ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪

প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর: নতুন দিগন্তের উন্মোচন

প্রকাশিত : ১৩:৫৭, ৩০ মে ২০১৯ | আপডেট: ১৩:৫৯, ৩০ মে ২০১৯

সূর্যোদয়ের দেশ জাপান সফরে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বরাবরই জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভালো। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে দেশটি। এবার সেই সম্পর্ক গিয়ে  নতুন মাত্রায় যোগ হয়েছে।

গত মঙ্গলবার সকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি বিশেষ ফ্লাইটে টোকিওর হানিদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

সফরে যাওয়ার আগে জাপানকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেে এক সাক্ষাতকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শৈশব থেকেই জাপান নিয়ে আমার মধ্যে মোহ কাজ করত। আমি জাপানি চিত্রকলা, ক্যালেন্ডার, ডাকটিকিট, পুতুল ইত্যাদি সংগ্রহ করতাম। জাপান সবসময়ই আমার হৃদয়ের কাছে।

বাংলাদেশকে আরেকটি জাপান হিসেবে গড়তে তার বাবার আকাঙ্ক্ষার কথা তুলে ধরেন।

শিশুকাল থেকে জাপানকে নিয়ে নিজের টানের কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে এটা তার মধ্যে প্রবাহিত হয়েছে।

জাপানকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এমন স্মৃতিচারণ ভবিষ্যতে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হবে বলেই সবার বিশ্বাস।

প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে অনেক আশ্বাস দিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। বাংলাদেশের উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন পূরণে জাপানের সহায়তা অব্যাহত রাখারও আশা ব্যক্ত করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী।

শিনজো আবে ও শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য জাপানের সঙ্গে ২৫০ কোটি ডলারের উন্নয়ন সহায়তা চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার।

চুক্তির পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি আমরা। এ লক্ষ্য পূরণে জাপান আমাদের পাশে থাকবে ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে যাবে বলে প্রধানমন্ত্রী আবে আমাকে নিশ্চিত করেছেন। জাপান এককভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগী। ১৯৭২ সাল থেকে দেশটির কাছ থেকে বাংলাদেশ এক হাজার ১৩০ কোটি ডলারের সহায়তা পেয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্পগুলোর দুটি ৩৬ হাজার কোটি টাকার মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বন্দর এবং ২২ হাজার কোটি টাকার মেট্রোরেল প্রকল্পের বেশিরভাগ অর্থই দিচ্ছে জাপান।

বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে জাপানের জন্য বিশেষ জায়গা রয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা স্বাধীনতার পর থেকেই জাপানের সহায়তার কথা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। জাপানের ঐতিহাসিক উন্নয়নে তিনি প্রভাবিত হয়েছিলেন। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর আমরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই বলতে পারি যে, সেই কাক্সিক্ষত স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এখন আমরা সঠিক পথ ধরেই এগিয়ে চলেছি।

জাপানের সঙ্গে করা ২৫০ কোটি ডলারের উন্নয়ন সহায়তা চুক্তির অর্থে মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প, ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-১), বিদেশি বিনিয়োগ সহায়ক প্রকল্প (২), জ্বালানি দক্ষতা ও সুরক্ষা সহায়ক প্রকল্প (পর্যায়-২) ও মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে (৫) অর্থায়ন করা হবে।

তিনি বলেন, ‘এই ঋণ প্যাকেজের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী আবেকে ধন্যবাদ জানাই।’ শেখ হাসিনা বলেন, এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, জাপান সব সময় আমাদের পাশে আছে।

শিনজো আবের সঙ্গে বৈঠকের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতাকে আরও শক্তিশালী ও সম্প্রসারণ করার বিষয়ে বেশ কিছু নতুন ধারণা (আইডিয়া) নিয়ে আলোচনা করেছি। সম্ভাব্য যেসব ক্ষেত্র থেকে দুই দেশই লাভবান হতে পারে, সেগুলো নিয়ে কাজ করার বিষয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীই একমত বলে জানান তিনি।

রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টিও উঠে আসার কথা জানিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসা ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার মানবিক ও রাজনৈতিক সংকটের বিষয়ে টেকসই ও দ্রুত সমাধানের উপায় খোঁজার বিষয়ে তারা একমত হয়েছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি জাপান অনুভব করতে পারছে। মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরে যাওয়ার মতো সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন বলেও মনে করে তারা।

এছাড়া টোকিওতে জাপান-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে জাপানের প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি জাপানি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ করে বলেন, আমরা আমাদের রফতানি বাণিজ্যে বৈচিত্র্য দেখতে চাই। এক্ষেত্রে জাপানি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে রফতানিকেন্দ্রিক খাতগুলোয় বিনিয়োগে নতুন ক্ষেত্র অনুসন্ধানের আহ্বান জানাই।’

বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে জাপানের চুক্তিগুলো বাস্তবায়ন হলে নিঃসন্দেহে এটি হবে জাতির জন্য একটি মাইলফলক। পাশাপাশি দেশ এগিয়ে যাবে, উন্নত হবে বাংলাদেশের অবকাঠামো।  উন্মেচিত হবে নতুন দিগন্তের।


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি