ঢাকা, শুক্রবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

মেঘলা আকাশ

হামিদুল আলম সখা

প্রকাশিত : ১৪:১৪, ১০ এপ্রিল ২০২৩ | আপডেট: ১৫:৫৩, ১০ এপ্রিল ২০২৩

Ekushey Television Ltd.

অপু আজ খুবই উদ্বিগ্ন। কেন এমন হয়? বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর সকল নাগরিক দেশের সমৃদ্ধির জন্য একসাথে কাজ করবে। কিন্তু দেখা গেলো তারা স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি তারা স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন চরিত্র বিরল। দেশে থাকবে, দেশের খাবে আর দেশের বিরোধীতা করবে? স্বাধীন দেশের প্রতি মমত্ববোধ নেই। এরা কে ? পাকিস্তানের প্রেতাত্মা? এ সবই ভাবছে। 

গতকাল বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা মেরে নিরিহ মানুষ হত্যা করেছে এ স্বাধীনতা বিরোধী চক্র। সবাই বলছে ওরা কি মানুষ? লেবাস পাকিস্তানী। মন ও মননে বাংলাদেশ বিরোধী। অপু সহ্য করতে পারে না।

টেবিলের উপর রাখা মোবাইল টা বেজে উঠলো।

--হ্যালো। কে?

---তুমি কি করছো? মিতু জিজ্ঞেস করে।

---কি আর করবো? ভাবছি প্রলয় চলে গেলো। একজন প্রতিভাবান শিল্পী। আমার বন্ধু। কতদিনের সম্পর্ক! ওর বউটার কি হবে? ওর ছোট্ট একটি বাচ্চা। প্রলয় তো মানুষের কথা ভাবতো। এমন মানুষ পাওয়া বিরল।

--মিতু শান্তনা দিয়ে বলে, ওদের পাশে দাঁড়াতে হবে। চলো প্রলয়ের বাসায় যাই।

---আমি আসছি।

---ওকে।

দুই।

অপু আকাশের দিকে তাকায়। মেঘগুলো অনেক দূরে। বৃষ্টির সম্ভাবনা তেমন নেই। অপু ভাবে--আগে সারা আকাশ জোড়া মেঘ করতো, কালো মেঘে ছেয়ে যেতো। মেঘের ডাক শুনা যেতো। ঈশান কোণে মেঘ জমেছে। আর বাইরে থাকা যাবে না।গ্রামে রাখাল গরুর পাল মাঠ থেকে নিয়ে বাড়িতে গরুর গোয়ালে যায়। শিশুরা খেলাধূলা ছেড়ে ঘরে ওঠে। আবার একদল দামাল কিশোর ফুটবল নিয়ে খেলার মাঠে যায়। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে গায়ে কাঁদা মেখে ফুটবল খেলবে। এ খেলার মজাটাই আলাদা।

অপু এসব ভাবতে ভাবতেই মেঘের ঘনঘটা শুরু হয়ে গেলো। শ্রাবন মাস। কোথায় শ্রাবনের ধারা? এক ঝাপটা বৃষ্টি এসেই থেমে গেলো। জসিম আসার কথা। ও এলেই দুজনে বেরিয়ে পড়বে। শিল্পকলায়  যেতে হবে। আজ নিশা আসবে। জসিম আর নিশা ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ। নিশার মাষ্টার্স শেষ হলেই বিয়ে করবে। নিশার ফ্যামিলি ওদের সম্পর্কের কথা জানে।কোন বড় ঝড় না আসলে ওদের বিয়ে হবেই। অপুর খুব ঈর্শা হয়। অপুর পছন্দ মিতুকে। কিন্তু মিতু অপুকে পচ্ছন্দ করলেও অপুর ফ্যামিলিকে পছন্দ করে না। অপুর ফ্যামিলি গ্রামে থাকে। মিতু ভাবে বিয়ের পর মিতুকে গ্রামে থাকতে হবে। এটা কোন ক্রমেই মিতুর পছন্দ নয়। অপু যতই বলে তোমাকে গ্রামে থাকতে হবে না। মিতু বিশ্বাস করতে চায় না। কি একটা ঝামেলায় আছে অপু।

অপুর মোবাইল বেজে উঠলো।

--কিরে আসবি না? 

--না। আমি বাংলা একাডেমি তে আছি। এখান থেকে চলে যাবো। তুই চলে আয়।

--দোস্ত, আমি মিতুকে আসতে বলেছি।

--সাব্বাস বাঘের বাচ্চা। এই না একটা পজেটিভ কাজ করেছিস। মিতুকে তুই নিয়ে আসবি?

--না। ও শিল্পকলায় চলে যাবে।

তিন।

মিতু শিল্পকলার দোতলায় বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে অনেকক্ষণ। অপেক্ষা করা মানে হলো জেল খাটা। অস্থির হয়ে যাচ্ছে মিতু। হঠাৎ মিতু দেখলো অপু রিক্সা থেকে নামছে। ভাড়া মিটিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ঊর্ধ্ব শ্বাসে উঠলো। মিতু রেলিং ধরে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। অপু বুঝতে পেরেছে তিনি রাগ করেছেন। এ রকম অবস্থায় অপু হরহামেশায় পড়ে। পকেট থেকে  চকলেট বের করে মিতুর চোখের সামনে ধরলো।

--কোন কাজ হবে না আজ। অভিমানে চোখমুখ লাল হয়ে গেছে। ফর্সা মুখটা রক্তিমাভ।

--কেন দেরি হলো জিজ্ঞেস কর?

--কেন? 

---আরে বাবা সরকার বিরোধী মিছিলের পিছনে পড়েছিলাম।

---শুধু মিথ্যা কথা।

---বিশ্বাস করো। আজ সত্যি বলছি।

--তার মানে মাঝে মাঝেই মিথ্যা বল।

অপু কথা না বাড়িয়ে বলতে থাকলো, ও দুইটা কোথায়? শালা জসিমের বাচ্চা।

জানো আমাদের দেশের মানুষের কোন ধৈর্য্য শক্তি নেই। সারা বিশ্ব অস্থির। রাশিয়া ও ইউক্রেন এর যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। বিশেষ করে তেল, গ্যাস, লোহা, সিমেন্ট ইত্যাদি লাগামহীন হচ্ছে। সরকার এই বৈশ্বিক অবস্থা মোকাবিলা করবে না জনগণকে বুঝাবে?

মিতু অপুকে থামিয়ে দিয়ে বলে, রাখো তোমার লেকচার। সুযোগ পেলেই----।
এরমধ্যে জসিম আর নিশা এসে হাজির।

চার।

অপু আর জসিম হলে ফেরৎ এলো বন্ধবীদের জন্য যে খাবারগুলো এনেছিল সেগুলো অপু ওদের হাতে দিল। নিশা মিতু খাবারগুলো পেয়ে এমন উল্লাসিত হলো যে, কতদিন ওরা খাবার খায়নি। গোগ্রাসে দুজন খেতে থাকলো। নিশা বললো আমার তো পুরি খুব প্রিয়। ভাই যত যাই বলো আমার প্রিয় পিঁয়াজি। মিতুকে কটাক্ষ করে নিশা বললো আরে বাবা ওরা আজকাল পিঁয়াজের বদলে মূলা দেয়। কি যে বিচ্ছিরি লাগে! মিতু বললো একটা পিঁয়াজু খেয়েই দেখো না। দোকানদার পিঁয়াজের বদলে মূলা দেয়নি। নিশা বলে,ঠিক বলছো তো? হ্যাঁ বাবা হ্যাঁ। মিতুর জবানে দৃঢ়তা।

অপু আলো আঁধারিতে ওদের দিকে তাকিয়ে বলে, তোমরা কি সিনেমা দেখবা না পিঁয়াজু ডিবেটে মত্ত থাকবা। আশে পাশের দর্শকরা কিন্তু বিরক্ত হচ্ছে।

মিতু বলে, আচ্ছা বাবা,আচ্ছা।এই মুখে কুলুপ দিলাম আমরা।

জসিম বলে, কতক্ষণ!

পাঁচ।

জসিম, অপু, মিতু ও নিশা শিল্পকলা থেকে বের হয়ে সিদ্ধান্ত নিলো আজই প্রলয়ের বাসায় যাবে। প্রলয়ের বাসা সেগুনবাগিচায়। ওয়াকিং ডিসটেন্স। জসিম একটা কনফেকশনারিতে ঢুকে প্রলয়ের মেয়ের জন্য চকলেট ও আইসক্রিম  কিনলো। ওরা হেঁটে হেঁটে পাঁচ সাত মিনিটের মধ্যে প্রলয়ের আবাসস্থলে চলে আসলো। নয় তলা বিল্ডিং এর টপ ফ্লোরে ফ্ল্যাট নিয়েছে। প্রলয় সবসময় বলতো আকাশের কাছাকাছি যত যাওয়া যায়। খোলা নীল আকাশ দেখবো,বুক ভরে নিঃশ্বাস নেবো। আর চিৎকার করে মনের সুখে ভাওয়াইয়া গাইবো। প্রলয় সারা জীবন এমনটাই করেছে। একবার সব বন্ধুদের দাওয়াত করেছে। সারারাত গল্প হবে, আড্ডা হবে,গান হবে আর ভুনা খিচুড়ি হবে। সেবার বেশ হয়েছিল। জসিম কথাগুলো মনে করিয়ে দিতেই অপুর চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। ওরা লিফট থেকে নেমে প্রলয়ের ফ্ল্যাটে বেল চাপলো অপু।

শান্তা দরজা খুললো। ওদের চার জনকে দেখে অবাক। ওরা ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করার পর আবহাওয়া চেঞ্জ হয়ে গেলো। ওদের ছোট্ট মেয়ে চৈতি দৌড়ে এসে অপুর কোলে উঠে বসলো।

জানো কাকু , বাবা আর আসবে না। ঐ আকাশের তারা হয়ে গেছে। ছোট্ট মেয়ে চৈতির কথা শুনে সবার চোখে জল এসে গেলো। আবহাওয়া পরিবর্তন করার জন্য জসিম বললো, মা তোমার জন্য চকলেট আর আইসক্রিম নিয়ে এসেছি। ছোট মানুষ চকলেট আইসক্রিম পেয়ে দৌড় দিল ভিতরে।

একটা শূন্যতা বিরাজ করছে পুরো বাসায়। একটা ঘাতক গোষ্ঠীর কারণে আজ প্রলয় নেই। নেই কোন অনুষ্ঠানে, নেই বন্ধুদের সাথে, নেই ওর স্ত্রী কন্যার সাথে। নেই সমাজের শুদ্ধি অভিযানে।

বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি। বৃষ্টি আসলেই প্রলয় মন্ত্রমুগ্ধের মতো বাইরে তাকিয়ে থাকত। আজকের মেঘলা আকাশ অন্য রকম।একটা ক্লান্তি সবার দহময়। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি প্রলয়ের স্ত্রী শান্তা ও কন্যা চৈতি।

"বাহিরে ঝড় বহে, নয়নে বারি ঝরে।"

এসবি/ 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি