ঢাকা, রবিবার   ০৪ মে ২০২৫

প্রার্থনা করিয়ে ধর্ষণ, ইয়াজেদী নারীর দুঃখগাথা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:২১, ২৫ নভেম্বর ২০১৭

Ekushey Television Ltd.

২০১৪ সালের উত্তর ইরাক। ইয়াজেদি সম্প্রদায়ের একটি গ্রাম কোচো। বেশিরভাগ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে। তবুও আনন্দ আর হাসির অভাব নেই সেখানে। সবই ঠিকঠাক চলছিল। হঠাৎ আইএস জঙ্গিরা হানা দেয় সাজানো গোছানো সে গ্রামে। খুন, ধর্ষণ, লুটপাট এর সঙ্গে সঙ্গে বন্দী করা হচ্ছিল গ্রামবাসীদের। মেয়েদেরকে আলাদা করে নিয়ে যাওয়া হয় মসুলে। তাদেরই একজন নাদিয়া মুরাদ।

নিজের বন্দী জীবনের অভিজ্ঞতা সবার কাছে তুল ধরতে কলম হাতে নিয়েছেন নাদিয়া। ‘দ্য লাস্ট গার্ল’ শিরোনামে বইটিতে আইএস জঙ্গিদের হাতে বন্দী নারীদের নির্মম নির্যাতন যন্ত্রণার কথা তুলে ধরেন তিনি। প্রায় ৩ বছর আগে বন্দী দশা থেকে মুক্তি পাওয়া এ ইয়াজেদী নারী বলেন, কাউকে না কাউকে তো এই কথা তুলে ধরতেই হত। বিশ্ববাসী জানুক কীভাবে ইয়াজেদী নারীদের ওপর অত্যাচার চালায় আইএস।

গ্রামের একটি স্কুলে এনে বন্দী করা হয় সবাইকে। পুরুষদের আলাদা করে স্কুলের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। নাদিয়া শুধু ভিতর থেকে ব্রাশ ফায়ারের আওয়াজ শুনতে পান। নিজের ছয় ভাইকে সেদিন হারান নাদিয়া। তারপর অন্যদের সাথে মসুলের বন্দী শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানেই যৌনদাসী হিসেবে বিক্রিত হন তিনি।

নাদিয়া বলেন, বাসে করে যাওয়ার সময় থেকে শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন। একজন আমার তলপেটে জ্বলন্ত সিগারেট চেপে ধরে।সেই আমাকে কিনে নেয়। বন্দী জীবনের সেসব দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে ইয়াজেদী এ নারী বলেন, “ইউরোপ, সৌদি আরব, তিউনিশিয়া থেকে প্রচুর জঙ্গি আসত। আর তারা নিত্য দিন ধর্ষণ করত আমাকে। ধর্ষণ আগে প্রার্থনা করিয়ে নিত।

তবে এতকিছু পরেও হাল ছাড়েননি নাদিয়া মুরাদ। বন্দী দশার শুরু থেকেই পালানোর সুযোগ খুঁজতেন তিনি। একবার চেষ্টা করে ধরাও পরেন। এরপর শুরু হয় গণধর্ষণ। আবারও সুযোগ পেয়ে যান তিনি। একদিন ধর্ষণ শেষে এক জঙ্গি দরজা বন্ধ না করেই চলে যান। এ সুযোগটিই কাজে লাগান তিনি। ‘ধরা পড়লেই নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও সাহস ভর করে বেড়িয়ে পরেছিলাম’-বলেন নাদিয়া। আর পিছু ফিরে তাকাননি তিনি। ক্লান্ত নাদিয়া মসুলের একটি বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। ঐ বাড়ির বাসিন্দারাই তাকে পরবর্তীতে মসুল থেকে পালিয়ে আসতে সাহায্য করে।

মুরাদ বলেন, মসুলে প্রায় ২০লাখ মানুষ বাস করে। আর সেখানে জঙ্গিদের হাতে ২ হাজার মেয়ে বন্দী হিসেবে আটক আছেন। তবে তাদের সাহায্যে কেউ এগিয়ে আসে না। যারা সাহায্য করতে চায় তারা বিনিময়ে হাজার হাজার ডলার দাবি করে। 

জঙ্গিদের হাতে নাদিয়ার মত বন্দী নারীদের কথা তুলে ধরতেই এ বই লিখেছেন বলে জানান জাতিসংঘের ‘গুডউইল এম্বাসেডর’ নাদিয়া। তিনি বলেন, জানি কী দুর্বিষহ দিন কাটাচ্ছেন তারা! নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই আজ সেইসব নারীদের কাহিনী তুলে ধরছি।

২০১৫ তে পালিয়ে আসার পর জার্মানির একটি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় পান নাদিয়া। এরপর জাতিসংঘের ‘গুডউইল এম্বাসেডর’ হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০১৬ সালে জাতিসংঘের মানবাধিকার পুরুষ্কার পান নাদিয়া মুরাদ। ‘পেঙ্গুইন র‍্যান্ডম হাউস’ এর প্রকাশনায় বইটি গত ৭ নভেম্বর প্রকাশ পায়।

সূত্রঃ দ্য টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট

//এস এইচ এস// এআর

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি