ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪

পেট্রাপোল-বেনাপোল চালু করতে ভারতে কেন্দ্রীয় সরকারের কড়া চিঠি

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি:

প্রকাশিত : ২১:০৩, ৭ মে ২০২০

বেনাপোলের বিপরীতে পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে অবিলম্বে আমদানি-রফতানি ব্যবসা চালু করতে ভারতের  পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ করতে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের। দুইদিনের জন্য শুধুমাত্র রফতানি বাণিজ্য চালু হলেও করোনা সংক্রমণের ভয় দেখিয়ে বনগাঁ ও পেট্রাপোলের কিছু শ্রমিক ও রাজনৈতিক নেতারা সীমান্তের বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়। কেন্দ্রের দাবি, এই ঘটনার পর পশ্চিমবঙ্গ সরকার নতুন করে আমদানি-রফতানি চালুর উদ্যোগ নেয়নি। রাজ্যের এই ভূমিকাতেই বেজায় চটেছে কেন্দ্র।

সীমান্ত বাণিজ্য শুরুতে রাজ্য সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় সরকার। সেই কারণেই পেট্রাপোলে স্থলবন্দরে দ্রুত আমদানি-রফতানি শুরু করতে ব্যবস্থা নিতে রাজ্যকে চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব।

মহামারী করোনা আইনের আওতায় পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে ওই বাণিজ্য চালুর ব্যাপারে কেন্দ্র নির্দেশিকা জারি করেছে বলে মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে জানান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভাল্লা। পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে অবিলম্বে পেট্রাপোল সীমান্তে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য চালু করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব।
জানা গিয়েছে, এর আগে গত ২৪ এপ্রিল পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য চালু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার।

এদিকে বেনাপোল কাস্টমস হাউজ ও বন্দরে সীমিত আকারে কার্যক্রম চললেও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর থেকে ২দিন ৩০ এপ্রিল ও ২ মে পণ্য রফতানি করলেও সেটা আবার বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ভারতের কেন্দ্র সরকার এবং রাজ্য প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে লকডাউনের মধ্যেই পেট্রাপোল-বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে রফতানির কাজ শুরু করলেও ২দিন চলার পর আবারো বন্ধ হয়ে যায়। ভারত থেকে বাংলাদেশে পণ্য রফতানি বন্ধ করার জন্য গত ৩ মে ভারতের বনগাঁর ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়তের পেট্রাপোল সীমান্ত লাগোয়া জয়ন্তীপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাসহ এই স্থলবন্দরের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের শতাধিক শ্রমিক এদিন যশোর রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। তাঁদের দাবি সীমান্তের ওপারে অনেক মানুষ করোনা সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছে। এই অবস্থায় ওপার বাংলার শ্রমিকরা এপার বাংলার কাজে যুক্ত থাকলে দ্রুত সংক্রমণ ছড়াবে সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলিতেও। তাই রফতানি হোক বা আমদানি কাজ শুরু হলে করোনা সংক্রমণ কোন ভাবেই ঠেকানো যাবে না। ফলে এলাকাবাসীদের স্বার্থে বন্ধ রাখতে হবে আন্তর্জাতিক সীমান্ত বাণিজ্য।

আমদানি-রফতানির সাথে জড়িত কয়েকজন জানান, বনগাঁ অঞ্চলের কয়েকজন নেতা বাংলাদেশে পণ্য রফতানিতে বিরোধিতা করে বনগাঁর পৌরসভার কালিতলা পার্কিং থেকে কোন পণ্য বোঝাই ট্রাক ছাড়েনি। এসব ট্রাক  সেন্ট্রাল পার্কিংএ থাকার কথা থাকলেও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে কালিতলা পার্কিংএ রাখা হচ্ছে। তারা সাধারণ জনগণকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে আন্দোলন শুরু করে দেয়। কালিতলা পার্কিং এ বর্তমানে ১৯৮৩টি বিভিন্ন ধরণের ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। এসব ট্রাক থেকে বনগাঁ পৌরসভা প্রতিদিন ছোট গাড়ি ৫০ টাকা, ৬ চাকা ৮০ টাকা, ১০ চাকা ১২০ টাকা ও ট্রেলার ১৬০ টাকা হারে পার্কিং চার্জ আদায় করে থাকে। ওখান থেকে পণ্যবাহী ট্রাক গুলো পেট্রাপোল সেন্ট্রাল পাকিংএ এসে পড়লে তাদের আয়ের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। দীর্ঘদিন বনগাঁর একটি সিন্ডিকেট জোরপূর্বক পণ্যবাহী ট্রাক পেট্রাপোল সেন্ট্রাল পাকিংএ না পাঠিয়ে নিজেদের তৈরি কালিতলা পার্কিংএ ট্রাকগুলো ঢুকাতে বাধ্য করে। এ কারণে ভারতীয় এক একটি ট্রাক পেট্রাপোল পার্কিংএ আসতে ১০ থেকে ১৫ দিন সময় নেয়। বলা হয় ট্রাকজটে কারণে অথবা বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ মাল নিচ্ছে না বা বেনাপোল বন্দরে জায়গা নেই এসব অজুহাতে তারা এ কাজটি করে আসছে। মাঝে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনারের হস্তক্ষেপে সরাসরি পণ্যবাহী ট্রাক কোন বেসবরকারি পার্কিংএ না থেকে সরাসরি পেট্রাপোল সেন্ট্রাল পার্কিংএ চলে আসতো এবং দ্রুত পণ্য বাংলাদেশে রফতানি হতো।

ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের ম্যানেজার শুভজিত মন্ডল বলেন, সরকারী ভাবে পেট্রাপোল বন্দর চালু আছে। কিন্তু কিছু সাধারণ জনগণ করোনা সংক্রমণের আশংকায় বনগাঁয় আন্দোলন করায় পণ্য রফতানি বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা খবর রাখছি পরিস্থিতি শান্ত হলে আবার কাজ হবে। 

বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, ভারত থেকে ২দিনে ১৫ ট্রাক পণ্য আমদানি হয়েছে। নোম্যান্সল্যান্ডে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিধিবিধান মেনেই লোড-আনলোড করা হয়েছে। ভারতে জনগণের আন্দোলনের জন্য রোববার থেকে কোন পণ্য আমদানি হয়নি। পেট্রাপোল বন্দর পণ্য দিলে বেনাপোল বন্দরের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সকল প্রকার সহযোগিতা করা হবে। 

বেনাপোল কাস্টমসের সহকারী কমিশনার আকরাম হোসেন চৌধুরী জানান, বেনাপোল কাষ্টমস হাউসের কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে। স্বাস্থ্য বিধি মেনে অফিসাররা কাজ করছেন। সিএন্ডএফ প্রতিনিধিদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, পিপিই, মাস্ক, গ্লোভস পরে ফাইল নিয়ে হাউসে প্রবেশ করছেন।

আরকে//
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি