ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ আমাদের বাবা-মা’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৩৪, ২৫ আগস্ট ২০১৮

উদ্বাস্তু-শরনার্থীদের জন্য পৃথিবীর প্রায় সব দেশ দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশ মিয়ানমারে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে মানবতার এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে। তাদের শুধু আশ্রয়ই নয়, চিকিৎসা ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও করেছে।

জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের হিসাব অনুযায়ী, মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রায় ১০ লাখে দাঁড়িয়েছে৷ কেবল ২০১৭ সালের আগষ্ট থেকে এ পর্যন্ত ৭ লাখ ৭ হাজার রোহিঙ্গা এসেছে বাংলাদেশে৷ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার জড়িপ বলছে সেই সংখ্যা ৮ লাখ ছাড়িয়েছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দাদের জীবন কেমন যাচ্ছে? এ প্রশ্নের জবাবে কক্সবাজারে টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা রশিদ উদ্দিন বলেন, ক্যাম্পে আশ্রিত জীবন আর কেমন হবে, চলে যাচ্ছে৷ বেঁচে আছি এই তো বেশি ৷ বাবা-মা জন্ম দিয়েছে সত্যি, কিন্তু বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ আমাদের বাবা-মা ৷ তারা আমাদের দ্বিতীয় জীবন দিয়েছে৷

আমরা কোনোভাবেই তাদের ঋন শোধ করতে পারব না৷ সারাদিন কিভাবে কাটে– জানতে চাইলে রশিদ বলেন, ‘কাজ করার কোনো সুযোগ নেই৷ রিলিফের চাল, তেল, লবণ যা পাই তা দিয়ে কোনোভাবে চলে যাচ্ছে৷ নিজেরা বসে মাঝে-মধ্যে গল্প করি৷ তার মধ্যেই হয়ত মারামারি বেঁধে যাচ্ছে৷ সারাদিন শুয়ে-বসে কার ভালো লাগে? এভাবে কতদিন চলতে পারে?`

সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গবেষণায় বলা হয়েছে, গত আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো নৃশংসতায় নিহত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ২৫ হাজারের কাছাকাছি৷ ১৯ হাজার রোহিঙ্গা নারী ও কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়েছে৷ ৪৩ হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু গুলিতে আহত হয়েছে, অগ্নিদ্বগ্ধ হয়েছে ৩৬ হাজার আর মারধরের শিকার হয়েছে প্রায় এক লাখ ১৬ হাজার মানুষ৷ ‘ফোর্সড মাইগ্রেশন অব রোহিঙ্গা : দ্য আনটোল্ড এক্সপেরিয়েন্স` শীর্ষক এই গবেষণাটি করেছে অষ্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, ক্যানাডা, নরওয়ে এবং ফিলিপাইন্সের শিক্ষাবিদ, পেশাজীবী ও বিভিন্ন ধরনের সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত একটি রিসার্চ কনসোর্টিয়াম৷

সর্বশেষ এক খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমনপীড়নের মুখে বিশ্বকে নাড়িয়ে দেওয়া শরণার্থী সংকটের সূচনা হওয়ার পর এক বছর হলেও রোহিঙ্গাদের পালিয়ে বাংলাদেশে আসা বন্ধ হয়নি৷ দুই মাস আগেও হামিদা বেগম নামে এক রোহিঙ্গা নারী তাঁর স্বামী আর দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন কক্সবাজারের বালুখালী ক্যাম্পে৷ এমন আরো কিছু রোহিঙ্গার আসার খবর এসেছে৷

রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকেই তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক তৎপরতা শুরু করে বাংলাদেশ৷ জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল থেকে শুরু করে বহু রাষ্ট্রের প্রধানও বাংলাদেশ সফর করেছেন, দেখেছেন রোহিঙ্গাদের দুর্বিষহ জীবন৷ সবার পক্ষ থেকেই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে অনুরোধ করা হয়েছে৷ চাপ দেওয়া হয়েছে৷ এসব চাপের পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আশ্বাস দিলেও চাতুর্যপূর্ণ কথাবার্তা আর ছলচাতুরি করে শুধুই সময়ক্ষেপণ করছে৷

সূত্র : ডয়েচে ভেলে।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি