মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদলে আবারও ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’, ফিরে দেখা ইতিহাস
প্রকাশিত : ২০:৪৪, ১১ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ২০:৪৬, ১১ এপ্রিল ২০২৫

পয়লা বৈশাখ উদযাপনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ঐতিহ্যবাহী শোভাযাত্রার নাম এ বছর থেকে আবারও ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ রাখা হয়েছে। শুরুর দিকে এই নামেই পরিচিত ছিল এই বর্ণাঢ্য আয়োজন। পরে ১৯৯৬ সাল থেকে এটি পরিচিতি পায় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ হিসেবে।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আজহারুল ইসলাম শেখ জানান, “আমরা একে নাম পরিবর্তন বলতে চাই না, বরং বলছি—পুরনো নাম পুনরুদ্ধার করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, ১৯৮৯ সালে যখন চারুকলায় প্রথমবার বর্ষবরণ উপলক্ষে শোভাযাত্রার আয়োজন হয়, তখন এর নাম ছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। সেই সময়ের সংবাদপত্র ও আলাপচারিতার দলিল থেকেও এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়।
চারুকলার এ আয়োজনের অনুপ্রেরণা এসেছে আরও আগের একটি উদ্যোগ থেকে। ১৯৮৬ সালে যশোরে ‘চারুপীঠ’ নামে একটি বেসরকারি শিল্পসংগঠন প্রথমবারের মতো বর্ষবরণে আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করে। সেই আয়োজনে পাপেট, বাঘের মুখোশ, লোকবাদ্যসহ নানা রঙিন শিল্পকর্ম ছিল, যা পরে ঢাকার আয়োজনকেও প্রভাবিত করে।
১৯৯৬ সাল থেকে এই আনন্দ শোভাযাত্রা ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামে পরিচিতি পায়। ২০১৬ সালে এটি ইউনেসকোর ‘বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ তালিকায় স্থান পায়, যা বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অনুমোদিত হয়।
তবে ‘মঙ্গল’ শব্দটি নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সমালোচকদের মতে, এই শব্দটি একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হওয়ায় এটি সবার জন্য গ্রহণযোগ্য নয়। এমনকি ২০২৩ সালে এই নাম পরিবর্তন ও শোভাযাত্রা বন্ধে একটি আইনি নোটিশও দেওয়া হয়।
চারুকলার নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এবারের পয়লা বৈশাখ উদযাপন আবারও সেই পুরনো নাম ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ দিয়ে আয়োজিত হবে।
ডিন আজহারুল ইসলাম শেখ বলেন, “আমরা চাই এই আয়োজনটি সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের জন্য আনন্দের হোক। শোভাযাত্রার মূল চেতনা ছিল—একতা, সংস্কৃতি ও মানুষকে ভালোবাসা।”
আরও পড়ুন