ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪

মরণোত্তর একুশে পদক পাচ্ছেন কুলাউড়ার আব্দুল জব্বার

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:১২, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | আপডেট: ২১:১৫, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০

মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার সাবেক সাংসদ মরহুম আব্দুল জব্বার একুশে পদকের (মরণোত্তর) জন্য মনোনীত হয়েছেন। মোট ২০ জনের মধ্যে তিনিও একজন। 

আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের হাতে একুশে পদক তুলে দেবেন।

মরহুম আব্দুল জব্বারের পুত্র, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসম কামরুল ইসলাম বলেন, মরহুম আব্দুল জব্বার ’৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬ এর ছয়-দফা, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০ এর নির্বাচন ও ’৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও রণাঙ্গণের যোদ্ধা এবং -এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন সহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। 

আব্দুল জব্বার বৃহত্তর সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থানার আলালপুর গ্রামে ১৯৪৫ সালের ১৭ নভেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম আব্দুল জব্বার ও মাতা মরহুমা সমিতা বানু। 

আব্দুল জব্বার ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন বলিষ্ঠ সংগঠক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে সাথে নিয়ে স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠন করতে সংগ্রাম কমিটি গঠন করেন। ৬ মে পাকবাহিনী কুলাউড়া আক্রমণ করলে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিতে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ধর্মনগর চলে যান। 

ধর্মনগর ইয়ুথ রিসিপিশন ক্যাম্প চালু করে তার চেয়ারম্যান, মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা ও শরনার্থী ব্যবস্থাপনার জন্য গঠিত জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিলের সদস্য এবং রিক্রুট ক্যাম্পের কো-চেয়ারম্যান ছিলেন এবং সেখানে অবস্থানরত জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের কৌশলগত বিভিন্ন দিক সম্পর্কে পরামর্শ ও পরিকল্পনা করেন। তিনি বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স বা মুজিব বাহিনীর ৪ নং সেক্টরের অধীনস্থ মৌলভীবাজার সাব-সেক্টরের ডেপুটি কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন এবং বিভিন্ন রণাঙ্গনে সরাসরি যুদ্ধ করেন।

১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের অবিশ্বাস্য দুঃসংবাদ শুনে আব্দুল জব্বারের নেতৃত্বে ১৭ আগস্ট কুলাউড়া শহরে প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল ও গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর প্রেক্ষিতে তিনি গ্রেফতার হয়ে এগারো মাস কারাবরণ করেন। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে পুনরায় রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করলে আবারও গ্রেফতারের শিকার হন। 

আব্দুল জব্বার ১৯৬২ সালে ছাত্র আন্দোলন ও একুশে ফেব্রুয়ারি প্রভাতফেরি, প্লেকার্ড প্রদর্শন ও সমাবেশ করার কারণে ঐ রাত্রে গ্রেফতার হন এবং তিন মাস কারারুদ্ধ ছিলেন। তিনি ১৯৬৬ সালে বিত্তবানদের সহযোগীতায় কুলাউড়া শহরে প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। এছাড়া তিনি ৬২'র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬'র ছয়দফা, ৬৯'র গণঅভ্যূত্থান এবং ৯০'র স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

আব্দুল জব্বার একজন প্রতিভাবান রাজনীতিবিদ ও এক স্বচ্ছতায় অটল অধিকারী। মাটি ও অবহেলিত মানুষের সাথে ছিল তাঁর নিবিড় সম্পর্ক। তাঁর সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন ছিল বর্নাঢ্যময় ও অহংকার করার মতো। তাঁর ব্যক্তিত্ব, প্রজ্ঞা, সততা, দক্ষতা, দলের প্রতি আনুগত্য, নেতৃত্বের প্রতি অবিচল আস্থা, কর্মীর প্রতি স্নেহপ্রবণতা ও দেশপ্রেম-বিশেষ করে সার্বভৌমত্বের প্রতি অবিচল আস্থা সকলকে অনুপ্রাণিত করে। 

আব্দুল জব্বার ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে সফল অংশ গ্রহণ তাঁর জীবনে শ্রেষ্ঠ সময় হিসেবে নির্দ্বিধায় অভিহিত করা যায়। জাতির এ সূর্য সন্তান শোকের মাস আগস্টে ১৯৯২ সালের ২৮ আগস্ট মাত্র ৪৭ (১৯৪৫-১৯৯২) বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

এমএস/এসি
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি