ঢাকা, বুধবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৫

ব্রেন সার্জারির মধ্যেই গিটার বাজালেন রোগী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:৪২, ২১ জুলাই ২০১৭ | আপডেট: ১০:৪৬, ২২ জুলাই ২০১৭

Ekushey Television Ltd.

অপারেশন থিয়েটারের টেবিলে শুয়ে আছেন একজন রোগী। তার মস্তিস্কে অস্ত্রোপচার চলছে। এর মধ্যেই গিটার বাজিয়ে চলেছেন তিনি। এমন দৃশ্য হয়ত অনেকে কল্পনাও করতে পারেন না। বাস্তবে এমনটাই ঘটেছে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ব্যাঙ্গালোরের এক হাসপাতালে।

ভারতীয় সঙ্গীত শিল্পী অভিষেক প্রসাদ হাতের আঙ্গুল নাড়াতে পারেন না। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলে `ইনভলান্টারি মাসল স্প্যাজম`। এর আরেক নাম `মিউজিশিয়ান্স ডিসটোনিয়া`। যারা এতে আক্রান্ত, তাদের মাংসপেশিতে মারাত্মক খিঁচুনি এবং ব্যাথা হয়।

এর কারণে অভিষেক প্রসাদ তার মধ্যমা, অনামিকা এবং কনিষ্ঠা আঙ্গুল নাড়াতে পারতেন না।

এটির চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা তার মস্তিস্কে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন। আর যখন এই অস্ত্রোপচার করা হচ্ছিল, তখন গিটার বাজাচ্ছিলেন অভিষেক প্রসাদ।

চিকিৎসকরা তার মস্তিস্কের এক একটি সার্কিট যখন `বার্ন` করছিলেন, তখন তাকে গিটার বাজাতে বলা হচ্ছিল। এভাবে পর্যায়ক্রমে ছয় দফা চিকিৎসা দেওয়া হয় তাকে। এবং প্রতিটি পর্যায়ে চিকিৎসকরা তাকে গিটার বাজিয়ে আঙ্গুল ঠিক মত কাজ করছে কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখতে বলেন।

অভিষেক প্রসাদ বিবিসিকে জানিয়েছেন, এই শল্য চিকিৎসার পর এখন তিনি পুরোপুরি সুস্থ এবং ঠিকমত গিটার বাজাতে পারেন।

"শেষ দফা চিকিৎসার সময় আমার আঙ্গুলগুলো যেন মনে হলো ঠিকমত কাজ করছে। আর অপারেশন থিয়েটারে যখন শুয়ে ছিলাম, তখনও আমি বেশ স্বাভাবিকই ছিলাম।"

"আমার ধারণা ছিল অতিরিক্ত গিটার বাজানোর কারণে আঙ্গুলে এই সমস্যা হয়েছে। কিন্তু আমি গিটার বাজানো বন্ধ করে দেওয়ার পরও দেখেছি আঙ্গুলের এই জড়তা যাচ্ছে না। ডাক্তারের পরামর্শে অনেক ধরণের পেইন কিলার, মাল্টি ভিটামিন খেয়েছি। লাভ হয়নি।"

কিন্তু নয় মাস আগে একজন নিউরোলজিষ্ট তাকে জানান যে তিনি `ডিসটোনিয়া`তে ভুগছেন। এরপরই তাকে ব্রেন সার্জারি করার পরামর্শ দেয়া হয়।

অভিষেক প্রসাদ জানান, ব্রেন অপারেশন যখন চলছিল, তখন এর প্রতিটি মূহুর্ত তিনি মনে করতে পারেন।

তিনি জানান, ডাক্তাররা তার মাথায় চারটি স্ক্রু দিয়ে একটি ফ্রেম লাগায়। এরপর তার মাথার খুলি কেটে এমআরআই স্ক্যান করা হয়।

এরপর তার মাথায় ঢোকানো হয় অনেক ইলেকট্রোড যেগুলো দিয়ে ব্রেনের সার্কিটগুলো ঠিক করা হয়।

তিনি বলেন, মনে হচ্ছিল যেন একটি জেনারেটর দিয়ে তার মাথার ভেতর এই অপারেশন চালানো হচ্ছে।

শল্য চিকিৎসায় যারা অংশ নেন তাদের একজন ডঃ শ্রীনিবাসন জানান যখন রোগীর মস্তিস্কে এই অপারেশন চালানো হচ্ছিল তখন তার ব্যাথা অনুভব করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ `লোকাল অ্যানেশথেশিয়া` দিয়ে ঐ অংশটি অবশ করে দেওয়া হয়েছিল। তবে অপারেশনের পুরো সময়টা রোগী একদম সজাগ ছিলেন।

ড: শ্রীনিবাসন জানিয়েছেন যে কায়দায় এই অপারেশন করা হয় তাকে বলা হয় `লাইভ ব্রেন সার্কিট সার্জারি`। তারা যে সফলভাবে এটি সম্পন্ন করতে পেরেছেন এটিকে তিনি ভারতের চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক বলে বর্ণনা করেন।

অভিষেক প্রসাদ জানিয়েছেন, অপারেশনের পর তার বাম হাত এবং বাম পা এখনো কিছুটা দুর্বল। কিন্তু এক মাসের মধ্যে তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে আশা করছেন। সূত্র : বিবিসি বাংলা।


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি