ঢাকা, বুধবার   ০১ মে ২০২৪

প্রাকৃতিক দুর্যোগে জারিকৃত সংকেতের অর্থ কী

প্রকাশিত : ১৪:৫৬, ৪ মে ২০১৯

প্রায় ৪ যুগের রেকর্ড ভেঙ্গেছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফনী। গতকাল ভারতের উড়িষ্যার উপকূলবর্তী এলকায় আঘাত হেনে এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। ইতোমধ্যে ফলীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। বাংলাদেশে বড় কোন প্রভাব সৃষ্টি না করতে পারলে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফনির প্রভাবে বজ্রপাতে ও বিদ্যুস্পৃষ্ট ও ঘরচাপা পড়ে সারাদেশে ১৮ জন নিহত হয়েছে।

ভারতের‘ হিন্দুস্তান টাইমস’বলছে, সর্বশেষ ৪৩ বছরে গ্রীষ্মকালে এমন ঘুর্ণিঝড় ভারতে আঘাত হানেনি। শনিবার সকাল পর্যন্ত দেশটি এ সংবাদ পত্রের সূত্র অনুয়ায়ী,ঝড়ের কারণে প্রাণহানীসহ সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়েছে। শুক্রবার রাতে ও শনিবার সকালে বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের উপর দিয়ে ঘুর্ণিঝর ফণী অতিক্রম করে। বাংলাদেশেও প্রাণ হানি ঘটিয়েছে ঘুর্ণিঝড় ফনি। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় কিছুদিন আগেই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যাপক পদক্ষেপ হাতে নিয়েছিল।

এখনও দেশ থেকে ফনির প্রভার পুরোপুরি কাটেনি বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়। আবহাওয়া অধিদপ্তর দেশের সমুদ্র ও নদী বন্দরগুলোর দুর্যোগকালীন সংকেত অব্যহত রেখেছে। মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ও অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ নম্বর বিপদ সংকেত বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৪ স্থানীয় হুঁশিয়ারী সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এই ঝুর্ণিঘড়কে কেন্দ্র করে ব্যপক প্রস্তুতি নিয়েছিল সংশ্লিষ্ট কর্তৃকক্ষ। এ দিকে ক্ষয় ক্ষতির মাত্রা যেন কম থাকে এ জন্য আবহাওয়া দপ্তর আগেই উপকূলসহ বিভিন্ন এলাকায় দুর্যোগ কালীন সংকেত জারি করেছে। এই দুর্যোগকালীন সংকেতের অর্থ বোঝাটা বেশ জরুরি।

১ নং দূরবর্তী সতর্ক সংকেত; এ সময় বাতাসের গতিবেগ হবে ঘন্টায় ৫১-৬১ কিলোমিটার। ফলে সামুদ্রিক ঝড়ের সৃষ্টি হতে পারে। বন্দও ছেড়ে যাওয়া জাহাজ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সম্মুখিন হতে পারে।

২ নং দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত; এ সমং বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ৬২-৮৮ কিলোমিটার। এটি মূলত ১ নং দূরবর্তী সতর্ক সংকেতের মতো দূরবর্তী সমুদ্রের জন্য প্রযোজ্য। বন্দর এখনই ঝড়ে কবলিত না হলেও বন্দর ত্যাগকারী জাহাজ পথে বিপদে পড়তে পারে।

৩ নং স্থানীয় সতর্ক সংকেত; এটি সমূদ্র বন্দও উপকূলীয় অঞ্চল ও নদীবন্দরের জন্য প্রযোজ্য হবে। এর ফলে বন্দরের আশে পাশে বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার হতে পারে। উত্তর বঙ্গোবসাগওে এবং নদীতে চলাচলকারী ৬৫ ফুট এবং কম দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট নৌযানগুলোকে অতি সত্তর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে।

৪ নং স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত; এটি সমুদ্রবন্দও ও উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য প্রযোগ্য হবে। এর ফলে বন্দও ও আশেপাশের এলাকা ঘুর্ণিঝড় কবলিত হবে। বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ঘণ্টায় ৫১-৬১ কি.মি.।

৫ নং বিপদ সংকেতদ; বন্দর ছোট বা মাঝারি তীব্রতর এক সামুদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়বে। বাতাসের গতিবেগ সর্বোচ্চ ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হবে। বন্দরকে বাম দিকে রেখে ঝড়টি উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

৬ নং বিপদ সংকেত; এ সময় মাঝারি তীব্রতা সম্পন্ন সামুদ্রিক ঘুর্নিঝড়ের কারনে বন্দও ও তৎসংলগ্ন এলাকায় মাঝারি ঝড়ো আবহাওয়া বিরাজ করবে। এ সময় ঘন্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো গাওয়া বয়ে যেতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগর এবং নদীতে চলাচলকারী সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে। ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

৭ নং মহাবিপদ সংকেত; এ সময় প্রচন্ড তীব্রতা সম্পন্ন সামুদ্রিক ঘুর্নিঝড়ের কারনে বন্দরে অতি তীব্র ঝড়ো হাওয়া বিরাজ করবে। প্রচন্ড এ ঘুর্নিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার হতে পারে। ঝড়টি বন্দরের উপর বা এর নিকট দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে।

৮ নং মহাবিপদ সংকেত; এটি তীব্রতা সম্পন্ন একটি সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় যার কারণে বন্দর এলাকা এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অতি তীব্র ঝড়ো আবহাওয়া বিরাজ করবে। হ্যারিকেনের তীব্রতা সম্পন্ন প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ১১৮ থেকে ১৭০ কিলোমিটার হতে পারে। এই সংকেত জারি হওয়ার পর উপকূলে বসবাসকারী সকলকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে।

৯ নং মহাবিপদ সংকেত; এ সময় অতি প্রচন্দ তীব্রতা বিশিষ্ট বা সুপার সাইক্লোনের তীব্রতা বিশিষ্ট প্রচন্ডতম একটি মাসুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কারনে বন্দও এলাকায় অতীব তীব্র বঞ্জাবিক্ষুব্দ ঝড়ো আবহাওয়া বিরাজ করবে। সর্বোচ্চ তীব্রতা বিশিষ্ট এ ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ১৭১ কিলোমিটার বা আরও বেশি হতে পারে। প্রকান্ড এ ঝড়টি বন্দরকে ডান দিকে রেখে উপকূল অতিক্রম করবে।

১০ নং মহাবিপদ সংকেত; বন্দর প্রচন্ড বা সর্বোচ্চ তীব্রতর এক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়বে। ঝড়ে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কি.মি.বা তার বেশি হতে পারে।

১১ নং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সংকেত; আবহাওয়ার বিপদ সংকেত প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং স্থানীয় আবহাওয়া কর্মকর্তা পরিস্থিতি দুর্যোগপূর্ণ বলে মনে করেন।

টিআর/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি