ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

ফের আলোচনায় সেই তাসমিনা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:৩৯, ২০ জানুয়ারি ২০১৯ | আপডেট: ২২:১৭, ২০ জানুয়ারি ২০১৯

আবারও আলোচনায় ঘোড়দৌড় বিজয়ী তাসমিনা। সর্বশেষ বগুড়ার গাবতলীর হেলেঞ্চার মাঠে অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অন্য প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে ঘোড়ার পিঠে তার ছুটে চলার দৃশ্য দর্শকদের মুগ্ধ করে। গত শুক্রবার বিকেলে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হয় সে।

কোনো মেয়ে ঘোড়ায় চেপে বাতাসে চুল উড়িয়ে প্রতিযোগিতার মাঠে তীরের বেগে ছুটে যাচ্ছে—এমন দৃশ্য সিনেমায় দেখা গেলেও বাংলাদেশে গ্রাম-শহরে প্রায় অকল্পনীয়। সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে ১৪ বছরের তাসমিনা আক্তার। দেশের উত্তরাঞ্চল তো বটেই, গাজীপুর, ময়মনসিংহ এলাকায়ও ছিপছিপে গড়নের এ বালিকা তুখোড় ঘোড়সওয়ার হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছে।

তাসমিনা খাতুন। বাড়ি নওগাঁ জেলার ধামইরট উপজেলার চকসুবল গ্রামে। বাবা ওবায়দুল, মা তহুরা আক্তার। পড়াশুনা করে শঙ্কারপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় পঞ্চম শ্রেনিতে। ছোটাবেলা থেকেই নেশা ঘোড়া ছোটানো। সেই নেশা থেকেই তাসমিনার সারাদিন কাটে ঘোড়ার পিটের উপর চড়ে।

ঘুম থেকে উঠে একমুঠো খেয়ে ঘোড়ার পিঠে উঠে বসে তাসমিনা। দুপুরে এসে একটু খেয়ে আবারও ঘোড়া নিয়ে বের হয়। দেশের বিভিন্নস্থানে প্রতিযোগিতার কথা শুনলেই ছুটে চলে তাসমিনা। কিন্তু দারিদ্রের কারণে তাসমিনের বাবা তার ঘোড়াটি বিক্রি করে দেয়। এরপর প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার মতো নিজের ঘোড়া না থাকলেও মেয়েটির এমন আগ্রহ উলফাত কাদের নামের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘোড়া ভাড়া নেন তারা বাবা। এরপরই নজর কাড়া পারফরমেন্সের পর তাকে একটা ঘোড়া উপহার দেন। কিন্তু ঘোড়াটির এক চোখ অন্ধ থাকার কারণে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারতো না ঘোড়াটি। তবুও থেমে থামাতে পারেনি তাসমিনাকে। কোথাও ঘোড়া প্রতিযোগিতা হবে শুনলেই তাসমিনাকে নিয়ে ছোটেন তার বাবা। নিজের ঘোড়া অন্ধ হওয়ার কারণে তাসমিনা অন্যের ঘোড়াকে জিতিয়ে নিতে কাজ করতেন। তার বদলে তার নাম ঘোষিত হয় বিজয়ী হিসাবে। তবে সব পুরস্কার ঘোড়ার মালিককে দিয়ে খালি হাতেই ঘরে ফিরতো তাসমিনা।

সাত বছরের শিশু তাসমিনা বর্তমানে ১৪ বছরের কিশোরী। এরই মধ্যে সে হয়ে উঠেছে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ঘোড়সওয়ার। যেকোনো প্রতিযোগিতায় সবাইকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যায় তাসমিনার দুরন্ত ঘোড়া। প্রতিযোগিতা দেখতে আসা হাজারো দর্শকের হর্ষধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার ময়দান। বারবার জয়ী হয়ে তাসমিনা তার ভক্তকুলকে নির্মল আনন্দে ভাসিয়ে দেয়।

নওগাঁর মেয়ে তাসমিনা এরইমধ্যে প্রায় অর্ধশত ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। তার মধ্যে অন্তত ৩০টিতে অধিকার করেছে প্রথম স্থান। তাসমিনার পাওয়া পুরস্কারের তালিকাটি যথেষ্ট দীর্ঘ। তাসমিনা খাতুন সাহস, শক্তি, সংকল্প ও নারী ক্ষমতার স্বীকৃতি সরূপ এবছর তাকে নাসরীন স্মৃতি পদক প্রদান করছেন একশন এইড।

সর্বশেষ বগুড়ার গাবতলীর হেলেঞ্চার মাঠে অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অন্য প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে ঘোড়ার পিঠে তার ছুটে চলার দৃশ্য দর্শকদের মুগ্ধ করে। গত শুক্রবার বিকেলে অনুষ্ঠিত এই প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হয় সে। স্থানীয় এলিট বয়েজ ক্লাব এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে ৪০টি ঘোড়া অংশ নেয়। এতে একমাত্র নারী প্রতিযোগী ছিল নওগাঁর ধামুইরহাটের ঘোড়সওয়ার তাসমিনা।

এবারের প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার হিসেবে গরু উপহার দেওয়া হয়। দ্বিতীয় পুরস্কার ছিল ছাগল। এ ছাড়া আরো ২০টি মোবাইল ফোনসেট উপহার দেওয়া হয়। বাবা আনোয়ার হোসেন বলেন, ইদানীং তাঁর মেয়ে হারিয়ে দিচ্ছে পুরুষ ঘোড়সওয়ার প্রতিদ্বন্দ্বীদের। ক্রমে উত্তরাঞ্চল ছাড়িয়ে তার নামডাক ছড়িয়ে পড়ছে। যার কারণে যেকোনো স্থানে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন হলেই তাঁর মেয়ের ডাক পড়ে। তাসমিনা জানায়, তার আরো বড় ঘোড়সওয়ার হওয়ার ইচ্ছা আছে পাশাপাশি পুলিশ হাওয়ার স্বপ্ন আছে। এ জন্য সে অনুশীলন অব্যাহত রাখবে। পড়ালেখার পাশাপাশি সে এটি চালিয়ে যেতে চায়।

 

 টিআর/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি