ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪

বিলুপ্তির পথে সামুদ্রিক কাছিম

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৪৭, ৬ জানুয়ারি ২০২৩ | আপডেট: ১৬:০৪, ৬ জানুয়ারি ২০২৩

সরীসৃপ প্রজাতির অতি প্রাচীন ও স্বতন্ত্র একটি প্রাণী সামুদ্রিক কাছিম। ১০ কোটি বছর আগে এদের জন্ম হলেও এরা এখনও বর্তমান। এক একটি সামুদ্রিক কাছিম প্রাপ্তবয়স্ক হতে সময় লাগে প্রায় ৩০ বছর এবং বেঁচে থাকে প্রায় ২০০ বছর। 

পৃথিবীতে সাত প্রজাতির সামুদ্রিক কাছিমের সন্ধান পাওয়া গেলেও আইইউসিএন-এর তালিকা অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ান ফ্ল্যাট ব্যাক ছাড়া অন্যান্য সব প্রজাতির কাছিম বর্তমানে সংকটাপন্ন। আবাসস্থল, পানি দূষণ, অন্যান্য প্রাণীর উৎপাত ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে দিন দিন কমে যাচ্ছে এদের সংখ্যা। শুধু অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় এনে মানুষ ডিম, মাংস, চামড়া ও খোলসের জন্য এসব কাছিম ধরে প্রকৃতির ভারসাম্যহীনতাকে উপেক্ষা করছে।

সামুদ্রিক কাছিমের মূল আবাস সমুদ্র হওয়ায় এরা লোনা পানির বাসিন্দা। প্রজনন মৌসুমে এরা ডিম পাড়তে সমুদ্র ছেড়ে বালুকাময় সৈকতে উঠে আসে। 

বিজ্ঞানীদের ভাষ্যমতে, পৃথিবীর ম্যাগনেটিক ফিল্ডের সঙ্গে সামুদ্রিক কাছিমের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। এ কারণেই দক্ষ নাবিকের মতো বহু বছর পরও এরা নিজেদের জন্মস্থান খুঁজে ডিম পাড়ার জন্য ফিরে আসে। এরা উপকূলীয় অঞ্চলে সামুদ্রিক পুষ্টির জোগান দিয়ে উৎপাদনশীলতা বাড়ায়। এদের শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য পানি থেকে বাতাসের সংস্পর্শে আসার দরকার হয় এবং ডিম পাড়ার জন্য বালুকাময় সৈকতের প্রয়োজন পড়ে। 

প্রজননের অনুকূলে থাকার কারণে বাংলাদেশের কক্সবাজারের নাজিরারটেক থেকে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত সৈকত এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপের বালুচরে এরা ডিম পাড়তে আসে, বিশেষ করে বিপন্ন জলপাইরঙা কাছিম। হালকা গড়নের এই কাছিমের গড় ওজন ৪৫ কিলোগ্রাম? খোলস উঁচু গম্বুজের মতো, পিঠের খোলসের দৈর্ঘ্য প্রায় সোয়া দুই ফুট। খোলসের রঙ পিঠের দিকে গাঢ় জলপাই সবুজ আর বুকের দিকে হলদে সবুজ। যার কারণে এদের নাম হয়েছে জলপাইরঙা কাছিম।

শীতকাল থেকে বর্ষার শুরু পর্যন্ত এদের ডিম পাড়ার সময়। শুধু ডিম পাড়ার সময় মা-কাছিম বালুচরে উঠে আসে। নির্জন-নীরব সৈকতে জোয়ারের সর্বোচ্চ সীমার ওপরে শুকনো বালুচরে মা-কাছিম ডিম পাড়ে। শুকনো বালু সরিয়ে গর্ত করে এক একটি মা-কাছিম ১০০ থেকে ১৫০টি ডিম পাড়ে। প্রজনন শেষে ফিরে যায় আবার সমুদ্রে। প্রায় ২ মাস পর প্রাকৃতিক নিয়মেই ডিম ফুটে বাচ্চা বালুর ওপরে বেরিয়ে আসে এবং সমুদ্রে চলে যায়।

কক্সবাজার উপকূলে জেলেরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মাছ ধরার সময় প্রায়ই ট্রলিং জালে আটকে পড়া কাছিম পিটিয়ে মেরে ফেলছে। আবার সৈকতে ডিম পাড়তে এসে কুকুর-শিয়ালের আক্রমণের শিকার হয়েও বিপন্ন হয়ে পড়ছে মা-কাছিমের জীবন। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও সেন্টমার্টিনে পর্যটকরা প্রায়ই ময়লা আবর্জনা ফেলে সমুদ্রের পানি দূষিত করে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের সমুদ্র দূষণ তো আছেই। আর এসব কারণেই বঙ্গোপসাগর উপকূল থেকে বিপন্নপ্রায় এসব কাছিম এখন বিলুপ্তির পথে।  

পরিবেশবিদরা অন্যান্য বিপন্ন প্রাণীর সঙ্গে জলপাইরঙা কাছিম রক্ষায় মাঝে মাঝে সোচ্চার হলেও শুধু জনসচেতনতার অভাব এবং জেলেদের নিয়ম না মানার কারণে বিলুপ্তির পথে বিরল প্রজাতির জলপাইরঙা কাছিম। অথচ পৃথিবীর বহু দেশে কাছিম রক্ষার জন্য চিংড়ি জালে টিইডি (Turtle Excluder Device-TED) লাগানোর নিয়ম আছে। তবে টিইডি ব্যবহারের কোনো আইন আমাদের দেশে নেই। তাই কোনো চিংড়ি ট্রলারকেই টিইডি ব্যবহার করতে দেখা যায় না। এর ফলে অসংখ্য বাচ্চা ও পূর্ণবয়স্ক কাছিম বঙ্গোপসাগরে মারা যায় এবং শেষে সমুদ্রচরে ভেসে ওঠে তার লাশ।

সামুদ্রিক কাছিম সামুদ্রিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষ করে খাদ্যশৃঙ্খল বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরা এক উপকূল থেকে অন্য উপকূলে সামুদ্রিক গাছ-গাছড়ার বিস্তার ঘটায়। সামুদ্রিক পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি ক্ষতিকর জেলিফিস খেয়ে মাছের প্রজনন ও বেড়ে ওঠা নিয়ন্ত্রণ করে। পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।

এমএম/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি