ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪

ভারত-চীন সীমান্তে গোলাগুলি না হবার রহস্য

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৪৫, ২৩ আগস্ট ২০১৭

ডোকলাম নিয়ে দুমাসের বেশি হয়ে গেল ভারত আর চীনের মধ্যে বিরোধ চলছে। দুই দেশের সেনারা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে, আর নেতারা গরম গরম বিবৃতি দিচ্ছেন।

এত উত্তেজনা সত্ত্বেও দুই দেশের বাহিনী কিন্তু সংযত রয়েছে, কোনো হিংসাত্মক ঘটনার খবর এখনো পাওয়া যায়নি। সীমান্তে বড় জোর দুই বাহিনীর মধ্যে হাতাহাতি হয় - তার বেশি কিছু না।

চীনে কর্মরত সিনিয়র সাংবাদিক শৈবাল দাসগুপ্ত বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘ভারত আর চীনের মধ্যে একটা সমঝোতা আছে যে যতই মতভেদ হোক, সীমান্তে উত্তেজনা কোনো দেশই বাড়তে দেবে না। অটল বিহারী বাজপেয়ী যখন চীনে এসেছিলেন, সেই সময়েই রাজনৈতিক প্রেক্ষিতটা তৈরি হয়েছিল। পরে মনমোহন সিংয়ের আমলেও সেই একই নীতি অনুসরণ করা হয়েছে।"

"দুটো দেশের মধ্যে এরকম সিদ্ধান্ত রয়েছে যে ফ্রন্ট লাইনে যেসব সেনা সদস্য মোতায়েন থাকবেন, তাঁদের কাছে কোনো রকম অস্ত্র থাকবে না। যদি সেনা র‍্যাঙ্ক অনুযায়ী কোনো অফিসারের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রাখা নিয়ম হয়, তাহলে তার নল মাটির দিকে ঘুরিয়ে রাখা থাকবে। সেজন্যই দুই দেশের সেনাসদস্যদের হাতাহাতি বা কুস্তি করার ভিডিও দেখা যায়, কোথাও গুলি বিনিময়ের ছবি দেখা যায় না। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের এরকম কোনো চুক্তি নেই," বলছিলেন মি. দাশগুপ্ত।

ভারত আর চীনের সেনাদের মধ্যে যখন উত্তেজনা বেড়ে যায়, বা হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছায়, সেইসময়েও কয়েকটা দিকে নজর রাখা হয়।

দুই দেশের সেনাদের মধ্যে হাতাহাতির যেসব ভিডিওতে দেখা যায় গণমাধ্যম বা সামাজিক মাধ্যমে, সেগুলো যদি কেউ খুঁটিয়ে দেখেন, তাহলেই বোঝা যাবে সৈনিকরা যেন বাচ্চাদের মতো কুস্তি লড়ছে।

একে অপরকে ধাক্কা দেয়, কেউ পড়ে গিয়ে আবার উঠে দাঁড়ায়। কিন্তু কেউ কাউকে চড়-থাপ্পড় মেরেছে, এটা দেখা যায় না। চড় মারা অপমান করার সামিল। তাই ধাক্কাধাক্কির সময়েও কেউই হাত ব্যবহার করে না। নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই সেনা সদস্যরা এটা করে থাকেন।

সীমান্ত নিয়ে দু দেশের মধ্যে অনেক বার চুক্তি হয়েছে । ১৯৯৬ সালে আস্থা বর্ধক ব্যবস্থাপত্রে সই করে দুই দেশ। ২০০৩ আর ২০০৫ সালেও চুক্তি হয়েছে। আর ২০১৩ সালে সই হওয়া বর্ডার ডিফেন্স কোঅপারেশন এগ্রিমেন্টই এ বিষয়ে সর্বশেষ চুক্তি।

মেজর জেনারেল মেহতার কথায়, "সীমান্তের যে অংশগুলো অমীমাংসিত, সেখানে দুই দেশই শান্তি বজায় রাখে আর নির্দিষ্ট চুক্তি থাকার ফলে কোথাও গুলি চলে না। দুই দেশই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সীমান্ত সমস্যাগুলো নিয়ে তখনই ভাবা যেতে পারে যখন আমাদের মধ্যে অর্থনৈতিক আর নাগরিক সম্পর্কগুলো পাকাপোক্ত হয়ে উঠবে।"

"চীন আর ভারত - দুই দেশের তরফেই সীমান্তে যে সৈনিকরা রয়েছে, তারা ২১-২২ বছরের যুবক। তাদেরও পরিবার আছে যারা রেডিও শোনে, টিভি দেখে। গণমাধ্যম যদি উত্তেজনা তৈরি করে, তার প্রভাব তো ওই যুবক সৈনিকদের উপরেও পড়ে। যতই নিজের নিজের সরকার নির্দেশ দিক শান্তি বজায় রাখ বলে, সংযম তো কোথাও ভেঙ্গে যেতেই পারে, ভুল করে হলেও," বলছিলেন মি. দাশগুপ্ত।

কিন্তু সাম্প্রতিক উত্তেজনা খুব তাড়াতাড়ি প্রশমন করা খুব দরকার, কোথাও গুলি বিনিময় না হয়ে যায়।

কেআই/ডব্লিউএন


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি