ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

বৈষম্য নিরসনসহ নানা দাবি শিক্ষকদের

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:০৮, ৫ অক্টোবর ২০২১ | আপডেট: ১২:০৯, ৫ অক্টোবর ২০২১

সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে দীর্ঘদিনের বৈষম্য চলছে। এই বৈষম্য নিরসনসহ নানা দাবিতে দেশব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে শিক্ষকরা। সারা বিশ্বে মঙ্গলবার ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ পালন করা হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে জাতীয়করণসহ বিভিন্ন দাবিতে মানববন্ধন, র‌্যালি ও সমাবেশের ডাক দিয়েছেন বেসরকারি শিক্ষকরা। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বাশিস) ও এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ লিয়াঁজো ফোরামের যৌথ উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে।

সরকারের পক্ষ থেকে পালন করা না হলেও বেসরকারিভাবে প্রতি বছর পালিত হয় দিবসটি।

জানা গেছে, ১৯৯৪ সাল থেকে প্রতিবছর ৫ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। ইউনেসকো এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে- ‘শিক্ষকগণ শিক্ষা পুনরুদ্ধারের কেন্দ্রবিন্দুতে’।

অন্যদিকে, বিশ্ব শিক্ষক দিবসে কেন্দ্র করে সোমবার (৪ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য দূরীকরণে শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ, শিক্ষা সার্ভিস কমিশন ও ব্যবস্থাপনা কমিটি বিলুপ্তি করাসহ নয় দফা দাবি জানানো হয়েছে।
দাবিগুলো হলো-
১. সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের অনুরূপে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ও অন্যান্য ভাতা দেওয়া।
২. সরকারি কলেজের অনুরূপ পদ্ধতিতে সমযোগ্যতা ও সমঅভিজ্ঞতা সম্পন্ন বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকের পদে পদোন্নতি, উচ্চতর ডিগ্রির জন্য উচ্চতর বেতন স্কেল দেওয়া। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুরূপ বেসরকারি শিক্ষাব্যবস্থায় বদলি প্রথা চালু করা।
৩. শিক্ষকদের ন্যায় আনুপাতিক হারে শিক্ষা প্রশাসনের (জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে যোগ্যতাসম্পন্ন বেসরকারি শিক্ষকদের সুযোগ দেওয়া ও প্রশিক্ষণ/সেমিনার সিম্পোজিয়াম এবং ওয়ার্কশপে যোগদানের ব্যবস্থা করা।
৪. শিক্ষকদের মর্যাদা ও অধিকার এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কিত ইউনেস্কো ও আইএলও’র সনদ ১৯৬৬ বাস্তবায়ন। শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নের লক্ষ্যে যােগ্য ও দক্ষ শিক্ষক নিয়ােগের জন্যে স্বতন্ত্র ‘শিক্ষা সার্ভিস কমিশন’ গঠন করা।
৫. মানসম্মত শিক্ষার লক্ষ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনুমোদন দানকারী বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা বোর্ডে নিয়মিতভাবে একাডেমিক পরিদর্শন ব্যবস্থা করা।
৬. বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে গভর্নিংবডি/ম্যানেজিং কমিটি প্রথা বিলুপ্ত করে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার নিয়মনীতি বাতিল করা।
৭. সরকারি কলেজের মতো বেসরকারি কলেজের জনবল কাঠামো প্রবর্তন করে অনার্স-মাস্টার্স কলেজে পাঠদানরত শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করতে হবে। শিক্ষকদেরও পূর্ণাঙ্গ পেনশন চালুসহ নয় দফা দাবি তোলা হয়েছে।

মূলত এই দিনে বিশেষভাবে শিক্ষকদের অবদান স্মরণ করা হয়। বিশ্ব শিক্ষক দিবসের লক্ষ্য ‘বিশ্বের শিক্ষাবিদদের প্রশংসা করা, মূল্যায়ন করা, উন্নত করা, শিক্ষক ও শিক্ষাদান সম্পর্কিত বিষয়গুলো বিবেচনার সুযোগ দেওয়া।’

ইউনেস্কোর মতে, বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পালন করা হয়। বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশে দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। এ দিবস পালনে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল (ইআই) ও তার সহযোগী ৪০১টি সদস্য সংগঠন মূল ভূমিকা রাখে। ইআই প্রতি বছরই একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে থাকে যা জনসচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকতা পেশার অবদানকেও স্মরণ করিয়ে দেয়।

জানা যায়, ১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর ফ্রান্সের প্যারিসে শিক্ষকদের অবস্থা নিয়ে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানেই শিক্ষকদের কথা চিন্তা করে ইউনেস্কো এবং আন্তর্জাতিক শ্রম ও সংগঠন (আইএলও) কিছু সুপারিশমালায় স্বাক্ষর করে। এই পরামর্শ বা সুপারিশমালায় শিক্ষা কর্ম নীতি, শিক্ষকদের নিয়োগ, প্রাথমিক প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান, এবং কাজের অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত মানদণ্ডের রূপরেখার উল্লেখ ছিলো।

এরপর ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কোর ২৬তম অধিবেশনে গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ইউনেস্কো মহাপরিচালক ড. ফ্রেডারিক এম মেয়রের ঘোষণায় ৫ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী শিক্ষক দিবস পালনের সূচনা হয়।

যদিও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পৃথক পৃথক তারিখেও এই দিবসটি পালিত হয়। যার মধ্যে আর্জেন্টিনায় ১১ সেপ্টেম্বর, অস্ট্রেলিয়ায় ৩১ অক্টোবর, ভুটানে ২ মে, ব্রাজিলে ১৫ অক্টোবর, চীনে ১০ সেপ্টেম্বর, কলম্বিয়ায় ১৫ মে, হংকং ১০ সেপ্টেম্বর, ইন্দোনেশিয়ায় ২৫ নভেম্বর, ইরানে ২ মে, ইরাকে ১ মার্চ, মালয়েশিয়ায় ১৬ মে, নেপালে জুলাই মাসের মাঝামাঝি, নিউজিল্যান্ডে ২৯ অক্টোবর, সিঙ্গাপুরে ১ সেপ্টেম্বর, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৫ মে, স্পেনে ২৭ নভেম্বর, থাইল্যান্ডে ২১ জানুয়ারি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৭ মার্চ ও ভিয়েতনামে ২০ নভেম্বর শিক্ষক দিবস পালন করা হয়। 

এছাড়াও বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, ক্যামেরুন, কানাডা, ক্রোয়েশিয়া, এস্টোনিয়া, জর্জিয়া, জার্মানি, কুয়েত, মালদ্বীপ, মরিশাস, মালডোভা, মঙ্গোলিয়া, মিয়ানমার, নেদারল্যান্ড, নাইজেরিয়া, ফিলিপাইন, পর্তুগাল, কাতার, রোমানিয়া, রাশিয়া ও সৌদি আরবে ৫ অক্টোবর দিবসটি পালন করা হয়।
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি