ঢাকা, বুধবার   ০১ মে ২০২৪

যেভাবে এলো ঘূর্ণীঝড় ফণী

প্রকাশিত : ১৫:২৬, ৪ মে ২০১৯ | আপডেট: ১৫:৩০, ৪ মে ২০১৯

‘ফণী’ শব্দটি এখন সবার মুখেমুখে, আলোচনার শীর্ষে। পৃথীবিতে যেসকল ঘূর্ণীঝড় ও জ¦লচ্ছাস হয়ে থাকে প্রাথমিকদিকে এগুলোকে বিভিন্ন নম্বর দিয়ে চিহ্নিত করা হতো। কিন্তু সেসব নম্বর সাধারণ মানুষের কাছে অনেকটা দুর্বোধ্য মনে হতো। ফলে সেগুলোর পূর্বাভাস দেয়া, মানুষ বা নৌযানগুলোকে সতর্ক করাও কঠিন হতো। পরবর্তীতে, প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের কাছে খুব সহজে পরিচিত ও কল্যাণের জন্য বিভিন্ন নামে নামকরণ করা হয়।


‘ফণী’ শব্দটি এসেছে মূলত ইংরেজী শব্দ Fani থেকে। উচ্চারণ কিছুটা আলাদা হলেও এটিকে বাংলায় ‘ফণী’ হিসেবে ডাকা হয়। এর অর্থ সাপ বা ফণা তুলতে পারে এমন প্রাণি। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আঞ্চলিক কমিটি মূলত ঝড়গুলোর নাম দিয়ে থাকে। যেমন ভারত মহাসাগরের ঝড়গুলোর নামকরণ করে এই সংস্থার আটটি দেশ, তথা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, মায়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড এবং ওমান, যাদের প্যানেলকে বলা হয় WMO/ESCAP।


আজ থেকে ১৫ বছর আগে ২০০৪ সালে আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঝড়ের নামের মধ্য দিয়ে এর নামের রেওয়াজ শুরু হয়। যার নাম ছিল ‘অনিল’। পরবর্তীতে এই নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করা হয়। এই তালিকাতে রয়েছে বিশ্বের আটটি দেশ। দেশগুলো ক্রমানুসারে আটটি করে নাম দিয়ে থাকে। যখন যে দেশের নম্বর আসে তখন সেই দেশ তালিকা অনুসারে ঝড়ের নামকরণ করে থাকে। এখন যে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ নিয়ে এত আলোচলা, এর নাম দিয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে সর্বশেষ বাংলাদেশে যে ‘মহসেন’ নামে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল, তার নাম দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা।


২০০৪ সালে আটটি দেশ মিলে মোট ৬৪টি নাম প্রস্তাব করে। সেসব ঝড়ের নামের মধ্যে এখন ‘ফণী’ ঝড়কে বাদ দিলে আর সাতটি নাম বাকী রয়েছে। এর আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বা অস্ট্রেলিয়া অঞ্চলে ঝড়ের নামকরণ করা হতো।
ভারত মহাসাগরে ঘূর্ণিঝড়কে সাইক্লোন বলা হলেও আটলান্টিক মহাসাগরীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় হারিকেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বলা হয় টাইফুন।


বর্তমানে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ‘ফণী’র নাম দিয়েছিল বাংলাদেশ। পরের ঝড়ের নাম হবে ভারতের প্রস্তাব অনুযায়ী ভায়ু। তারপরে আরো ছয়টি ঝড়ের জন্য এখনো নাম তালিকায় রয়েছে। সেগুলো হলো- হিক্কা, কায়ার, মাহা, বুলবুল, পাউয়ান এবং আম্ফান। এই নামগুলো শেষ হয়ে যাওয়ার পর তারা আবার বৈঠকে বসে নতুন করে নামকরণ করবে। নিয়ামানুযায়ী বাংলাদেশ আরো সাতটি ঝড়ের পর আবার চারটি ঝড়ের নাম দেবে।এর আগে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা নামগুলো ছিল- হেলেন, চাপালা ও অক্ষি। তবে, বাংলাদেশের দেয়া ঝড়গুলোর নামের ক্ষেত্রে পুরুষদের নামের তুলনায় মেয়েদের নামের প্রাধান্য দেখা গেছে।


ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ প্রসঙ্গে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার বৈঠকে বাংলাদেশের এক বা একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অংশ নিয়ে থাকেন। আগে থেকে তারা আলোচনা করে নেন যে, কী নাম হবে।’

ঝড়ের নাম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখা হয়, যাতে সেটি ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক বা সামাজিকভাবে কোনোরকম বিতর্ক বা ক্ষোভ তৈরি না করে। উদাহরণ স্বরুপ তিনি গেল ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার দেয়া ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’র নাম টেনে বলেন, সেখানকার সাবেক একজন রাজার নাম ছিল ‘মহাসেন’, যিনি ওই দ্বীপে সমৃদ্ধি নিয়ে এসেছিলেন। ফলে এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। এমনকি শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যমে সেটিকে ‘নামহীন ঝড়’ বলে বর্ণনা করা হয়। পরবর্তীতে রেকর্ডপত্রে ঝড়টির নতুন নাম নির্ধারণ করা হয় ‘ভিয়ারু’।

আই/টিআর

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি