরিচালনার বৃহত্তর এবং আরও জটিল চ্যালেঞ্জগুলি পরিচালনা করতে পারবেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে।
র্যাপার থেকে সংস্কারক
প্রকৌশলী হিসেবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং র্যাপার হিসেবে আবেগপ্রবণ শাহ ২০২২ সালে কাঠমান্ডু মেয়র নির্বাচনে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নেপালের রাজনৈতিক অঙ্গনে ঝড় তোলেন এবং জয়লাভ করেন। তিনি শক্তিশালী দল-সমর্থিত প্রার্থীদের পরাজিত করে শহরের ১৫তম মেয়র এবং প্রথম স্বতন্ত্র মেয়র হন।
তখন থেকে, তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতার জন্য সুনাম অর্জন করেছেন। তার উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে কাঠমান্ডুর রাস্তা পরিষ্কার করা, সরকারি স্কুলগুলোর উন্নতি করা এবং কর ফাঁকি দেওয়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। এই প্রচেষ্টাগুলো, যদিও কখনও কখনও বিতর্কিত, নেপালের রাজনৈতিক অভিজাতদের প্রতি হতাশ নাগরিকদের মধ্যে তাকে জনপ্রিয় করে তুলেছে।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
শাহের আবেদন শুধু নেপালে সীমাবদ্ধ নয়। টাইম ম্যাগাজিন তাকে শীর্ষ ১০০ উদীয়মান নেতার তালিকায় স্থান দিয়েছে। অন্যদিকে, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস তার তৃণমূল শৈলী এবং স্বচ্ছতার প্রশংসা করেছে। উভয় স্বীকৃতিই তাকে এমন একজন নেতা হিসেবে তুলে ধরেছে যিনি প্রতিষ্ঠিত দলীয় রাজবংশের পরিবর্তে সাধারণ মানুষের জন্য কথা বলেন।
১৯৯০ সালের ২৭ এপ্রিল কাঠমান্ডুতে জন্মগ্রহণকারী শাহ, রাজনীতিতে আসার আগে রাজধানীর আন্ডারগ্রাউন্ড হিপ-হপ দৃশ্যে নিজের নাম তৈরি করেন। তারুণ্যের ক্যারিশমা, প্রতিষ্ঠান-বিরোধী বক্তব্য এবং সুনির্দিষ্ট নীতিগত কর্মকাণ্ডের মিশ্রণ তাকে নেপালের তরুণদের জন্য একটি স্বাভাবিক মিলন কেন্দ্র বানিয়েছে, যারা দুর্নীতিগ্রস্ত এবং বিচ্ছিন্ন বলে বিবেচিত নেতাদের বিকল্প খুঁজছে।
শাহের সম্পদ
বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, বালেন্দ্র শাহের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৫ থেকে ৬ কোটি নেপালি রুপি। তার মাসিক আয় ৩ লাখ রুপির বেশি বলে জানা যায়। তার আয়ের সবচেয়ে বড় অংশ আসে তার প্রকৌশলী পেশা থেকে। তিনি বালেন কনসাল্টিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এছাড়া, তিনি পদ্মা গ্রুপ অফ কোম্পানিজে ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার এবং অন্যান্য প্রকৌশল পদেও কাজ করেছেন। তিনি নির্মাণ ও পরামর্শ পরিষেবা থেকে নিয়মিত আয় করেন।
এদিকে কাঠমান্ডুর মেয়র বলেন্দ্র শাহ আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির পদত্যাগের পর জেন-জেড বিক্ষোভকারীদের সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন। মঙ্গলবার এক ফেসবুক পোস্টে শাহ বলেন, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই পদত্যাগ করেছেন, তাই বিক্ষোভকারীদের আরও জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতি এড়াতে হবে।তিনি সরকারি ও বেসরকারি সম্পদকে জনগণের সম্পত্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং তরুণদের তাদের ধ্বংস না করার আহ্বান জানিয়েছেন।
“দয়া করে শান্ত থাকুন। জাতীয় সম্পদের ক্ষতি আমাদের সম্মিলিত ক্ষতি। এখন আমাদের সকলের সংযম প্রদর্শন করা জরুরি। এখান থেকে, আপনার প্রজন্মকেই দেশ পরিচালনা করতে হবে’’, লেখেন শাহ।
‘জেন জি প্রোটেস্ট’ নামে পরিচিত এই অস্থিরতার নেতৃত্ব মূলত ২৮ বছরের কম বয়সী তরুণরা দিচ্ছে। একদিন আগে, হাজার হাজার মানুষ সংসদের বাইরে জড়ো হয়েছিল, যাদের অনেকেই স্কুল ইউনিফর্ম পরে ছিল। পুলিশ জনতার উপর গুলি চালানোর পর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
এই অস্থিরতার মধ্যে ব়্যাপার থেকে রাজনীতিবিদে পরিণত শাহ বিক্ষোভকারীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। আগের একটি ফেসবুক পোস্টে কাঠমান্ডুর মেয়র বলেছেন, আয়োজকদের দ্বারা নির্ধারিত বয়সের সীমার কারণে তিনি উপস্থিত থাকতে পারেননি, তিনি বিশ্বাস করেন, তাদের কণ্ঠস্বর শোনা প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, যদিও তিনি সশরীরে উপস্থিত থাকবেন না, তবুও তার ‘পূর্ণ সমর্থন’ তরুণদের সঙ্গে থাকবেন।
তিনি আরও বলেন, "আমি তাদের আকাঙ্ক্ষা, উদ্দেশ্য এবং চিন্তাভাবনা বুঝতে চাই। রাজনৈতিক দল, নেতা, কর্মী, আইনপ্রণেতা এবং প্রচারকদের এই সমাবেশকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার জন্য অতিরিক্ত স্মার্ট হওয়া উচিত নয়।"
সূত্র: কাঠমান্ড পোস্ট
এসএস//
আরও পড়ুন