পাঁচ বছরে রাজস্ব আয় বেড়েছে ১৪.২৮%
প্রকাশিত : ১৬:২৫, ৫ জানুয়ারি ২০১৮ | আপডেট: ২০:২৯, ৬ জানুয়ারি ২০১৮

রাজস্ব আয় বাড়াতে সরকারের যে পরিকল্পনা ছিল তা কয়েক বছরে অনেকাংশেই সফল হয়েছে। এ সাফল্যের কারণে দেশ এখন পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছে। প্রতিবছর বাড়ছে বাজেটের আকার যার মূলে রয়েছে রাজস্ব আয়ের বড় অবদান।
পরিসংখ্যন বলছে, গত পাঁচ বছরে রাজস্ব আয় গড়ে বেড়েছে ১৪ দশমিক ২৮ শতাংশ হারে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৯ হাজার ১৫১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। যেটি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ৮৫ হাজার তিন কোটি ৬৯ লাখ টাকা। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস অর্থাৎ জুলাই থেকে নভেম্বরে রাজম্ব আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, রাজস্ব বোর্ডের নানামুখী উদ্ভাবনী উদ্যোগই এ সাফল্যের চাবিকাঠি। একই সময়ে রাজস্ব আয় বাড়ার সঙ্গে করদাতার সংখ্যাও বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. নজিবুর রহমান বলেন, গত কয়েক বছর রাজস্ব বোর্ডের নানামুখী উদ্ভাবনী উদ্যোগ যেমন- আয়কর মেলা, ট্যাক্স ও ভ্যাট কার্ড প্রদান, কর বাহাদুর পরিবারকে সম্মাননা জানানো ইত্যাদির কারণে দেশে রাজস্ববান্ধব সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। এর ফলে করদাতার সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি রাজস্ব আয়ে সাফল্য এসেছে। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হলো জনগণের মাঝ থেকে করভীতি দূর হয়েছে। কর প্রশাসন জনবান্ধব প্রশাসনে পরিণত হয়েছে। মানুষ এখন কর দিতে চায়। এ কারণে রাজস্ব আয় ও করদাতার সংখ্যা বেড়েছে।
গত তিন বছর নজিবুর রহমান এনবিআরের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এসময় তিনি বিভিন্ন উদ্ভাবনী কর্মসূচি চালু করে কর কার্যক্রম ও কর প্রশাসনে সংস্কার করেন। গত সোমবার তাকে প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এনবিআরের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান বলেন, গত কয়েক বছর করদাতাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে হয়রানি বন্ধ হয়েছে। একইসঙ্গে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে ঘরে ঘরে করসেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। যা রাজস্ব আহরণে ইতিবাচক ফল এনেছে।
রাজস্ব বোর্ডের তথ্যমতে, গত ২০১২-১৩ অর্থবছরে রাজস্ব আয় ছিল এক লাখ ৯ হাজার ১৫১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা যা ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ২০ হাজার ৮১৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ওই বছর (২০১৩-১৪ অর্থবছর) প্রবৃদ্ধি হয় ১০ দশমিক ৬৯ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
২০১৪-১৫ অর্থবছর রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল এক লাখ ৩৫ হাজার ৭০০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ওই বছর প্রবৃদ্ধি হয় ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আয় বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ৫৫ হাজার ৫১৮ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এসময় প্রবৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ১৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। যা গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ে বড় সাফল্য আসে। এসময় এক লাফে রাজস্ব বেড়ে দাঁড়ায় এক লাখ ৮৫ হাজার তিন কোটি ৬৯ লাখ টাকা। যা গত বছর প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
পরিসংখ্যন মতে, গত পাঁচ বছরে আহরিত রাজস্বের মধ্যে আমদানি ও রফতানি পর্যায় (শুল্ক খাত) অবদান ছিল ২৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এসময় স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) থেকে আসে ৩৬ দশমিক শূন্য সাত শতাংশ আর আয়কর থেকে আসে ৩৫ দশমিক ১৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের নির্ধারিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে দুই লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি।
এনবিআর সূত্র জানায়, সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন দ্বিগুণ হওয়ার পাশাপাশি বেসরকারি খাতে কর্মকর্তা পর্যায়ে চাকরিজীবীদের রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করায় ই-টিআইনধারীর সংখ্যা বেড়েছে। গত এক বছরে করের আকার বেড়েছে দ্বিগুণ। গত ২০১২-১৩ অর্থবছরে ইলেকট্রনিক আয়কর সনাক্তকরণ নম্বরধারীর (ইটিআইএন) সংখ্যা ছিল ১২ লাখ। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ লাখ ৭১ হাজার।
নজিবুর রহমান বলেন, দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের সঙ্গে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের ই-টিআইএন বাধ্যতামূলক করায় নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা গত এক বছরে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধি প্রমাণ করে, দেশের নাগরিকরা কর প্রদানে সচেতন। এনবিআরের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়ছে। হয়রানিমুক্ত পরিবেশের কারণে তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে ই-টিআইএন নিবন্ধন করছেন বলে জানান তিনি।
আর/এসএইচ
আরও পড়ুন