ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৯ মে ২০২৪

প্রবাস কত সুখের!

ফয়সাল আহাম্মেদ দ্বীপ

প্রকাশিত : ১৪:৩০, ৮ আগস্ট ২০২২ | আপডেট: ১৪:৪৭, ৮ আগস্ট ২০২২

মানুষ উন্নত জীবনের আশায়, জীবিকার সন্ধানে বা ভবিষ্যৎ সুখের প্রত্যাশায় দেশ থেকে দেশান্তরী হয়। কখনো নিজ দেশে অধিকার বঞ্চিত হয়ে কিংবা চাকচিক্যময় জীবনের আশায় পরিবার-পরিজন, প্রিয় মানুষদের ছেড়ে, মাতৃভূমির মায়া ত্যাগ করে প্রবাস জীবন বেছে নেয়। আর এভাবেই অজানা-অচেনা দেশে শুরু হয় প্রবাস জীবন।   

দেশ ত্যাগের পূর্বে মনের কোণে যতটা রাগ ক্ষোভ ঘৃণা জমে থাকে তা বিমানের ওঠার সঙ্গে সঙ্গে মানসপটে ভেসে উঠে। ওই সময় প্রিয় মানুষদের ছেড়ে যেতে হৃদপিণ্ড ছিঁড়ে যায়। নানা স্মৃতি মনকে নাড়া দেয়, মনটা হু হু করে কেঁদে উঠে। বুকটা ভারি হয়ে আসে। ফোঁটা ফোঁটা অশ্রুই হয় তখন জীবনের সঙ্গী। এভাবেই চলতে থাকে প্রবাস জীবন।   

নতুন বিদেশ গেলে নিজের মাতৃভাষার বাহিরে অন্যান্য ভাষাভাষি মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়। অন্য সংস্কৃতির মানুষদের মিলনমেলায় মনে হয় এটা অন্য আরকেটা জগৎ। এভাবে প্রবাসে নিজেকে মানিয়ে নিতে নিতে কেটে যায় মাস খানেক।

মায়ের হাতের নানা রকমের সুস্বাদু খাবার আর অলস সময়ে বন্ধুদের আড্ডা মনে করিয়ে দেয় প্রবাসে কাজের নিয়মনীতির কথা। কাজ আর বাসায় অবসরে মোবাইল বা ডায়েরীতে যত নাম্বার আছে সেগুলিতে ফোন করে করে কেটে যায় দিন-রাত্রি। বৈকালিক পার্কে যাওয়ার পথ ধরে মনে হয় এ যেন এক অচিনপুরী, যেখানে ধূলা আর কাদা ভরা রাস্তায় বাতাসের গন্ধে এ গ্রাম ও গ্রাম দাপিয়ে বেড়াতাম, পিচ ঢালা এই মসৃণ পথে নেই কোন গন্ধ- সুবাস, মনের অজান্তে এভাবেই চোখের কোণে জল আসে আর আমাকে স্বরণ করিয়ে দেয় আমি তো প্রবাসী। 

পরিবারের সুখের কথা ভেবে এভাবে মাস, বছর পেরিয়ে যায়। ঈদ, পূজা পার্বণে প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দ ভাগা-ভাগি করতে না পারার কষ্ট নিয়ে চলে যায় দিন। পরিবারের বখাটে ছেলেটাও প্রবাসে এসে নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠে। পরিবারের সবচেয়ে আদূরে ছেলেটাও যে কিনা জীবনে নীজের কাপড়ও নিজে গুছিয়ে রাখেনি, সে কিনা আজ রান্না করে, ঘর পরিস্কার রাখে, সময় মতো কাজে যায় আর মাস শেষে মাইনেটা পাঠিয়ে দেয় প্রিয়জনের কাছে। আর এভাবেই প্রবাসীরা পরিবার সচ্ছল করার পাশাপাশি অবদান রাখে জাতীয় অর্থনীতিতে। 

আজকাল প্রায়ই কম বয়সেও স্ট্রোক করে মারা যাচ্ছেন অনেক প্রবাসী। একেতো দূর পরবাসে প্রিয়জনের কাছে না থাকার বেদনা; অন্যদিকে পরিবারের চাপ আরও চাই। সবার অভাব দূর করতে করতে নিজের চাহিদাটাও ভুলে যাওয়ার নামই প্রবাস। নিজে যতটা দুঃখে কষ্টে থাকুক না কেনো টেলিফোনের ওপাশে সবসময় সুখটা দেখার নামই প্রবাস। 

প্রবাস নিয়ে গল্প হয়, উপন্যাস হয়, ছায়াছবি হয় কিন্তু প্রবাসীর ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না। কারণ প্রবাস জীবনটা একটা জেলখানার জীবনের মতো, চাইলেই দেশে চলে যাওয়া যায় না। অনেক সময় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা খরচ করে, জীবনের মায়া ত্যাগ করে, সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে মৃত্যু ঝুঁকি মাথায় নিয়ে অনেকেই প্রবাস জেলকে বেছে নেন। তাই এখান থেকে পালাবার পথ নেই। প্রবসীরা যা পেয়েছে তা হলো রেমিটেন্স যোদ্ধার খেতাব। এটাই একজন প্রবাসীর গর্ব বা অহংকার। 

মায়ের আঁচল আর প্রিয়জন ছেড়ে, মাটির সোঁদা গন্ধ মাড়িয়ে বলতে হয়, সত্যিকার অর্থে প্রবাস কত সুখের? এই প্রশ্ন আমার, একজন প্রবাসীর।

লেখক: প্রেসিডেন্ট, অল ইউরোপ বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব।
 

এসি


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি