‘পাক-ভারতের পরমাণু যুদ্ধ ২০২৫ সালে’ সতর্ক করা হয় ৫ বছর আগে
প্রকাশিত : ১৫:২৭, ৭ মে ২০২৫

কাশ্মিরে সম্প্রতিক হামলার জেরে যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে ভারত-পাকিস্তান পাল্টাপাল্টি হামলায় জড়িয়ে পড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে আলোচনায় এসেছে ২০১৯ সালের একটি গবেষণা। যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক একটি গবেষণায় সতর্ক করা হয়েছিল, ২০২৫ সালে দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর এই দুটো দেশের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যেতে পারে। এতে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি মানুষের প্রাণহানি ঘটবে।
আমেরিকার রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় এসব আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির অধ্যাপক অ্যালান রোবোকের নেতৃত্বে পরিচালিত ওই গবেষণায় কাশ্মিরকেন্দ্রিক বিরোধকে সম্ভাব্য যুদ্ধের মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
সম্প্রতি ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর পাকিস্তান আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, ভারত দ্রুত পাল্টা হামলা চালাতে পারে। এই পরিস্থিতিতে গবেষণা রিপোর্টটি নতুন করে গুরুত্ব পাচ্ছে।
গবেষণায় রোবোক বলেছিলেন, “পরমাণু অস্ত্র থাকা মানেই যুদ্ধের আশঙ্কা থেকেই যায়।” তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, যুদ্ধ হলে তা শুধু উপমহাদেশ নয়, পুরো বিশ্বেই জলবায়ু ও খাদ্য নিরাপত্তার বিপর্যয় ডেকে আনবে।
সেই সময় ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল দীপঙ্কর ব্যানার্জি এই গবেষণাকে 'কাল্পনিক' বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, "যুদ্ধ হতে পারে, তবে তা সময় বা গবেষণায় নির্ধারিত হয় না।"
পাকিস্তানের পারমাণবিক বিজ্ঞানী ড. পারভেজ হুডভাই অবশ্য যুদ্ধের আশঙ্কা উড়িয়ে দেননি। তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনা চলতে থাকলে কোনও এক সময় দুর্ঘটনাবশতও যুদ্ধ লেগে যেতে পারে।”
তবে পাকিস্তানের পরমাণু বিজ্ঞানী মি. হুডভাই আশঙ্কা করেছিলেন, অন্যান্য কারণ থাকলেও কাশ্মীরই হবে প্রধান কারণ। কাশ্মীরের পরিস্থিতি যতোই শান্ত করা যাবে, পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকিও ততোটা কমে আসবে। দুর্ভাগ্যজনক হলো সেরকম কিছুই হচ্ছে না। এছাড়াও পরিবেশগত কিছু পরিবর্তনও পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করে দিতে পারে।
তিনি আরও বলেছিলেন, পাকিস্তানের বেশিরভাগ পানি আসে হিমালয় থেকে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হিমালয়ের সব হিমবাহ গলে উধাও হয়ে গেলে কাশ্মীর পাকিস্তানের জন্যে আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে পানির উৎসের জন্যে। এনিয়ে যদি সমঝোতা না হয় তাহলে তো যুদ্ধের আশঙ্কাও বেড়ে যায়।
রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যালান রোবোক বলেছিলেন, “পরমাণু অস্ত্র যখন আছে তখন পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কাও আছে। ইতোমধ্যেই এরকম একটি যুদ্ধ হয়ে গেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমায় পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপ করেছিল, যা থেকে আমরা ভবিষ্যতেও এরকম যুদ্ধের আশঙ্কা করতে পারি।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তন, পানি সংকট এবং সন্ত্রাসবাদসহ আরও নানা কারণে উপমহাদেশে পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। জাতিসংঘের এক চুক্তি অনুসারে পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধে বিশ্বজুড়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হলেও ভারত ও পাকিস্তান এখনও তাতে সই করেনি।
সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে সেই আশঙ্কা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরমাণু শক্তিধর দেশ দুটি চরম উত্তেজনার মধ্যে রয়েছে। কাশ্মির ইস্যুকে সামনে রেখে যে কোনো সময় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ লেগে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এএইচ
আরও পড়ুন