ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৩ মে ২০২৫

বৃষ্টি এলেই ছুটি হয়ে যায় যে স্কুল!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৫১, ২৩ জুলাই ২০১৮ | আপডেট: ১৫:৫৬, ২৩ জুলাই ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

 

শ্রেণি কক্ষ সংকটের কারণে ফেনী দাগনভুঞা উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পূর্ব জয়নারায়নপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠ দান করা হচ্ছে জরাজির্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিত্যক্ত স্কুল ঘরে। বৃষ্টি এলে ভাঙ্গা টিন বেয়ে পানি পড়ে, নেই কোনো দরজা জানালা ও বেড়া। তাই বাধ্য হয়ে ক্লাস নেওয়া হয় অফিস কক্ষ ও ঝরাঝির্ণ ঘরে। প্রতিদিন বেঞ্চ আনা নেওয়া করেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেওয়া হচ্ছে খোলা আকাশের নিচে ঝুঁকিপূর্ণ পুরোনো টিনশেড়ের স্কুলটিতে। বিদ্যালয়টিতে অবকাঠামো সমস্যার পাশাপাশি রয়েছে শিক্ষক সংকট। চারজন শিক্ষকের মধ্যে চারজনই নারী, কোনো পুরুষ শিক্ষক না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম ও বিদ্যালয়ের অন্যান্য বিষয়াদির দেখাশোনায় সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় দিনের পর দিন লেখা-পড়ায় বিঘ্ন ঘটায় অন্যান্য বিদ্যালয়ের তুলনায় পড়া-লেখায় পিছিয়ে পড়ছে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

দেখা গেছে, স্কুলটির দুটি ঘর রয়েছে। টিনশেডের পুরোনো পরিত্যক্ত স্কুল ঘরটি স্থাপিত হয় ১৯৬৯ সালে। এটি এখন আর ব্যবহার করার কোনো পরিবেশ নেই। পরে চার কক্ষ বিশিষ্ট আরেকটি একাডেমিক ভবন ১৯৯৫ সালেও নির্মাণ করা হয়। নির্মাণ ক্রুটির কারণে ওই ভবনের ঝুঁকিপূর্ণ ছাদ, দেয়াল ও পিলারের অংশ খসে পড়েছে। ওই ভবনের প্র্রথম কক্ষে দাপ্তরিক কার্যালয়, দ্বিতীয় কক্ষে স্টোর রুম, তৃতীয় কক্ষে শিশু কর্ণারের জন্য ব্যবহার করা হয়। শিশু কর্ণারে কিছু বই ও শিশুদের খেলনা রয়েছে। এখানে শিশুদের জন্য প্লাস্টিক বিছিয়ে শ্রেণির কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। চতুর্থ কক্ষে কিছু চেয়ার-টেবিল দিয়ে প্রথম শ্রেণির কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

কিন্তু দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির জন্য নেই নির্ধারিত শ্রেণি কক্ষ। ভবন ও কক্ষ সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে পরিত্যাক্ত ঘরটিতে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়ে থাকে।

দ্বিবা শাখায় প্রথম শ্রেণির কক্ষে দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাশ নেওয়া হয়। দরজা, জানালা ও বেড়াহীন টিনশেডের ঘরটিতে নেই কোনো চেয়ার-চেবিল। তারপরও বাধ্য হয়ে জোড়া তালি দিয়ে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে ওই ঘরে।

এলাকাবাসী জানায়, এর আগেও অনেক সাংবাদিক এসে স্কুলটির বিষয়ে খবর প্রকাশ করেছে। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। তাই আশপাশের আর্থিক স্বাবলম্বী পরিবারের শিক্ষার্থীরা দূরের বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করছে। তবে বাড়ির পাশের স্কুলটির সার্বিক পরিবেশ ও নিজ সন্তানকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের অভিভাবকরা। তারা আর্থিক ব্যয়ভার গ্রহণ করতে না পেরে আদরের সন্তানকে এ স্কুলে ভর্তি করিয়ে কোনমতে মানুষ বানানোর স্বপ্ন দেখছেন।

বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আনিকা জানায়, বাড়ি থেকে প্রতিদিনই স্কুলে আসি; কিন্তুু বৃষ্টি হলেই স্কুল ছুটি দিয়ে দেয়। এতে করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সিলেবাস শেষ করা যায় না। তাছাড়া দরজা জানালা ছাড়া খোলা মেলা পুরোনো স্কুলটিতে আমাদের ক্লাস করতে ভালো লাগে না।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফেরদৌস আরা বলেন, শ্রেণি কক্ষ সংকটের কারণে শিক্ষার গুণগত মান ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে বাধ্য হয়েই পরিত্যাক্ত টিনশেডের ঘরটিতে শ্রেণির কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তবে বৃষ্টি এলেই ভাঙ্গা টিন বেয়ে ভেতরে পানি পড়তে থাকে। তখন স্কুলটি ছুটি দিয়ে দিতে হয়। এসব সমস্যর কারণে একদিকে শিক্ষার মান দিন দিন কমছে; অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের শ্রেণির কার্যক্রমে অনুপস্থিতির হার বাড়ছে।

বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি মাস্টার আবু নাসের অভিযোগ করে বলেন, প্রতিষ্ঠানটির ২০০৭ হতে ২০১৭ এর এপ্রিল পর্যন্ত উম্মে কুলসুম নামের একজন প্রধান শিক্ষক দায়িত্বে ছিলেন। ওই সময়ে সরকার প্রতিবছর ম্যানটেনেন্স বাবদ ৪০ হাজার টাকা করে স্কুলটির জন্য বরাদ্দ দিয়েছে। টাকাগুলোর সদ্ব্যবহার হলে অন্তত পরিত্যাক্ত ঘরটির এমন অবস্থা হতো না।

পরে আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর এলাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে ওই প্রধান শিক্ষককে বার্ধ্যতামূলক বদলীর ব্যবস্থা করেছি। পরে ম্যানটেন্সের কিছু টাকা দিয়ে বেঞ্চ, দরজা, জানালা, চৌচাগারসহ আনুসাঙ্গিক কিছু মেরামত কার্যক্রম করেছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আজাদ ভুঞা বলেন, স্কুলটিতে ভবন সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নতুন ভবন নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যাদি সম্পন্ন করতে সময় লাগবে। তাই তিনি আপাতত টিনশেডের ঘরটি মেরামত করে শ্রেণির কার্যক্রম পরিচালনার উপযোগী করতে স্থানীয় বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইমাম উদ্দিন জানান, দীর্ঘদিন থেকে রাজাপুরের পূর্ব জয়নারায়নপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে শ্রেণিকক্ষ ও আসবাবপত্র সংকট চলছে। গত অর্থ বছরে আসবাবপত্র মেরামত ও আনুসাঙ্গিক ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কিন্তুু ভবনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে জানানো হয়েছে। বরাদ্দ হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ওই স্কুলের ভবন তৈরি করা হবে।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি