ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

বাঁশের সেতু কোমর পানির নিচে: দূর্ভোগে ৯ গ্রামের মানুষ

মেহেরপুর প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ২২:৪৯, ৩০ আগস্ট ২০২০ | আপডেট: ২২:৫১, ৩০ আগস্ট ২০২০

মেহেরপুরের গাড়াবাড়িয়ায় ভৈরব নদীর উপরের বাঁশের সেতুটি অতি বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে এখন কোমর পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে সেতুটি দিয়ে পারাপার করা ৯টি গ্রামের মানুষ এখন চরম দূর্ভোগের মধ্যে দিন যাপন করছে। ওই এলাকার মানুষ দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে একটি ব্রীজ নির্মাণ করার জন্য আবেদন করে আসলেও এখন পর্যন্ত কোন সাড়া মেলেনি কর্তৃপক্ষের।

অথচ মেহেরপুর শহর থেকে উত্তরাঞ্চলের সেতুগুলোর মধ্যে  সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যাস্ততম সেতু হচ্ছে গাড়াবাড়িয়া সেতু। ভৈরব নদী খননের পর ওই সেতুর আশপাশে কম গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় চারটি ব্রীজ নির্মাণ করা হলেও গাড়াবাড়িয়া সেতু আজও নির্মাণ করা হয়নি। এলাকার সংসদ সদস্য এলজিইডি থেকে বার বার আশ্বাস দিলেও সেতুটি বাস্তবায়নে কেউ এগিয়ে আসেনি।

গাড়াবাড়িয়া গ্রামের বিশিষ্ঠ সমাজ সেবক ও সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্জ্ব আমিনুল ইসলাম বলেন, শত বছর পূর্বে মেহেরপুরের ভৈরব নদীতে গড়ে উঠে গাড়াবাড়িয়া-হিমিতমপাড়া খেয়া ঘাট। আগে নৌকা করে মানুষ পারাপার করলেও এখন সে ব্যবস্থা আর নেই। ভৈরব নদী খনন করার পর এলাকাবাসি উদ্যোগি হয়ে প্রায় ৭৫ ফুট দীর্ঘ একটি বাঁশের সেতু তৈরী করে। যা দিয়ে প্রতিদিন ৯টি গ্রামের হাজারো মানুষ পারাপার করে আসছিল। 

এই বর্ষায় লাগাতার ভারি বর্ষণ ও ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে সেতুটি এখন পানির নিচে তলিয়ে গেছে। যার কারণে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে আমাদের। দীর্ঘ বাঁশের সেতুটি দুর্বল কাঠামোর উপর দাঁড়িয়ে আছে। তার পরেও মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতি প্রয়োজনে কোমর পানি ভেঙ্গে সেতু দিয়ে পারাপার করছে। সেতুটি ভেঙ্গে গিয়ে যে কোন সময় মারাত্মক দূর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে জানান তিনি। 
 
বিশিষ্ঠ ব্যাবসায়ী কুতুব উদ্দিন বলেন, নদীর পূর্ব দিকে খেয়া ঘাট সংলগ্ন গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামটি ওই এলাকার মানুষের ব্যাবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসার একমাত্র ভরসা স্থল। ফলে প্রয়োজনের তাগিদে শত বছর ধরে ভৈরবের পশ্চিম দিকের হিতিমপাড়া, শোলমারী, ভিটিরমাঠ, বালিরমাঠ, রুদ্রনগর, শুভরাজপুর, কুতুবপুর, শিবপুর, চাঁদপুরের মানুষ ওই খেয়া ঘাট দিয়ে যাতায়াত করে আসছেন। 

ছেলে-মেয়েরা কষ্ট করে ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার করে স্কুল কলেজে যায়। গাড়াবাড়িয়াতে সপ্তাহে শুক্র, রবি, মঙ্গলবার হাট বসে। বাঁশের সেতুটি ডুবে যাওয়ায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজি হাটে নিতে পারছে না।
  
হিতিমপাড়া  গ্রামের, শিক্ষার্থী রুবাইয়া, তাসনিমুন, সজল জানায়, এমনিতেই নড়বড়ে বাঁশের সেতুতে উঠতে ভয় লাগে। তার উপরে এবার সেতুটি ডুবে গেছে। অবকাঠামো দুর্বল হয়ে যাবে এখন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে সেতুর কারনে আবার লেখা পড়া বন্ধ হবার উপক্রম হয়ে যাবে। আমাদের দুর্ভোগের কথা কেউ চিন্তা করছে না। স্থানটি দিয়ে দ্রুত ব্রীজ নির্মাণের দাবি তাদের। 

গাড়াবাড়ীয়া গ্রামের বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, হিতিমপাড়া-গাড়াবাড়ীয়া খেয়া ঘাটে সেতুর দাবি এলাকাবাসির দীর্ঘদিনের। অসুস্থ মানুষ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় ভোগেন তারা। নদীতে ব্রীজ না থাকায় সঠিক সময়ে রুগি হাসপাতালে নিতে অসুবিধা হয় ফলে কখনও কখনও বড় ধরনের দূর্ঘটনাও ঘটে যায়। বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনে জেতার জন্য এলাকার জনপ্রতিনিধিরা এখানে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রতি দেন। ভোটে পাস করার পর আর প্রতিশ্রুতির কথা মনে রাখেন না।
 
গাংনী উপজেলার কাথুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান রানা বলেন, ওই স্থানে সেতু না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে ব্রীজ নির্মাণ করা সম্ভব হবে।

মেহেরপুর এলজিইিডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, ভৈরব নদরী উপর দিয়ে হিতিমপাড়া-গাড়াবাড়িয়া পুরাতন খেয়াঘাটে ব্রীজ নির্মাণের জন্য আবেদন পেয়েছি। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে সেখানে ব্রীজের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে মেহেরপুর এলজিইডি থেকে ঢাকায় অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।
 
মেহেরপুর-২ (গাংনী)  আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন বলেন, ওই এলাকার মানুষের দুর্দশা লাঘবে ব্রীজটির নির্মাণ হওয়া একান্ত জরুরী। আমি ব্রীজটি যেন দ্রুত নির্মাণ করা সম্ভব হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরে অবহিত করাসহ তাগিদ দিয়ে যাচ্ছি।  

আরকে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি