ঢাকা, শুক্রবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ওয়াক্ফ বিল ঘিরে উত্তাল ভারত

‘মুসলিম রব তোলা বিজেপিতে নেই একজনও মুসলিম প্রতিনিধি’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:১৯, ৯ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ভারতের পার্লামেন্টে সদ্য পাস হওয়া বিতর্কিত ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল ঘিরে দেশজুড়ে বিক্ষোভ তীব্রতর হচ্ছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের মালিকানাধীন সম্পত্তির ওপর সরকারি হস্তক্ষেপের আশঙ্কায় বিভিন্ন রাজ্যে মুসলিম জনতা রাস্তায় নেমে এসেছে। প্রতিদিনই দেশের নানা প্রান্তে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন। কোথাও কুশপুত্তলিকা দাহ, কোথাও মৌন মিছিল—বিভিন্ন ধরনের প্রতিবাদেই মুখর হয়ে উঠেছে রাজপথ। কেউ কেউ বলছেন, ভারতে ক্ষমতাসীন এমন দল মুসলিম মুসলিম রব তুলে ওয়াক্ফ বিল সংশোধন করেছে, যাদের দলে একজনও মুসলমান এমপি নেই। বিক্ষোভকারীদের ভাষায়, এটি শুধু একটি আইন নয়, বরং মুসলিম সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব ও অধিকার হরণের আরেকটি প্রচেষ্টা। 

গতকাল মঙ্গলবার ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য প্রিন্টে অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি সাগরিকা ঘোষ এক মন্তব্য প্রতিবেদনে লেখেন, আত্মবিভ্রান্তিতে ভোগা বিজেপি নিজেদের বিশ্বাস করিয়েছে যে, মুসলমানদের লক্ষ্যবস্তু করা এবং এই সম্প্রদায়ের কিছু অংশকে নিরাপত্তাহীনতা ও ভয়ের মধ্যে ঠেলে দেওয়া তাদের নিজেদের জন্যই ভালো। ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল ২০২৫ নিয়ে পার্লামেন্টে সাম্প্রতিক বিতর্কের সময় ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতারা হঠাৎ জোরেশোরে দাবি করেছেন, তাদের হৃদয়ে দরিদ্র মুসলমানদের জন্য রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অথচ এটা যেন ছিল বিদ্রুপের চেয়েও বড় বিদ্রুপ। কারণ বিজেপি এমন একটি দল, যাদের কোনো মুসলমান লোকসভা সাংসদ নেই এবং তারা কখনও কোনো মুসলিম নারীকে মূলধারার রাজনীতিতে উৎসাহিত করেনি।

এমনকি বিজেপি নির্বাচনী মনোনয়নের ক্ষেত্রেও মুসলিমদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব দেয় না। দলটির কোনো উচ্চ পদেও নাম নেই কোনো মুসলিম নেতার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিজ রাজ্য ‘হিন্দুত্বের পরীক্ষাগার’খ্যাত গুজরাটে গত দুই দশক ধরে কোনো মুসলিম নেতাকে বিধানসভার টিকিট দেওয়া হয়নি। 

১৯৯৮ সালে গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির হয়ে একজন মুসলিম নেতা নির্বাচনের টিকিট পেয়েছিলেন। ওয়াক্ফ সংশোধনী বিলটি পার্লামেন্টে জোর করে পাস করানোর পরও দলটি সাহস করে দাবি করছে, তারা মুসলমানদের কল্যাণের জন্য কাজ করছে।

তিনি আরও বলেন, বিজেপির দাবি ওয়াক্ফ সংশোধনী বিলটি ভারতের মুসলমানদের কল্যাণের জন্য করা হয়েছে। কিন্তু তা সম্পূর্ণ কল্পকাহিনি এবং ভণ্ডামি ছাড়া কিছুই নয়। বিলটির আসল উদ্দেশ্য হিন্দুত্ববাদী ভোটব্যাংককে উৎসাহিত করা। সেই সঙ্গে দলটির অধস্তন এই বার্তা পাঠানো যে, মুসলমানদের আবার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। কারণ মুসলমানদের ওপর সরকারের এই নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগের ফলে নিঃসন্দেহে হিন্দুত্ববাদীদের মধ্যে উচ্ছ্বাসের ঝড় বইবে। তাদের ধারণা, অতীতের ‘দুর্বল’ সরকারগুলো, যারা মুসলমানদের ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করেছিল, তাদের এ বিল দিয়ে পর্যুদস্ত করা গেছে। এ ছাড়া বিজেপির গেরুয়া সেনাদের কাছেও এমন আনন্দের ইঙ্গিত পাঠায় যে, সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালন করা হচ্ছে কিনা, তা আর গুরুত্বপূর্ণ নয়।

প্রধানমন্ত্রী মোদির তীব্র সমালোচনা করে সাগরিকা বলেন, মোদি সরকার নাগরিকদের সার্বভৌমত্ব সম্মান করে না। ওয়াক্ফ বিল ব্যক্তির ধর্ম পালনের অধিকার এবং সংবিধানের ২৫-২৮ অনুচ্ছেদে নিশ্চিত করা নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার ধ্বংস করেছে। 

এদিকে ওয়াক্ফ বিল পাসের ধারাবাহিকতায় ভারতের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও সহিংসতা অব্যাহত আছে। পাঞ্জাবের জলন্ধরে গত সোমবার গভীর রাতে বিজেপি নেতা মনোরঞ্জন কালিয়ার বাড়িতে কে বা কারা গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। এর আগে গত ৬ এপ্রিল মণিপুর রাজ্যে ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল সমর্থন করার অভিযোগে বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার রাজ্য সভাপতি আসকার আলীর বাড়িতে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা। 

এমবি//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি