ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘বনকর্তা যে নির্যাতন করে জলদস্যুরাও তা করে না’

আবুল হাসান, মোংলা

প্রকাশিত : ১৬:০৫, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

সুন্দরবনে জেলেদের হাত পা বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করেন এমন এক বনকর্তার বিরুদ্ধে টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি হচ্ছেন পশ্চিম সুন্দরবনের ভদ্রা ক্যাম্পের ওসি রবিউল। তার বিরুদ্ধেই এই অভিযোগ করেছেন জেলেরা।

তারা বলেন, ‘এর চেয়ে বনের দস্যুরাই ভাল ছিল, যে নির্যাতন বনকর্তারা করেন জলদস্যুরাও তা করেন না।’

তবে ওসি রবিউল জেলেদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। 

অভিযোগ উঠেছে, গত মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) তাদের ওই ক্যাম্পে হাত পা বেঁধে পায়ের পাতায় পিটিয়ে জেলে ইয়াসির সর্দারের কাছ থেকে ৩০ হাজার, শ্যামল সর্দারের কাছ থেকে ৩০ হাজার, নির্মল রায়ের কাছ থেকে ৪০ হাজার এবং রমেশের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা জোর করে নেন ওসি। 

অভিযোগে আরও জানা যায়, জলদস্যুদের হাতে জিম্মি আছে এমন মিথ্যে তথ্য দিয়ে জেলেদের বাড়িতে ফোন করে এসব টাকা নেওয়া হয়। নির্যাতনের শিকার এসব জেলেদের বাড়ি মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের সুন্দরতলা ও গিলারখালকুল এবং খুলনা জেলার দাকোপের আমতলা ও ঢাংমারীর ভোজনখালী এলাকায়। 

জেলে নির্মল, আলমগীর, নুর ইসলাম, বাসুদেব ও আল আমিন বলেন, গত ২১ ফেব্রুয়ারি পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই ষ্টেশন ও ঢাংমারী ষ্টেশন থেকে বনের আভ্যন্তরীণ খালে সাদা মাছ ধরার জন্য পাস পারমিট (বনবিভাগের অনুমতি পত্র) নিয়ে পাঁচটি নৌকাসহ তারা মাছ ধরতে যান।

পরে পশ্চিম সুন্দরবনের ভদ্রা ক্যাম্পের ওসি রবিউল এবং ওই ক্যাম্পের ট্রলার মাঝি বাদশা ১০ জন জেলেকে ধরে নিয়ে ক্যাম্পে আটকে রাখেন। অবৈধভাবে বনের ভিতরে মাছ শিকারের দোহাই দিয়ে তাদের কাছে ওসি রবিউল দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।

কিন্তু জেলেরা তাদের বনবিভাগ কর্তৃক পাসপারমিট দেখালে আরও ক্ষীপ্ত হন ওসি। এসময় জেলেদের পাঁচটি নৌকায় থাকা সাড়ে তিন মন কোরাল, কাইন ও জাবাসহ কয়েক প্রকার সাদা প্রজাতির মাছ পুলিশের ওই কর্মকর্তা লুটে নেন বলেও জেলেরা অভিযোগ করেন। 

পরে ওই ওসি জেলে আল আমিন, নির্মল, আলমগীর ও রমেশ রায়কে হাত পা বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করেন। এক পর্যায়ে জলদস্যুরা তাদের জিম্মি করেছে বলে জেলেদের বাড়িতে ফোন দিতে বলেন। নির্মম নির্যাতনের ভয়ে জেলেরা বাড়ি থেকে বিকাশের মাধ্যমে ওসি রবিউলকে টাকা এনে দেন। 

চারদিন পর ২৫ ফেব্রুয়ারি ওসির ব্যক্তিগত বিকাশ নাম্বারে দুপুর ২টা ৩১ মিনিটে ১৫ হাজার এবং ২টা ৩৬ মিনিটে আরেকটি বিকাশ নাম্বারে ১২ হাজার ২৫০ টাকা নেন। ওসির চাহিদা অনুযায়ী এক লাখ ৩০ হাজার টাকার বাকি টাকা ভদ্রা ক্যাম্পের ট্রলার মাঝি বাদশার স্ত্রীর মাধ্যমে নেন বলেও জেলেরা জানান। 

এ ঘটনায় জেলেরা বনবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে জানা গেছে। 

এদিকে পশ্চিম সুন্দরবনের ভদ্রা ক্যাম্পের ওসি রবিউলের কাছে জেলেদের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে টাকা নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কোন জেলেকে আটকাইনি, কাউকে নির্যাতন করিনি।’

একথা বলেই তিনি ফোন কেটে দেন। আর ট্রলার মাঝি বাদশার নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। 

ওসি রবিউল ইসলাম কর্তৃক জেলেদের আটকিয়ে নির্যাতন ও টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনা বন সংরক্ষক (চি এফ) মঈন উদ্দিন খাঁন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে পশ্চিম সুন্দরবন বিভাগের ডিএফওকে (বিভাগীয় বনকর্মকর্তা) তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলব।’

এআই/ 


 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি