রাখাইনে আর্তনাদ: পুড়ছে বাড়িঘর
প্রকাশিত : ২২:৩৮, ২৯ আগস্ট ২০১৭ | আপডেট: ১২:১৫, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন প্রদেশে সেনা অভিযানের মধ্যে অন্তত ১০টি এলাকায় বাড়িঘর পোড়ার চিহ্ন মিলেছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিও)।
ইতোমধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানের মুখে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকতে সীমান্তে ঠাঁই নিয়েছে; এলাকা ছাড়ছে রাখাইনরাও। সহিংসতার মধ্যে গুলির জখম ও আগুনের ক্ষত নিয়ে অনেকে বাংলাদেশে এসে হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ উপগ্রহ চিত্র দেখে রাখাইন প্রদেশে পোড়ার ঘরের চিহ্ন দেখার কথা জানাল।
মানবাধিকার সংগঠনটি বলছে, গত ২৫ অগাস্ট দুপুরে জে দি পেইন ও কোয়ে তান কুক এলাকায় আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। ২৮ অগাস্ট মংডু শহর এবং মংডুর বিভিন্ন গ্রামে আরও আটটি এলাকায়ও আগুন জ্বলতে দেখা যায়।
উপগ্রহ চিত্রে পাওয়া ঘটনাস্থল এবং গণমাধ্যমে আসা প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনার মিল পেয়েছে এইচআরডাব্লিও। রাখাইন প্রদেশে সেনা অভিযানের পক্ষে পুলিশ ও সেনা চৌকিতে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির হামলা মোকাবেলাকে যুক্তি দেখাচ্ছে মিয়ানমার সরকার। তবে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা নির্বিচারে নির্যাতনের অভিযোগ তুলছেন।
এইচআরডাব্লিওর এশিয়া বিষয়ক উপ-পরিচালক ফিল রবার্টসন বলেন, বিদ্রোহীদের উপর সব দায় চাপিয়ে মিয়ানমার সরকার নির্যাতনের পথ থেকে সরে আসতে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত এড়াতে পারে না। মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তদন্তে দেশটির সরকারকে চাপ দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান রেখেছে এইচআরডাব্লিও।
দমন-পীড়নের মুখে থাকা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ আশ্রয় না দিলে তা তাদের আরও ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেবে বলে মনে করছে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
কয়েক দশক ধরে ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের ভার বহন করে আসা বাংলাদেশ সরকার নতুন করে শরণার্থী না নেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
তবে এর মধ্যেও মানবিক কারণে গত বছরের সহিংসতার সময় অর্ধ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হয়। এবারও সীমান্তে কড়াকড়ির মধ্যেই বেশ কিছু সংখ্যক রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করেছেন।
ইউএনএইচসিআর মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত ২৫ অগাস্ট সহিংসতা শুরুর পর তিন দিনেই ৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সীমান্তে এই শরণার্থী সমস্যা মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করতে প্রস্তুত থাকার কথাও জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর।
দমন-পীড়নের মুখে পালাতে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে পাঁচ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা গত তিন দিনেই বাংলাদেশে ঢুকেছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর।
মিয়ানমারে বেসামরিক মানুষের প্রাণহানিতে উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্রও।
গত ২৪ অগাস্ট রাতে রাখাইনে একসঙ্গে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর ওই রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।
ফিল রবার্টসন বলেছেন, নতুন উপগ্রহ চিত্র খুবই উদ্বেগের এবং রাখাইন প্রদেশে যা হচ্ছে, তা থামাতে জাতিসংঘ ও দাতা সংস্থাগুলোর ভূমিকা নেওয়ার দাবি যৌক্তিক।
আরকে/টিকে
আরও পড়ুন